স্যার, আমি আবু সাঈদ। পড়ালেখা করতে ভালো না লাগার কারণে হাজারীবাগ থেকে শ্রীপুরে পালিয়ে যাই। সেখানে গিয়ে বাস-লেগুনার চালকের সহকারী হিসেবে কাজ করি। এরপর থেকে মা-বাবার সঙ্গে আমার কোনো যোগাযোগ ছিল না।
গতকাল ঢাকার ৫ নম্বর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হলে এ বক্তব্য দেয় আবু সাঈদ। সঙ্গে তার বাবা মোহাম্মদ আজম ও মা মাহিনুর বেগমকেও আদালতে হাজির করে পুলিশ। এর আগে এ আবু সাঈদ খুন হওয়ার অভিযোগে জেল খেটেছেন একাধিক মানুষ। তবে পাঁচ বছর পর জানা গেল বেঁচে আছে সেই কিশোর। বর্তমানে মা-বাবসহ কারাগারে দিন কাটছে আবু সাঈদের। এর আগে গত রোববার আবু সাঈদ হত্যা মামলার আসামিদের আইনজীবী ওয়াহিদুজ্জামান আদালতে লিখিতভাবে বলেন, যে কিশোর আবু সাঈদ খুনের মামলা এ আদালতে চলছে, সেই আবু সাঈদ আদৌ খুন হয়নি। পরে বিচারক আবু সাঈদকে আদালতে হাজির করার জন্য নির্দেশ দেন। আদালতের নির্দেশে আজ আবু সাঈদ, তার বাবা ও মাকে আদালতে হাজির করে পুলিশ। এ সময় কথিত আবু সাঈদ হত্যা মামলার আসামি সোনিয়া আক্তার, আফজাল হোসেন ও সাইফুল ইসলাম আদালতে হাজির ছিলেন। বিচারক বেগম শামসুন্নাহার জানতে চান, সে আসলে আবু সাঈদ কি না? জবাবে আবু সাঈদ বলে, স্যার আমি আবু সাঈদ। পড়ালেখা করতে ভালো না লাগার কারণে ২০১৪ সালে হাজারীবাগ থেকে শ্রীপুরে চলে যাই। সেখানে গিয়ে বাস-লেগুনার চালকের সহকারী হিসেবে কাজ করি। এরপর থেকে মা-বাবার সঙ্গে তার কোনো যোগাযোগ ছিল না। গত ১৯ আগস্ট শ্রীপুর থেকে হাজারীবাগে আসি। পরে মা-বাবার সঙ্গে তার যোগাযোগ হয়। আদালত তখন আবু সাঈদের কাছে জানতে চায়, এত দিন কি মা-বাবার কথা মনে পড়েনি? আবু সাঈদ তখন চুপ ছিল। আবু সাঈদের কথা শোনার পর তার বাবা আজমকে কাঠগড়ায় তোলা হয়। মামলা সূত্রে জানা গেছে, পঞ্চম শ্রেণির ছাত্র আবু সাঈদ হারিয়ে যাওয়ার বিষয়ে ২০১৪ সালের ১৭ এপ্রিল বাবা মো. আজম একটি সাধারণ ডায়েরি করেন। এরপর অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে অপহরণ ও মুক্তিপণ দাবির মামলা হয়।
ওই মামলায় বিভিন্ন সময় আসগর আলী, মিলন, সাইফুল ইসলাম হাওলাদার, সোনিয়া আক্তার, তার ভাই আফজাল হোসেন ও শাহীন বারীকে গ্রেফতার করা হয়। ২০১৪ সালের ৭ ডিসেম্বর সাইফুল ও আফজাল ঢাকা সিএমএম আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিও দেন। স্বীকারোক্তিতে আসামিরা বলেন, তারা আবু সাঈদকে অপহরণ করে হত্যার পর লাশ বরিশালগামী লঞ্চ থেকে নদীতে ফেলে দেন। ওই মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ছিলেন ডিবির ধানমন্ডি জোনাল টিমের এসআই রুহুল আমিন। মামলাটি বর্তমানে যুক্তিতর্কের পর্যায়ে রয়েছে।এদিকে আসামিপক্ষের অভিযোগ বাদীপক্ষ ছেলেকে পাওয়ার পরও তা না জানিয়ে আপসের কথা বলে বাদী আজম পাঁচ লাখ টাকাও নেন বলে অভিযোগ আছে। গত ৩০ আগস্ট ছেলেকে নিয়ে আরও দুই লাখ টাকা নেওয়ার জন্য পল্লবী থানাধীন একটি বাসায় আসেন। এরপরই তাদের আটক করে প্রতারণার মামলা দেওয়া হয়। ওই মামলায় তারা এখন জেলহাজতে রয়েছেন।