বৃহস্পতিবার, ৫ সেপ্টেম্বর, ২০১৯ ০০:০০ টা

এক হেফাজত এখন পাঁচ খণ্ড

অভ্যন্তরীণ গ্রুপিং দিন দিন বাড়ছে আছে সরকারের পক্ষ-বিপক্ষ গ্রুপও

মুহাম্মদ সেলিম, চট্টগ্রাম

লাখো মানুষের সমাবেশ ঘটিয়ে দেশ তোলপাড় করা হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ এখন কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠার দ্বন্দ্বের জেরে খন্ডবিখন্ড। শীর্ষস্থানীয় নেতাদের দ্বন্দ্বের জেরে হেফাজতে ইসলামে এখন সৃষ্টি হয়েছে কমপক্ষে পাঁচটি গ্রুপ। ফলে আলোচিত এ সংগঠন থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন সাধারণ কর্মীরা। নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়েছেন নেতাদের অনেকে।

হেফাজতে ইসলামের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা মঈন উদ্দিন রুহী বলেন, ‘হেফাজতে ইসলাম দেশের বৃহৎ অরাজনৈতিক সংগঠন। এত বড় সংগঠনে নেতাদের মধ্যে মতানৈক্য থাকাটা অস্বাভাবিক নয়। তবে হেফাজতে ইসলামের নেতা-কর্মীরা আমির ও মহাসচিবের নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধ। যে কোনো আন্দোলন-সংগ্রামে আগের মতো সবাই ঐক্যবদ্ধভাবে কর্মসূচি পালন করবে।’

নাম প্রকাশ না করার শর্তে হেফাজতে ইসলামের এক নেতা বলেন, ‘হেফাজতে ইসলাম থেকে দেওয়া গত কয়েক দিনের বিবৃতি দেখলে বোঝা যাবে দ্বন্দ্ব কী আকার ধারণ করেছে। অতীতে আমির ও মহাসচিব সব ইস্যুতে যৌথ বিবৃতি দিলেও এখন প্রত্যেকেই পৃথকভাবে বিবৃতি দিচ্ছেন। আমির ও মহাসচিব গ্রুপ ছাড়াও আলাদা আরও কমপক্ষে তিনটি গ্রুপে বিভক্ত হেফাজতে ইসলাম। শীর্ষস্থানীয় নেতাদের দ্বন্দ্বের কারণে এরই মধ্যে অনেক কর্মী আলোচিত এ সংগঠন থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন। নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়েছেন অনেক নেতা।’ হেফাজতে ইসলামের শীর্ষস্থানীয় এক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘মূলত আনাস মাদানী ও মহাসচিবের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠার দ্বন্দ্বের জেরেই হেফাজতে ইসলামে নানা গ্রুপ সৃষ্টি হয়েছে, যা কখনোই সুখকর নয়। এভাবে ক্ষমতার দ্বন্দ্ব চলতে থাকলে অচিরেই হেফাজতে ইসলাম খর্বশক্তির সংগঠনে পরিণত হবে।’ জানা যায়, হেফাজতে ইসলামের নেতৃত্ব নিয়ে আমির আল্লামা আহমেদ শফীর ছেলে ও সংগঠনের প্রচার সম্পাদক মাওলানা আনাস মাদানীর সঙ্গে মহাসচিব আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরীর দূরত্ব সৃষ্টি হয়। এর পর থেকে আমির ও মহাসচিবের বলতে গেলে আলাদা পথচলা শুরু। কওমি মাদ্রাসার সর্বোচ্চ ডিগ্রি দাওরায়ে হাদিসকে মাস্টার্সের স্বীকৃতি দেওয়াকে কেন্দ্র করে সংগঠনে আরেক দফা ফাটল সৃষ্টি হয়। ওই সময় সংগঠন থেকে সিনিয়র নায়েবে আমির মহিবুল্লাহ বাবুনগরী পদত্যাগের ঘোষণা দেন। আরেক নায়েবে আমির মুফতি ইজহাজরুল ইসলাম চৌধুরী ক্ষুব্ধ হয়ে খোদ আমির আল্লামা আহমেদ শফীকে বহিষ্কার করার ঘোষণা দেন। সর্বশেষ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে হেফাজতে ইসলামের শীর্ষস্থানীয় নেতাদের দ্বন্দ্ব আরও প্রকট আকার ধারণ করে। এর পর থেকেই হেফাজতে ইসলামের শীর্ষস্থানীয় নেতাদের অনেকে ‘একলা চলো’ নীতি অনুসরণ করে বিভিন্ন ইস্যুতে আলাদা বিবৃতি প্রদান করছেন। হেফাজতে ইসলামে বিবদমান গ্রুপগুলোর মধ্যে রয়েছে আল্লামা শফীর ছেলে আনাস মাদানীর নেতৃত্বে একটি বলয়। এ ছাড়া রয়েছে মহাসচিব আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরী, সিনিয়র নায়েবে আমির মহিবুল্লাহ বাবুনগরী, নায়েবে আমির মুফতি ইজহার এবং দলের দুই যুগ্ম মহাসচিব মুফতি ফয়জুল্লাহ ও মাঈনউদ্দিন রুহীর নেতৃত্বে পৃথক পাঁচটি গ্রুপ। এ গ্রুপগুলো কয়েক মাস ধরে বিভিন্ন ইস্যুতে পৃথক বিবৃতি প্রদান করে আসছে।

এই রকম আরও টপিক

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর