সোমবার, ২ সেপ্টেম্বর, ২০১৯ ০০:০০ টা

এগিয়ে চলছে কর্ণফুলী টানেল

২০২২ সালে বিশ্ব দেখবে ওয়ান সিটি টু টাউন

রেজা মুজাম্মেল, চট্টগ্রাম

এগিয়ে চলছে কর্ণফুলী টানেল

কাজ চলছে কর্ণফুলী টানেলের -বাংলাদেশ প্রতিদিন

দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে বড় পাতাল পথ বঙ্গবন্ধু টানেলের (কর্ণফুলী টানেল) মোট দৈর্ঘ্য ৩ হাজার ৪০০ মিটার বা ৩ দশমিক ৪ কিলোমিটার। ইতিমধ্যে টানেলের ৩৬০ মিটার অংশের খনন কাজ শেষ। এর মধ্যে টিউবের দৈর্ঘ্য ২ হাজার ৪৫০ মিটার। নদীর তলদেশে ৯৪ মিটার দীর্ঘ ও ২২ হাজার টন ওজনের টানেল বোরিং মেশিন (টিবিএম) দিয়ে চলছে খননের মূল কাজ। প্রতি আটটি সেগমেন্টে তৈরি হচ্ছে দুই মিটারের একটি রিং। ৩৬০ মিটার অংশে বসানো হয়েছে ১৮০টি রিং। প্রতিদিন গড়ে ৪ থেকে ৫ মিটার করে টানেল নির্মাণ কাজ এগিয়ে যাচ্ছে।

এভাবে দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলছে দেশের প্রথম ‘বঙ্গবন্ধু টানেলে’র নির্মাণ কাজ। বর্তমানে সামগ্রিক কাজের অগ্রগতি ৪৫ শতাংশ। গত ছয় মাসেই এগিয়েছে ১৪ শতাংশ। ‘ডুয়েল টু লেন’ টাইপের ‘শিল্ড ড্রাইভেন মেথড’ পদ্ধতিতে নির্মাণাধীন টানেলটির কাজ নির্ধারিত মেয়াদ ২০২২ সালেই শেষ হবে। এর মাধ্যমে ২০২২ সালে বিশ্ববাসী দেখবে চীনের সাংহাইয়ের আদলে ‘ওয়ান সিটি টু টাউন’। দেশের প্রথম এই সুড়ঙ্গ পথ কর্ণফুলী নদীর দুই পাশের দুই টাউনকে সংযুক্ত করবে। যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ (বিবিএ) প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে। ২০১৬ সালের ১৪ অক্টোবর টানেল নির্মাণ কাজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও চীনের রাষ্ট্রপতি শি জিনপিং। গত ২৪ ফেব্রুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মূল খনন কাজ উদ্বোধন করেন। প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয় ৮ হাজার ৪৪৭ কোটি টাকা। এর মধ্যে চীন অর্থায়ন করছে প্রায় চার হাজার ৮০০ কোটি টাকা। বঙ্গবন্ধু টানেল প্রকল্পের পরিচালক প্রকৌশলী হারুনুর রশিদ চৌধুরী বলেন, ‘দ্রুতগতিতে দিনরাত এগিয়ে যাচ্ছে টানেল নির্মাণ কাজ। আশা করছি, নির্ধারিত ২০২২ সালের ডিসেম্বরেই কাজ শেষ হবে। নির্মাণ শেষে কর্ণফুলীর তলদেশ দিয়ে শুরু হবে যান চলাচল। বিশ্ব দেখবে সাংহাইয়ের আদলে ‘ওয়ান সিটি টু টাউন’ মডেলের বন্দরনগরী।’ তিনি বলেন, ‘এখন টিবিএম মেশিনটি টিউব তৈরি করে পতেঙ্গা থেকে আনোয়ারার দিকে যাচ্ছে। যা দুই লেনের একটি টিউব সড়ক হবে। সেটি শেষ হলে টিবিএম আনোয়ারা প্রান্ত থেকে নদীর তলদেশে ঢুকে আরেকটি দুই লেনের সড়ক খনন করে পতেঙ্গা অংশে বের হবে। দুটি টিউবে চার লেন সড়ক পথ হবে।’ প্রকল্প সূত্রে জানা যায়, সাগর মোহনায় কর্ণফুলী নদীর তলদেশে টিবিএম দিয়ে চলছে খননের মূল কাজ। কর্ণফুলীর পতেঙ্গা পয়েন্ট থেকে মাটি কেটে কেটে আনোয়ারার দিকে এগোচ্ছে। এ পর্যন্ত টানেলের ৩৬০ মিটার অংশে ১৮০টি রিং বসানো হয়েছে। আটটি আরসিসি পাটাতন যুক্ত হয়ে প্রতি দুই মিটারের একটি রিং তৈরি হচ্ছে। টানেলে স্থায়ী বিদ্যুৎ সরবরাহের জন্য দুই প্রান্তে স্থাপন করা হয়েছে ৩৩ কেভির দুটি বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইন। ইতিমধ্যে অধিগ্রহণ করা হয়েছে প্রায় ৩৮১ একর জমি। সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, নগরীর পতেঙ্গার আউটার রিং রোডের শেষ প্রান্তে নদী পাড়ের বিশাল এলাকা জুড়ে চলছে টানেল নির্মাণের মহাযজ্ঞ। পতেঙ্গায় নির্মিত হয়েছে বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষের দুটি প্রকল্প অফিস। প্রকল্প এলাকায় রয়েছে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা। আনোয়ারা অংশে ডিএপি সার কারখানা ও কাফকোর মাঝামাঝি মাঝের চর এলাকায় সাইট অফিস, আবাসস্থল ও যন্ত্রপাতি রাখার স্থাপনা করা হয়েছে। জানা যায়, নদীর মধ্যভাগে পানির উপরের স্তর থেকে প্রায় ১৫০ ফুট গভীরে টানেলের টিউব স্থাপন করা হবে। নদীর তলদেশ থেকেও প্রায় ৫০-৬০ ফুট নিচে টানেলটি হবে। দুই টিউবে পৃথক টানেল নির্মিত হবে। প্রতি টিউবে দুই লেন করে চার লেনে গাড়ি চলাচল করবে। জরুরি মুহূর্তে এক টিউব থেকে অন্য টিউবে যাতায়াত করতে দুই টিউবের সঙ্গে পৃথক তিন স্থানে সংযোগ সড়ক থাকবে। বিবিএ সূত্রে জানা যায়, টানেলের পতেঙ্গা প্রান্তে ওপেন কাট ১৯০ মিটার, কাট অ্যান্ড কভারের ২৩০ মিটার, অ্যাপ্রোচ রোড ৪ হাজার ৭৯৮ দশমিক ৯৫ মিটার এবং ওয়ার্কিং শ্যাফট ২৫ মিটার নির্মাণ করা হবে। অন্যদিকে টানেলের কর্ণফুলীর পশ্চিম ও পূর্ব প্রান্তে ৫ দশমিক ৩৫ কিলোমিটার অ্যাপ্রোচ সড়ক এবং ৭২৭ মিটার ওভারব্রিজ তৈরি করা হবে। ৩ দশমিক ৪ কিলোমিটার টানেল নির্মাণ ছাড়াও টানেলের আনোয়ারা প্রান্তে ওপেন কাট ২০০ মিটার, কাট অ্যান্ড কভারের ১৯৫ মিটার, অ্যাপ্রোচ রোড ৫৫০ মিটার এবং ২৫ মিটার ওয়ার্কিং শ্যাফট নির্মাণ করা হবে।

সর্বশেষ খবর