বুধবার, ৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৯ ০০:০০ টা

নকল পুলিশ

মির্জা মেহেদী তমাল

নকল পুলিশ

শহীদ ওরফে কামরুল মাঝি ও ইউসুফ কাজী। সারাক্ষণ তাদের হাতে পিস্তল ও ওয়াকিটকি। দেখলে আসল পুলিশ মনে হলেও এরা নকল পুলিশ। সাত বছর ধরে পুলিশ সেজে মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করেছেন। এই দুজনের মতো ঢাকাসহ সারা দেশে কয়েকশ ভুয়া পুলিশ, র‌্যাব ও সেনাবাহিনীর সদস্য রয়েছে। তারা সাধারণ মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করছে। অবশ্য কামরুল ও ইউসুফ শেষ পর্যন্ত পুলিশের হাতে গ্রেফতার হন। অনুসন্ধানে দেখা গেছে, রাজধানীর পলওয়েল মার্কেট ও রজনীগন্ধা সুপার মার্কেটে অবাধে বিক্রি হয় র‌্যাব-পুলিশের পোশাক; পাওয়া যায় হাতকড়াসহ সব ধরনের সরঞ্জাম। পোশাক ও সরঞ্জাম বিক্রির ব্যাপারে নিয়মনীতি মানা হচ্ছে না। এই সুযোগ ভালোভাবে কাজে লাগাচ্ছে অপরাধীরা। তারা পুলিশ বা র‌্যাবের পোশাক পরে ছিনতাই, ডাকাতি, খুন ও অপহরণের মতো ঘটনা ঘটাচ্ছে। আর ভাবমূর্তির সংকটে পড়ছেন পুলিশ ও র‌্যাবের আসল সদস্যরা। ওই মার্কেটে পুলিশ-র‌্যাবের কটি, হাতকড়া, লাইটিং ডিটেক্টর, ব্যাজ, বাঁশি, ক্যাপ, বেল্ট, জুতা, পিস্তল কভারসহ সব সরঞ্জামই বাইরের লোকের কাছে বিক্রি করা হয়। অথচ পুলিশ সদর দফতর থেকে নির্দেশনা দেওয়া আছে, পরিচয়পত্র ছাড়া কারও কাছে কোনো সরঞ্জাম বিক্রি করা যাবে না। পুলিশের কর্মকর্তারা বলছেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে এক শ্রেণির প্রতারক আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পরিচয় দিয়ে সাধারণ মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করছে। কিছু প্রতারককে এরই মধ্যে ধরা হয়েছে।’ তারা বলেন, ‘পুলিশের পোশাক ও সরঞ্জাম বাইরে বিক্রি হচ্ছে বলে আমরা তথ্য পেয়েছি। এ কাজে সহায়তা করছে দুর্নীতিবাজ কিছু পুলিশ সদস্য। সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীদের চিহ্নিত করার চেষ্টা চলছে। পুলিশের  পোশাক ও সরঞ্জাম বিক্রির জন্য নীতিমালা রয়েছে; কেউ অমান্য করলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’ সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, চাকরিচ্যুত বা অবসরে যাওয়া কিছু পুলিশ সদস্য তাদের ব্যবহৃত পোশাক জমা না দিয়ে সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর কাছে বিক্রি করে দেন বলে অভিযোগ রয়েছে। পুলিশের পোশাক ও সরঞ্জাম ব্যবহারে কড়াকড়ি না থাকায় অপরাধীরা অপরাধ ঘটানোর সুযোগ পাচ্ছে। একসময় তালিকাভুক্ত দোকান ছাড়া অন্য কোথাও পুলিশি সরঞ্জাম বেচাকেনা করা যেত না। যে কেউ ইচ্ছা করলেই দোকান থেকে পুলিশি সরঞ্জাম কিনতে পারত না। পুলিশ সদস্যদেরও যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমোদন নিয়ে পোশাক ও সরঞ্জাম কিনতে হতো। এখন যে কোনো ব্যবসায়ী পুলিশি সরঞ্জাম কেনাবেচা করতে পারেন, যে কেউ কিনতে পারেন; অনুমতির প্রয়োজন হয় না। গোয়েন্দা পুলিশের একজন কর্মকর্তা বলেন, সম্প্রতি রাজধানীর রামপুরা ও রমনা এলাকা থেকে ডাকাত-ছিনতাইকারী দলের ১৬ সদস্যকে গ্রেফতার করে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা বিভাগ। এরা নিজেদের ডিবি পুলিশ পরিচয় দিয়ে আসছিল। রামপুরা-বনশ্রী রোড থেকে ডাকাতির প্রস্তুতিকালে নয়জনকে গ্রেফতার করা হয়। এ সময় তাদের কাছ থেকে একটি বিদেশি পিস্তল, একটি ম্যাগাজিন, দুটি গুলি, দুটি চাপাতি, চারটি ছুরি, একটি ওয়াকিটকি, তিনটি ডিবি লেখা জ্যাকেট, দুটি হ্যান্ডকাফ, দুটি বেতের লাঠি, একটি ব্যাগ ও দুটি ডিবি স্টিকার উদ্ধার করা হয়। এ সময় তাদের কাছ থেকে একটি মাইক্রোবাসসহ তিনটি গাড়ি জব্দ করা হয়েছে। গত ৯ জুলাই গোয়েন্দা দক্ষিণ বিভাগের গাড়ি চুরি/ছিনতাই প্রতিরোধ ও উদ্ধার টিমের সহকারী পুলিশ কমিশনার মো. রফিকুল আলমের নেতৃত্বে একটি দল রাজধানীর গুলিস্তান হকার্স মালিক সমিতি মার্কেটের বিপরীত পার্শ্বে অভিযান চালিয়ে আন্তঃজেলা ডাকাত দলের ৮ সদস্যকে গ্রেফতার করে। এদের কাছ থেকে উদ্ধার করা হয় ঢাকা রেঞ্জ পুলিশের ডিপসাইন লাগানো এসআই পদ মর্যাদার র‌্যাংক ব্যাজসহ ১ সেট জেলা পুলিশের ইউনিফর্ম, ১টি স্কুল ব্যাগ, পুলিশ মনোগ্রাম খচিত ১টি চামড়ার বেল্ট, ১ জোড়া হ্যান্ডকাফ, ২টি ওয়াকিটকি, ১টি রামদা, ১টি চাপাতি, মাইক্রোবাসের ড্যাশবোর্ডের সামনে বাংলায় পুলিশ লেখা একটি স্টিকার, ১টি সিগন্যাল লাইট, ১টি বেতের লাঠি, ১টি হাইচ মাইক্রোবাস, ১টি টিভিএস মোটরসাইকেল ও ডাকাতি করা ১০৪৯০০০ টাকা। পুলিশ জানায়, এদের পরনে থাকে পুলিশের পোশাক, কাঁধে র‌্যাংক ব্যাজ। হাতে ওয়াকিটকি নিয়ে মাইক্রোবাসে ঘুরে স্বর্ণ ব্যবসায়ী ও মোটা অঙ্কের টাকা বহনকারী ব্যক্তিদের টার্গেট করে ডাকাতি করাই এদের কাজ। পুলিশ জানায়, এমন পরিস্থিতির শিকার হলে দ্রুত ৯৯৯ এ ফোন করতে হবে। তাহলে সঙ্গে সঙ্গেই পুলিশের সহযোগিতা পাওয়া যাবে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর