শিরোনাম
মঙ্গলবার, ১০ সেপ্টেম্বর, ২০১৯ ০০:০০ টা
বেপরোয়া ভিক্টর পরিবহন

স্বামী নেই সন্তানও পঙ্গু

নিজস্ব প্রতিবেদক

রাজধানীর তুরাগে ভিক্টর পরিবহনের একটি বাসের ধাক্কায় কণ্ঠশিল্পী ও সংগীত পরিচালক পারভেজ রবের মৃত্যু হয়। স্বামীর মৃত্যুশোক কাটতে না কাটতে ঠিক তিন দিন পর সেই কবলে পড়ে অনার্স পড়ুয়া ছেলে আলভি। একই কোম্পানির বাস দুর্ঘটনার শিকার হয়ে ছেলে আলভি এখন পঙ্গু। স্বামীর শোক ছাপিয়ে এখন ছেলেকে নিয়ে ব্যস্ত রোমানা সুলতানা। ভিক্টর পরিবহনের বেপরোয়া বাস তছনছ করে দিল তাদের পরিবার। রোমানা সুলতানা জানান, ৫ সেপ্টেম্বর তুরাগের ইস্টওয়েস্ট মেডিকেল কলেজের সামনে তার স্বামী পারভেজ রব ভিক্টর পরিবহন বাসের ধাক্কায় মারা যান। এর ঠিক তিন দিন পর ৭ সেপ্টেম্বর উত্তরার স্লুইস গেট বাসস্ট্যান্ডে আলভি ও তার বন্ধু ছোটনকে ধাক্কা দেয় একই কোম্পানির আরেকটি বাস। এতে প্রাণ হারায় আলভির বন্ধু ছোটন। আর আহত হয়ে শ্যামলীর ট্রমা সেন্টারের বেডে কাতরাচ্ছেন আলভি। রোমানা সুলতানা কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, একদিকে স্বামীর মৃত্যুর শোক, অন্যদিকে হাসপাতালের বেডে আহত সন্তানের যন্ত্রণা। ছেলে এখন পঙ্গু। সে আর স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরতে পারবি কিনা আল্লাহ ভালো জানেন। কী হতে কী হয়ে গেল কিছুই ভাবতে পারছি না। দুর্ঘটনার কোনো ক্ষতিপূরণ নয়, আমি স্বামী হত্যা এবং সন্তানকে পঙ্গু করার বিচার চাই।

তিনি বলেন, তিন ছেলে মেয়ে আর স্বামীকে নিয়ে সংসার সুখে শান্তিতেই চলছিল। সারা জীবনের সঞ্চয় করা টাকা আর ব্যাংক থেকে নেওয়া লোন দিয়ে তুরাগে একটি বাড়ির কাজও চলছিল। হঠাৎ করে পারভেজ রবের চলে যাওয়ায় জীবন নিমিষেই কেমন যেন অগোছালো হয়ে গেল। স্বামীর মৃত্যুর শোক শেষ হয়নি। বাড়িতে চুলা জ্বলছে না। যেখানে স্বামীর মাগফিরাত কামনায় দোয়া মাহফিলের আয়োজন চলছিল। ঠিক সে সময় আরেক দুর্ঘটনা আমাদের হতবাক করে দিয়েছে। আমাদের পরিবারের সবার ঠিকানা এখন হাসপাতাল। ধর্মীয় রীতি অনুযায়ী যেখানে পরিবারের উপার্জনক্ষম ব্যক্তিটির জন্য দোয়া করার কথা ছিল সেখানে আমরা পরিবারের আরেক সন্তানকে নিয়ে উদ্বিগ্ন অবস্থায় আছি। সন্তান বাঁচবে তো? বেঁচে থাকলেও স্বাভাবিক জীবন পাবে কি? ট্রমা সেন্টারে আলভিকে দেখভালকারী অর্থোপেডিক ডা. কামরুজ্জামান বলেন, আলভীর মেরুদ  ও প্রস্রাবের রাস্তার গোড়ার দিকে হাড় ভেঙে গেছে। সে স্বাভাবিকভাবে প্রস্রাব করতে পারছে না। আপাতত অন্যভাবে লাইন করে দেওয়া হয়েছে। অস্ত্রোপাচারের আগে সঠিকভাবে বলা যাচ্ছে না আসলে কী হবে। পুলিশ কর্মকর্তারা বলছেন, একই পরিবহনের বাসের চাপায় দুজনের মৃত্যু এবং একজনের আহতের ঘটনায় পুলিশের পক্ষ থেকে গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত করা হচ্ছে। দুই গাড়িচালকের শাস্তি ও নিরাপদ সড়কের দাবিতে গতকাল সড়ক অবরোধ করে আন্দোলন করে বিভিন্ন স্কুলের শিক্ষার্থী ও স্থানীয়রা। পুলিশ বিচারের আশ্বাস দিলে তারা সড়ক ছেড়ে দেয়। উত্তরা পশ্চিম থানার পরিদর্শক (তদন্ত) কাজী আবুল কালাম জানান, ভিক্টর পরিবহন বাসের চালক রফিকুল ইসলামকে রবিবার দুই দিনের রিমান্ডে আনা হয়েছে।

সর্বশেষ খবর