শনিবার, ৩১ আগস্ট, ২০১৯ ০০:০০ টা

চোরাকারবারে জড়িত ৬৬ গার্মেন্ট

শুল্কমুক্ত বন্ড সুবিধার পণ্য কালোবাজারে ♦ কাস্টমসের পদক্ষেপ চায় বিজিএমইএ

নিজস্ব প্রতিবেদক

চোরাকারবারে জড়িত ৬৬ গার্মেন্ট

শুল্কমুক্ত বন্ড সুবিধায় আমদানি করা পণ্য কালোবাজারে বিক্রির মাধ্যমে চোরাকারবারে জড়িত দেশের ৬৬ পোশাকশিল্প কারখানা। এ অপরাধে এসব গার্মেন্ট বা পোশাক কারখানার বিরুদ্ধে কঠোর অ্যাকশন নিতে যাচ্ছে মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুত ও রপ্তানিকারক সমিতি (বিজিএমইএ)। সংগঠনটি বলেছে, নিয়ন্ত্রক সংস্থা হিসেবে কাস্টমসের আইনগত পদক্ষেপ ও কঠোর অ্যাকশন দেখতে চায় তারা। জানা গেছে, শুল্কমুক্ত পণ্য চোরাচালানে বিক্রির সঙ্গে জড়িত ৬৬ পোশাক কারখানাকে চিহ্নিত করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। এর প্রায় সব প্রতিষ্ঠানই কালোবাজারে পণ্য বিক্রির সময় হাতেনাতে ধরা পড়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানকে আর্থিক জরিমানা ছাড়াও কারও কারও আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম স্থগিত করেছে কাস্টমস বন্ড কমিশনারেট। অতিসম্প্রতি চোরাকারবারে জড়িত এই ৬৬ পোশাক কারখানার তালিকা বিজিএমইএর কাছে পাঠিয়েছে এনবিআর। সংস্থাটি শুল্কমুক্ত সুবিধার আমদানিপণ্য চোরাকারবারের সঙ্গে জড়িত পোশাক কারখানাগুলোর সদস্যপদ বাতিলের অনুরোধ করেছে।

এ প্রসঙ্গে বিজিএমইএর সহসভাপতি মো. মশিউল আজাম সজল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘যে কোনো মূল্যে বন্ডের অপব্যবহার বন্ধ করতে হবে। বিজিএমইএ অ্যাকশন নিতে পিছপা হবে না। কিন্তু কাস্টমসকে সুনির্দিষ্টভাবে বলতে হবে। নিয়ন্ত্রক সংস্থা হিসেবে কাস্টমসও আইনগত পদক্ষেপ নেবে এটাই দেখতে চায় বিজিএমইএ। আমরা কোনো সংগঠনের সদস্যপদ বাতিল করব না।’

জানা গেছে, এনবিআরের তালিকায় অভিযুক্ত এমন ১০টি প্রতিষ্ঠান আছে, যাদের একাধিকবার কালোবাজারে পণ্য বিক্রির সময় হাতেনাতে ধরা হয়েছে। বিজিএমইএকে পাঠানো তালিকার বাইরেও বন্ড অনিয়মের সঙ্গে জড়িতদের আরেকটি তালিকা তৈরি করা হচ্ছে। ইস্যুটি নিয়ে অর্থমন্ত্রীও সরব। বন্ডেড সুবিধায় মালামাল এনে তা কালোবাজারে বিক্রি করে দেওয়ায় এবং স্থানীয় বস্ত্রশিল্পের প্রতিষ্ঠান ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় এ নিয়ে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে অর্থমন্ত্রী এনবিআর ও কাস্টমস বন্ড কমিশনারেটকেও নির্দেশ দিয়েছেন। শুধু তাই নয়, এ সুবিধা রাখা না রাখা নিয়েও নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে আলোচনা চলছে।

কাস্টমস বন্ড কমিশনার এস এম হুমায়ুন কবীর বলেন, যে প্রতিষ্ঠানগুলোর তালিকা পাঠানো হয়েছে, তাদের হাতেনাতে ধরা হয়েছে। বিভিন্ন সময় রাতে অভিযান চালিয়ে ঢাকা, চট্টগ্রাম, নারায়ণগঞ্জসহ কয়েকটি এলাকা থেকে খোলাবাজারে বিক্রির সময় ধরা হয়েছে। এর মধ্যে বেশির ভাগ প্রতিষ্ঠানই তাদের অপরাধ স্বীকার করে জরিমানার অর্থ পরিশোধ করেছে। জানা গেছে, শতভাগ রপ্তানিকারকদের শুল্কমুক্ত সুবিধায় কাঁচামাল আমদানির সুযোগ দিয়েছে সরকার। তবে শর্ত হলো, এ সুবিধায় আমদানি করা কাঁচামাল এনবিআর নির্ধারিত গুদামে রেখে তা দিয়ে তৈরি পণ্য বিদেশে রপ্তানি করতে হবে। এটি বন্ডেড ওয়্যারহাউস সুবিধা নামে পরিচিত। বন্ডেড সুবিধার কোনো পণ্য বাইরে বিক্রি করতে হলে সরকারের প্রযোজ্য শুল্ক-কর পরিশোধ করতে হবে। কিন্তু সরকারের দেওয়া এ সুবিধার অপব্যবহার করছে একশ্রেণির ব্যবসায়ী নামের চোরকারবারি।

জানা গেছে, বন্ডেড সুবিধায় আনা পোশাকশিল্পের কাঁচামালের শুল্ক-করের পরিমাণ প্রকারভেদে ৬০ থেকে ১১০ শতাংশ কিংবা এর চেয়েও বেশি হারে পরিশোধ করতে হয়। এনবিআর সূত্র জানায়, চোরাকারবারে জড়িত ৬৬ পোশাক কারখানার শুল্ক-কর ফাঁকির তথ্যও এনবিআর প্রেরণ করেছে বিজিএমইএর কাছে। এতে কাস্টমস বন্ড কমিশনারেট অফিস ১৬টি প্রতিষ্ঠানের জালিয়াতি ধরেছে, যার মাধ্যমে ৩৫ কোটি ৩১ লাখ টাকার রাজস্ব ফাঁকি দেওয়া হয়েছে। কাস্টমস গোয়েন্দা বিভাগ ১২টি প্রতিষ্ঠানের অনিয়ম উদ্্ঘাটন করে ২৭৫ কোটি টাকা আদায় করেছে। চট্টগ্রাম কাস্টম হাউস একটি প্রতিষ্ঠানের অনিয়ম উদ্্ঘাটন করে আদায় করেছে, যাতে রাজস্বের পরিমাণ ১৩ কোটি টাকার বেশি। এর মধ্যে বেশির ভাগ প্রতিষ্ঠান দায় স্বীকার করেছে। চট্টগ্রাম বন্ড কমিশনারেট ১৭টি প্রতিষ্ঠানকে চিহ্নিত করেছে, যাতে রাজস্বের পরিমাণ ৪৪ কোটি টাকা। এ ছাড়া ঢাকা কাস্টম হাউস ৩টি ও বেনাপোল কাস্টম হাউস ৮টি প্রতিষ্ঠানের জালিয়াতি চিহ্নিত করেছে।

অভিযুক্ত ৬৬ গার্মেন্ট : এনবিআরের তালিকা অনুযায়ী অভিযুক্ত গার্মেন্টের মধ্যে রয়েছে ঢাকার নিপা নিটওয়্যারস, সাভারের রেজা ফ্যাশনস, গাজীপুরের ট্রাউজার ওয়ার্ল্ড, মোহাম্মদপুরের সেলিব্রেটি এক্সপোর্ট গার্মেন্টস, বটম গ্যালারি, সিনটেক্স টেক্সটাইল এস অ্যাপারেলস, গাজীপুরের কাশিমপুরের ইউটা নিটিং অ্যান্ড ডায়িং, মিরপুরের কার্ডিয়াল ডিজাইন, আল ইসলাম টেক্স, করতোয়া অ্যাপারেলস, কায়সার সানকো জেবিটেক্স, টিএনজেড অ্যাপারেলস, এপেক্স ল্যানজারিং, জেনেসিস ফ্যাশনস, ল্যাভেন্ডার গার্মেন্টস, তুরাগের মাসটেক্স ইন্ডাস্ট্রিজ, রামপুরার আশিয়ানা গার্মেন্টস, টঙ্গীর কেপরি অ্যাপারেলস, খিলক্ষেতের নাফ ফ্যাশনস, নারায়ণগঞ্জের মিশুয়ার হোসিয়ারি, চট্টগ্রামের অ্যাপারেল অপশন, ফ্যাশন ক্রিয়েট, ডিকে অ্যাপারেল, ক্যাসিওপিয়া সোয়েটারস, আইম্যান টেক্সটাইল, জেএবি লিমিটেড, গাজীপুরের এম এইচ অ্যাপারেলস, এ আর এইচ নিট কম্পোজিট, ক্রস লাইন নিট ফেব্রিকস, নিট বাজার, লেলফ ইনোভেটিভ, স্পারো অ্যাপারেল, আশুলিয়ার ডিজাইনার ফ্যাশনস, চট্টগ্রামের গার্মেন্টস হোম, সুফী অ্যাপারেল এবং ময়মনসিংহের ভালুকার সুপ্তি সোয়েটার। এ ছাড়া চট্টগ্রামের টিকেএম গার্মেন্টস, আদিল অ্যাপারেলস, ফোকাস অ্যাপারেলস, মনটেক্স অ্যাপারেলস, আজমাইন ফ্যাশনস, প্রিটি অ্যাপারেলস, সার্ক গার্মেন্টস, ফ্যাশন ক্রিয়েট অ্যাপারেলস, এক্সিয়ম ফ্যাশন, ওশেন অ্যাপারেলস, টিম অ্যাপারেলস, এ অ্যান্ড বি আউটওয়্যার, কর্ণফুলী ইপিজেডের হংকং ডেনিম, ভেনকট লিমিটেড, বেসটেক লিমিটেড, বিডি ডিজাইন, মেরিনা অ্যাপারেলস, টিঅ্যান্ডজেড অ্যাপারেলস, ওসিস ফ্যাশনস, নরসিংদীর চরকা টেক্সটাইল, গাজীপুরের স্মাগ সোয়েটার, সাভারের ফেব্রিকা নিট কম্পোজিট, গাজীপুরের ইয়োর ফ্যাশন সোয়েটার, টাঙ্গাইলের ইমপ্রেস নিউটেক্স কম্পোজিট, নারায়ণগঞ্জের ফকির অ্যাপারেলস, গাজীপুরের এসকিউ সেলসিয়াস।

সর্বশেষ খবর