সোমবার, ২ সেপ্টেম্বর, ২০১৯ ০০:০০ টা
ফারুক হত্যার প্রধান আসামি নুর বন্দুকযুদ্ধে নিহত

রোহিঙ্গা ডাকাতের বাংলাদেশি স্মার্টকার্ড, একাধিক বাড়ি

প্রতিদিন ডেস্ক

রোহিঙ্গা ডাকাতের বাংলাদেশি স্মার্টকার্ড, একাধিক বাড়ি

যুবলীগ নেতা ওমর ফারুক হত্যাসহ বহু মামলার মোস্ট ওয়ান্টেড আসামি, চিহ্নিত রোহিঙ্গা সন্ত্রাসী-ডাকাত ও ইয়াবা গডফাদার নুর মোহাম্মদ পুলিশের সঙ্গে কথিত বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়েছে। গতকাল ভোররাতে এ ঘটনা ঘটে। জানা গেছে, এই রোহিঙ্গা ডাকাতের রয়েছে বাংলাদেশি স্মার্টকার্ড। সে বাংলাদেশে জায়গাজমিও কিনেছে।

কক্সবাজার প্রতিনিধি জানান, টেকনাফের জাদিমুরা পাহাড়ি এলাকায় বন্দুকযুদ্ধে নুর মোহাম্মদ নিহত হয়। পুলিশ জানায়, যুবলীগ নেতা ফারুক হত্যা মামলার প্রধান আসামি হিসেবে  গ্রেফতারের পর অস্ত্র উদ্ধারে গেলে তার সঙ্গীদের সঙ্গে গোলাগুলির ঘটনায় নুর মোহাম্মদ নিহত হয়। ঘটনাস্থল থেকে চারটি এলজি, একটি থ্রি-কোয়াটার, ১৮ রাউন্ড গুলি, ২০ রাউন্ড খালি খোসা উদ্ধার করা হয়েছে। জানা গেছে, নুর মোহাম্মদ মিয়ানমারের আকিয়াব এলাকার কালা মিয়ার ছেলে। সে কক্সবাজারের টেকনাফের শালবাগান রোহিঙ্গা ক্যাম্পে বসবাস করছিল। বাংলাদেশে তার চারটি বাড়ি রয়েছে। সম্প্রতি তার মেয়ের কান ফোঁড়ানোর অনুষ্ঠানে এক কেজির বেশি  সোনা ও নগদ কয়েক লাখ টাকা উপহারসামগ্রী হিসেবে জমা পড়ে। নুরের ৪টি বাড়ি, একাধিক স্ত্রী : টেকনাফের হ্নীলা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান রাশেদ মাহমুদ আলী বলেন, ১৯৯২ সালে মিয়ানমারের আকিয়াব এলাকা থেকে বাংলাদেশে ঢুকে রোহিঙ্গা নুর মোহাম্মদ হ্নীলা ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ডের জাদিমুরা এলাকায় বাসা ভাড়া নিয়ে বসবাস শুরু করে। পরে জমি কিনে বাড়ির মালিক হয়। গড়ে তোলে ক্যাডার বাহিনী। ক্যাম্পে আধিপত্য বিস্তারে টেকনাফের প্রতিটি ক্যাম্পে বিয়ে ও ঘর করে নুর মোহাম্মদ। প্রতিটি ক্যাম্পের নিয়ন্ত্রণ ও অপরাধ কর্মকা- তার ইশারায় হতো। নুর মোহাম্মদের মালিকানায় একটি দোতলা, একটি পাকা ভবন, একটি টিনের ঘর এবং একটি বাগানবাড়িসহ চারটি বাড়ি রয়েছে। নুর মোহাম্মদের রয়েছে একাধিক স্ত্রী। দীর্ঘদিন বাংলাদেশে বসবাস করে কোটিপতি বনে গেছে রোহিঙ্গা নুর মোহাম্মদ। কন্যার কান ফোঁড়ানোর রাজকীয় উৎসব ঘিরে গত এক সপ্তাহ ধরে আলোচনায় ছিল নুর মোহাম্মদ। পাশাপাশি টেকনাফের ওয়ার্ড যুবলীগ সভাপতি ওমর ফারুক হত্যা মামলায় তার সম্পৃক্ততার কথা উঠে আসায় তীব্র সমালোচনার মুখে পড়ে নুর মোহাম্মদ। পুলিশ জানিয়েছে, বন্দুকযুদ্ধে নিহত হওয়ার পর নুরের মরদেহের সঙ্গে পাওয়া গেছে ‘বাংলাদেশি স্মার্টকার্ড’। চট্টগ্রামের ষোলশহর এলাকার বাসিন্দা হিসেবে নুর আলম নামে সে বাংলাদেশের ভোটার হয়েছে এবং যথারীতি স্মার্টকার্ডও সংগ্রহ করেছে। নুর মোহাম্মদের বাংলাদেশি স্মার্টকার্ডটি ২০১৭ সালের ২৩ জানুয়ারি চট্টগ্রামের সিটি করপোরেশনের ঠিকানায় ইস্যু করা হয়। কার্ডে তার নাম নুর আলম। বাবা কালা মিয়া এবং মা সরু বেগম। জন্মতারিখ ২৫ নভেম্বর ১৯৮৩। জন্মস্থান চট্টগ্রাম। এনআইডি নম্বর-৬০০৪৫৮৯৯৬৩। স্থায়ী ঠিকানায় লেখা আছে, বাসা/হোল্ডিং- মাস্টারের মার বাড়ি, গ্রাম/রাস্তা-বার্মা কলোনি, হিলভিউ রোড, পশ্চিম ষোলশহর (পার্ট-২), ডাকঘর- আমিন জুট মিলস-৪২১১, পাঁচলাইশ, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন। এ বিষয়ে জানতে চাইলে ইসি সচিবালয়ের যুগ্ম সচিব আবদুল বাতেন বলেন, নুর মোহাম্মদ কীভাবে স্মার্টকার্ড পেয়েছে, সেটা তদন্ত করলে বেরিয়ে আসবে।

কোন অফিস থেকে এই কার্ড ইস্যু করা হয়েছে এবং এর সঙ্গে কারা করা জড়িত সেটাও জানা যাবে।

এদিকে রোহিঙ্গা ডাকাত নুর মোহাম্মদ কীভাবে বাংলাদেশের নাগরিক হলো- এ বিষয়ে জানতে চাইলে জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগের মহাপরিচালক সাইদুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, ‘বিষয়টি আমরা আজই জেনেছি। আমাদেরও প্রশ্ন একজন রোহিঙ্গা ডাকাত কীভাবে ভোটার হলো? বিষয়টি খতিয়ে দেখার জন্য দু-একদিনের মধ্যেই তদন্ত কমিটি গঠন করা হবে। অপরাধীরা অবশ্যই শাস্তি পাবে।’

কক্সবাজার সিভিল সোসাইটির সভাপতি আবু মোরশেদ চৌধুরী খোকা বলেন, এভাবে যদি রোহিঙ্গারা জাতীয় পরিচয়পত্র, স্মার্টকার্ড বা পাসপোর্ট পেতে থাকে তাহলে তাদের মিয়ানমারে ফেরত পাঠানো সম্ভব হবে না। দীর্ঘমেয়াদে এর খেসারত বাংলাদেশকেই দিতে হবে। রোহিঙ্গা ডাকাত নুর মোহাম্মদ ও সঙ্গীরা রোহিঙ্গাদের খাবার দিয়ে সহযোগিতা করা হ্নীলার যুবলীগ নেতা ওমর ফারুককে নির্মমভাবে হত্যা করেছে। সরকারদলীয় নেতারা যেখানে রোহিঙ্গাদের নির্মমতা থেকে রেহাই পাচ্ছে না, সেখানে স্থানীয় সাধারণ মানুষ তো আরও অসহায়। তাই রোহিঙ্গাদের ভোটার হতে এবং স্মার্টকার্ড পেতে সহযোগিতাকারীদের শনাক্ত করে কঠোর শাস্তির আওতায় আনা দরকার।

কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) ইকবাল হোসাইন বলেন, দুর্ধর্ষ রোহিঙ্গা অপরাধীদের বাংলাদেশি স্মার্টকার্ড পাওয়া চরম দুঃখজনক। লোভে কিছু অসাধু ব্যক্তি রোহিঙ্গাদের ভোটার হতে এবং পাসপোর্ট পেতে সহযোগিতা করে। এটা যে নিজেদের পায়ে কুড়াল মারার চেয়ে ক্ষতিকর তা বোঝে না লোভী মানুষগুলো। তিনি বলেন, সহযোগিতাকারীদের মধ্যে যারা ধরা পড়ে তারা শাস্তির মুখোমুখি হয়। কিন্তু এভাবে তো চলতে পারে না। নিজ নিজ অবস্থান থেকে আমাদের আরও সচেতন হওয়া দরকার। পাশাপাশি দরকার এ অপরাধ নির্মূলে কঠোর পদক্ষেপ। আমরা সেই পথে হাঁটছি।

সর্বশেষ খবর