শনিবার, ৭ সেপ্টেম্বর, ২০১৯ ০০:০০ টা

ইমোশনাল ব্ল্যাকমেইলিং

মির্জা মেহেদী তমাল

ইমোশনাল ব্ল্যাকমেইলিং

ভিকটিম কুমকুম (ছদ্ম নাম), বয়স ৩০ বছর, একটি অভিজাত পরিবারের সন্তান। বাবা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ছিলেন। ইডেন মহিলা কলেজে অধ্যয়নকালে বিশেষ প্রয়োজনে বরিশাল শহরে অবস্থান করে লেখাপড়া করে আসছিল। কোচিং করার সুবাদে আসামি মো. ওয়ালিদ হোসেন রাসেল এর সঙ্গে পরিচয় এবং ধীরে ধীরে বন্ধুত্বের সূত্রপাত। কুমকুম ঢাকায় চলে আসে, লেখাপড়া শেষ এবং নিজের ভবিষ্যৎকে উজ্জ্বল করার লক্ষ্যে বিসিএস পরীক্ষার প্রস্তুুতি নিতে থাকে। এরই মধ্যে ওয়ালিদ হোসেন রাসেলও ঢাকায় চলে আসেন। বিসিএস পরীক্ষার প্রস্তুুতি নেন। দীর্ঘদিন পরে আবার মোবাইল ফোনে কুমকুমের সঙ্গে যোগাযোগ। কথাবার্তা হয়। বিসিএসসহ চাকরির বিভিন্ন বিষয় নিয়ে তাদের মধ্যে প্রায়ই কথা হয়। এর ৩-৪ বছর পরে হঠাৎ একদিন ওয়ালিদ ফোন করে কুমকুমকে। জানায়, সে ৩৬তম বিসিএস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে প্রশাসন ক্যাডার পেয়ে বর্তমানে সহকারী কমিশনার হিসেবে যোগদান করেছেন। তিনি কুমকুমকে প্রায়ই ফোনে ইমোশনাল কথাবার্তাসহ বিভিন্ন স্থানে ঘুরতে নিয়ে যায়। একপর্যায়ে ওয়ালিদ প্রেমের প্রস্তাব দেন কুমকুমকে। কুমকুম প্রথমে অমত পোষণ করলেও সার্বিক বিবেচনায় প্রস্তাবে রাজি হন। ওয়ালিদের আবেগী কথার ফাঁদে পা দিয়ে তার  প্রেমে সাড়া দেয় এবং তারা শিগগিরই বিয়ে করবে বলে সিদ্ধান্ত নেয়। স্বাভাবিকভাবে প্রেমিক প্রেমিকা বিভিন্ন স্থানে ঘোরাঘুরিসহ তাদের সম্পর্ক গভীর থেকে গভীরতর হতে থাকে। কুমকুম সম্পূর্ণ বিশ্বাস করে তাকে তার হবু স্বামী হিসেবে গ্রহণ করে। একপর্যায়ে তাদের মধ্যে শারীরিক সম্পর্ক হয়ে যায়। তাদের অন্তরঙ্গ মুহূর্তের কিছু ছবি মোবাইল ফোনে ধারণ করে ওয়ালিদ। ওয়ালিদ এর চালচলন ও কথাবার্তা সন্দেহ হওয়ায় কুমকুম তার গতিবিধি লক্ষ্য করে। ওয়ালিদের কাছের লোকজনদের জিজ্ঞাসাবাদ ও ৩৬তম বিসিএস-এর নিয়োগ সংক্রান্তে প্রজ্ঞাপন সংগ্রহ পূর্বক নিশ্চিত হয় যে, ওয়ালিদ তার নিকট মিথ্যা পরিচয় দিয়েছে। সে কোনো বিসিএস কর্মকর্তা নয়। কুমকুম মানুষিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে এবং ওয়ালিদের সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ করে দেয়। একপর্যায়ে পারিবারিকভাবে সাঈদ ইকবাল নামক এক ব্যক্তির সঙ্গে বিয়ে হয়। ওয়ালিদ বিষয়টি জানতে পেরে ক্ষিপ্ত হয় এবং তার সঙ্গে আগের মতো শারীরিক সম্পর্ক স্থাপনের জন্য কুমকুমের ওপর চাপ প্রয়োগ করতে থাকে। কুমকুম রাজি না হলে তাদের অন্তরঙ্গ মুহূর্তের কিছু অশ্লীল ছবি ইন্টারনেটে ছেড়ে দেওয়ার ভয়ভীতি দেন।। একপর্যায়ে অশ্লীল ছবি ফেরত দেওয়ার নাম করে কুমকুম ও তার পরিবারের কাছে ৫ লাখ টাকা দাবি করে। কুমকুম কোনো বিষয়ে রাজি না হওয়ায় কুমকুমের বড় ভাই পশাল তালুকদার নামক ফেসবুক আইডিতে কুমকুম ও ওয়ালিদের অন্তরঙ্গ মুহূর্তের কিছু অশ্লীল ছবি আপলোড করে। বিষয়টি কুমকুমসহ তার পরিবারের সদস্যরা জানতে পারলে র‌্যাবকে জানায়।

উক্ত অভিযোগের ভিত্তিতে ওয়ালিদ হোসেন রাসেলকে মিরপুর মডেল থানা এলাকার ভাড়া বাসা থেকে তাকে গ্রেফতার করে এবং ল্যাপটপ কম্পিউটার, পেনড্রাইভে কুমকুমের সঙ্গে আসামির বিভিন্ন অশ্লীল ছবিসহ জব্দ করা হয়। র‌্যাব জানতে পারে, ভুয়া ম্যাজিস্ট্রেট পরিচয়ে আরও ৪-৫ জন মেয়েকে প্রেমের ফাঁদে ফেলে তাদের সঙ্গে অনৈতিক শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন পূর্বক উক্ত দৃশ্য মোবাইল ফোনে ধারণ করে এবং একই পন্থায় তাদের কাছেও চাঁদা দাবিসহ বিভিন্নভাবে ব্ল্যাকমেইল করে আসছিল। ভুয়া ম্যাজিস্ট্রেট পরিচয়ে প্রেম এবং শারীরিক সম্পর্ক স্থাপনসহ মোবাইলফোনে অশ্লীল ছবি ধারণ করে চাঁদা দাবি করার দায়ে ওয়ালিদকে গ্রেফতার করা হয়। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এভাবেই এক শ্রেণির প্রতারক ইমোশনাল ব্ল্যাকমেইলিং করে চাঁদা আদায় করে যাচ্ছে। একটু সচেতন হলেই এ ধরনের প্রতারণা থেকে রেহাই পাওয়া সম্ভব।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর