বুধবার, ৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৯ ০০:০০ টা

ধর্ষণের পর কান্নাকাটি করায় হত্যা আসমাকে

শিশু ইমরানকে চারজন মিলে বলাৎকারের পর হত্যা

মাহবুব মমতাজী

ধর্ষণের পর কান্নাকাটি করায় শ্বাসরোধে হত্যা করা হয় পঞ্চগড়ের মাদ্রাসাছাত্রী আসমাকে। গত ১৯ আগস্ট রাজধানীর কমলাপুর রেলস্টেশনের ওয়াশ ফিল্ডে পরিত্যক্ত একটি বগিতে মাদ্রাসাছাত্রীর ধর্ষিত লাশ উদ্ধার হয়। চাঞ্চল্যকর এ ঘটনার রহস্য উদ্ঘাটনে মাঠে নামে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। অবশেষে আসমা খাতুনের (১৭) হত্যা এবং ধর্ষণের রহস্য উদ্ঘাটন করে পুলিশ। উপর্যুপরি ধর্ষণের যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছিল মেয়েটি। তার কান্না থামাতেই তাকে শ্বাসরোধে হত্যা করেছিল বাঁধন।

মামলার প্রধান আসামি এবং আসমার প্রেমিক মারুফ হাসান বাধন (১৭) আসমাকে ঢাকায় নিয়ে আসার কথা জিজ্ঞাসাবাদে পুলিশের কাছে স্বীকার করেছে। একই সঙ্গে সেদিন ঠিক কী ঘটেছিল তারও বর্ণনা দিয়েছে পুলিশের কাছে। এর আগে গত ২২ আগস্ট রাতে বাঁধনকে পঞ্চগড় সদর থানা পুলিশ গ্রেফতার করে। পরদিন সন্ধ্যা ৬টার দিকে বাঁধনকে ঢাকা রেলওয়ে পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়।

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে সে পুলিশকে জানায়, গত ১৮ আগস্ট আসমাকে নিয়ে পঞ্চগড় এক্সপ্রেসে করে রাতে ঢাকা কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনে এসে পৌঁছায়। সেখানে রাতের খাবার খাওয়ার পর স্টেশনের আশেপাশের আবাসিক হোটেলগুলোতে থাকার চেষ্টা করে। কিন্তু পরিচয়পত্র না থাকায় কেউ তাদের কাছে হোটেল রুম ভাড়া দিতে রাজি হয়নি। কোনো উপায় না পেয়ে বাঁধন ও আসমা বলাকা কমিউটারের পরিত্যক্ত একটি বগিতে গিয়ে শুয়ে পড়ে। নিজেকে বাঁচাতে সেসময় বাঁধন জানায়, তাদের আপত্তিকর অবস্থায় দেখে ফেলে অপরিচিত চারজন যুবক। পরে তাকে পাশের বগিতে বেঁধে রেখে আসমাকে ধর্ষণ করে। একপর্যায়ে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে পালিয়ে যায় তারা। পরে বাঁধনও সেখান থেকে পালিয়ে পঞ্চগড়ের উদ্দেশে রওনা হয়। ঢাকায় আনার পর রেলওয়ে থানা পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে বাঁধন স্বীকার করে, বাঁচার জন্য সে অপরিচিত চার যুবকের কথা বলেছিল। আসলে সে নিজেই ধর্ষণের পর শ্বাসরোধে হত্যা করে।

রেলওয়ে পুলিশের ঢাকা সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) ওমর ফারুক এ প্রতিবেদককে জানান, ঢাকায় আনার পরদিনই বাঁধন আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে। যখন তার সামনে ঘটনাস্থলের আশপাশের ভিডিও ফুটেজ উপস্থাপন করা হয়, তখন সে আসল ঘটনা খুলে বলে। যদি সেখানে চার যুবক যেত তাহলে সিসিটিভির ক্যামেরায় তাদের দেখা যেত। জিজ্ঞাসাবাদে বাঁধন স্বীকার করে, উভয়ের সম্মতিতে তারা ট্রেনের বগিতে গিয়েছিল। এরপর মেয়েটিকে উপর্যুপরি ধর্ষণ করে। অনেকবার মেয়েটি বাধা দেওয়ার চেষ্টা করেছিল কিন্তু তা সে শোনেনি। এতে প্রচ  যন্ত্রণায় মেয়েটি কান্নাকাটি শুরু করে। কান্নার শব্দ কেউ শুনে ফেলার ভয়ে তাকে বারবার থামতে বলছিল বাঁধন। এ সময় ভয়ে তার শরীর থেকে ঘাম ঝরছিল। এত বলার পরও কান্না যখন থামাচ্ছিল না, তখন আসমার গলা থেকে ওর ওড়না নিয়ে প্রথমে নিজের শরীরের ঘাম মুছে। এরপর তার গলায় পেঁচিয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে ওই বগি থেকে পালিয়ে আসে। এরপর ওভারব্রিজ দিয়ে স্টেশন পার হয়ে মুগদা থেকে লাব্বাইক বাসে উঠে গাবতলী হয়ে পঞ্চগড়ে ভাইয়ের বাসায় আত্মগোপন করে। এ ঘটনার পরই গত ২০ আগস্ট আসমার চাচা রাজু ইসলাম তাকে প্রধান আসামি করে ধর্ষণ ও হত্যা মামলা করেন। ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) মর্গে আসমার লাশ ময়নাতদন্তেও প্রাথমিকভাবে ধর্ষণের পর হত্যার আলামত পায় ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসক।  এদিকে নোয়াখালী প্রতিনিধি জানান, বেগমগঞ্জের ছোট শরীফপুরে শিশু এমরানকে বলাৎকারের পর শ্বাসরোধে হত্যা করা হয়েছে। ২৫ আগস্ট ছয়ানী বাজারের সহিদের পরিত্যক্ত দোকানঘর থেকে অর্ধগলিত অবস্থায় এমরানের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। গতকাল দুপুরে নোয়াখালী জেলা পুলিশের সম্মেলন কক্ষে পুলিশ সুপার আলমগীর হোসেন সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান। এমরান ওই গ্রামের সামছুল হকের ছেলে। সে স্থানীয় ছয়ানী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রথম শ্রেণির ছাত্র। আলমগীর হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, চারজন মিলে বলাৎকার করলে শিশুটি অনেকটা জ্ঞান হারিয়ে ফেলে। পরে শ্বাসরোধে হত্যা করে স্থানীয় একটি পরিত্যক্ত দোকানঘরে প্লাস্টিকের মাছের ঝুড়িতে রেখে দেয়। রবিবার ওয়াসিম আকরাম নামে একজনকে গ্রেফতারের পর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে এবং জেলার জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক শোয়েব উদ্দিন খানের কাছে ১৬৪ ধারায় দেওয়া স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি থেকে এসব তথ্য উঠে আসে। জানা যায়, ২২ আগস্ট নিখোঁজ হয় এমরান। পরে তার বাবা বেগমগঞ্জ থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেন। এরপর পুলিশ এমরানকে উদ্ধারের চেষ্টা করে। ২৫ আগস্ট ছয়ানী বাজারের সহিদের পরিত্যক্ত দোকানঘর থেকে অর্ধগলিত অবস্থায় এমরানের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। এরপর পুলিশ এ ঘটনায় একটি হত্যা মামলা গ্রহণ করে এবং আসামিদের গ্রেফতারে বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালায়।

সর্বশেষ খবর