শনিবার, ১৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৯ ০০:০০ টা

সাহিত্যিক হয়ে ওঠার গল্প বললেন সমরেশ মজুমদার

শাহ্ দিদার আলম নবেল, সিলেট

সাহিত্যিক হয়ে ওঠার গল্প বললেন সমরেশ মজুমদার

বাংলাদেশ কিংবা ভারত, উভয় দেশেই সমানতালে জনপ্রিয় প্রখ্যাত কথাসাহিত্যিক সমরেশ মজুমদার। নিজের লেখনী, লেখার সৃজন ও বাস্তবতা দিয়ে উভয় বাংলায় শক্তিশালী লেখক হিসেবে আবির্ভূত হন তিনি। প্রখ্যাত এই ঔপন্যাসিক নিজের লেখক হয়ে ওঠার গল্প শুনিয়েছেন সিলেটের পাঠকদের। তার স্মৃতিচারণে উঠে আসে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কথাও।

গতকাল বেলা ১১টা থেকে প্রায় ঘণ্টাব্যাপী শ্রোতাদের বিমোহিত করে রাখেন সমরেশ মজুমদার। সমরেশ মজুমদারের নতুন বই ‘অপরিচিত জীবনযাপন’ প্রকাশ         করেছে বাতিঘর। এ উপলক্ষেই বাতিঘরের সিলেট শাখায় ‘বই প্রকাশের গল্প’ শীর্ষক আড্ডার আয়োজন করা হয়। সাংবাদিক ও বাউল গবেষক সুমন কুমার দাশের সঞ্চালনায় আড্ডার শুরুতে শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন বাতিঘরের কর্ণধার দীপঙ্কর দাস। এরপর শুরু হয় সমরেশ মজুমদারের গল্প।

সমরেশ মজমুদার বলেন, তারা কলকাতায় গ্রুপ থিয়েটার করতেন। মৌলিক নাটকের দরকার হলে তাকে নাটক লিখে দেওয়ার অনুরোধ করেন বন্ধুরা। তিনি নাটক লিখলেন। কিন্তু সবাইকে শোনানোর পর প্রতিক্রিয়া এলো, এটি নাটক হয়নি। তখন বন্ধুরা বললেন, ‘তুই আগে গল্প লিখে ফেল, এরপর নাট্যরূপ দে।’ সমরেশ মজুমদার গল্প লিখলেন। সবাই পড়ে প্রশংসাও করলেন খুব, কিন্তু এটি দিয়ে নাটক হবে না বলেও মন্তব্য করলেন। এই কথাসাহিত্যিক বলেন, কলকাতার বিখ্যাত দেশ পত্রিকায় একটি গল্প পাঠান তিনি। কয়েকবার যোগাযোগের পর সম্পাদক গল্পটি ছাপা হওয়ার আশ্বাস দেন। এতে খুশি হয়ে সাত বন্ধুকে কফি খাওয়ান তিনি। তবে পরের সংখ্যায় গল্পটি ছাপা না হওয়ায় পাবলিক ফোনে দেশ পত্রিকার সম্পাদককে কল করে গালিগালাজ করেন। পরবর্তীতে গল্পটি ছাপা হলে ১৫ টাকা সম্মানী পান সমরেশ মজুমদার। সেই টাকা দিয়ে ফের বন্ধুদের খাওয়ান তিনি। খাওয়ার লোভেই বন্ধুরা তাকে লিখতে উৎসাহ দেয়। তিনিও লিখতে লিখতে সাহিত্যিক হিসেবে আবির্ভূত হন। আড্ডায় সবাই তন্ময় হয়ে শুনছিলেন সমরেশ মজুমদারের কথা। স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কথাও বলেন তিনি। সমরেশ মজুমদার বলেন, ‘শেখ হাসিনার সঙ্গে আমার যখন পরিচয় হয়, তখন তিনি প্রধানমন্ত্রী ছিলেন না। একদিন তার বাসায় বসে চা খাচ্ছিলাম, এমন সময় তার একটি কথায় আমি চমকে উঠি। শেখ হাসিনা বলেন, আপনি তো একজন সরকারি কর্মকর্তার মেয়েকে নষ্ট করেছেন। আমি তাঁর কথায় ভীষণ আশ্চর্য হই। জানতে চাই কীভাবে নষ্ট করলাম। শেখ হাসিনা বললেন, আপনার ‘গর্ভধারিণী’ বইটি পড়ে ওই সরকারি কর্মকর্তার মেয়ে পালিয়েছিল, কারণ সে জয়িতা হতে চায়। এখন তার বাবা-মা তাকে বন্দী করে রেখেছে। শেখ হাসিনার কথা শুনে আমি ওই মেয়েটির বাসায় যাই। তখন তার মা রাগান্বিত হলেও খুশি ছিলেন। মেয়েকে ডেকে বললেন, সমরেশ মজুমদার এসেছেন। মেয়ে বিশ্বাস করছিল না। অনেক বলার পর সে দরজা খোলে। আমি দেখলাম ১৮ বছরের এক মেয়ে। সে আমাকে দেখে বলে, আপনি সমরেশ মজুমদার হতে পারেন না। আমার লেখা বইয়ের শেষের পৃষ্ঠা দেখিয়ে বলল, উনি সমরেশ মজুমদার, আপনি না। মূলত ওই বইয়ে আমার যুবক বয়সের একটি ছবি ছাপা হয়, আমি যখন মেয়েটির সামনে যাই তখন বয়স হয়ে গিয়েছিল আমার। তাই সে হয়তো চিনতে পারেনি।

সমরেশ মজুমদার সিলেটের কথাও বলেন গতকালের আড্ডায়। তিনি সিলেটকে ‘জন্মভূমির’ সঙ্গে তুলনা করেন। বলেন, সিলেটে এসে আমি রোমাঞ্চিত। কারণ উত্তরবঙ্গের যে চা-বাগানে আমার দীর্ঘ সময় কেটেছে ঠিক সে জায়গার মতোই সিলেট। সেই চা-বাগান, সেই মাটি। আমি যখন এয়ারপোর্ট থেকে আসছিলাম তখন মনে হচ্ছিল সিলেটের সঙ্গে ভারতের উত্তরবঙ্গের সেই চা-বাগান ও এর আশপাশের এলাকার অনেক মিল।

অনুষ্ঠানে ‘অপরিচিত জীবনযাপন’ বইয়ের প্রি-অর্ডারকারী ১৫ জন পাঠক সমরেশ মজুমদারের অটোগ্রাফসহ বইটি সংগ্রহ করেন। এ সময় তার সঙ্গে ছবি তুলতে সবার মধ্যে হুড়োহুড়ি ছিল দেখার মতো।

সর্বশেষ খবর