শনিবার, ১৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৯ ০০:০০ টা

দুর্ভোগের ৭২ কিলোমিটার সড়ক

মোস্তফা কাজল, কেরানীগঞ্জ থেকে ফিরে

দুর্ভোগের ৭২ কিলোমিটার সড়ক

বাবুবাজার ব্রিজ থেকে চুনকুটিয়া পর্যন্ত সড়কের বেহাল দশা -রোহেত রাজীব

কেরানীগঞ্জের ৭২ কিলোমিটার সড়কের সংস্কার না হওয়ায় এর ব্যবহারকারী হাজার হাজার মানুষের দুর্ভোগ দিন দিন বাড়ছে। এ উপজেলায় জাতীয় মহাসড়ক বাদে অভ্যন্তরীণ সড়ক রয়েছে ২৮৮ কিলোমিটার। এর মধ্যে প্রায় ৭২ কিলোমিটার চলাচলের অনুপযুক্ত। এ ছাড়া অপ্রশস্ত সড়ক, খানাখন্দ ও ধুলোবালির কারণে পথচারী ও যানবাহনের যাত্রীরা দুঃসহ যন্ত্রণা ভোগ করে চলেছেন। সংস্কারের অভাবে সড়কগুলো ধুঁকছে বলা যায়। কোথাও কোথাও সৃষ্টি হয়েছে বড় বড় গর্তের। বৃষ্টির পানি জমে ওইসব গর্ত বড় খাদে রূপ নিচ্ছে। আবার কোথাও সড়ক ধসে পড়েছে। এসব সড়কে বাস, ট্রাকসহ অন্য  যানবাহন চলাচলে একদিকে যেমন বাড়ছে বিড়ম্বনা, অন্যদিকে সীমাহীন ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে যাত্রী, পথচারী ও শিক্ষার্থীদের। প্রতিদিনই ঘটছে কোনো না কোনো দুর্ঘটনা। কেরানীগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান শাহিন আহমেদ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, উপজেলার ৫০ কিলোমিটার সড়ক নষ্ট। সংস্কারের জন্য মন্ত্রণালয়ে জানানো হয়েছে। আশা করছি শিগগিরই প্রয়োজনীয় বরাদ্দ পাওয়া যাবে।

কেরানীগঞ্জ-মাওয়া ২৫ কিলোমিটার মহাসড়ক এখন ফোর লেনে উন্নীত করার কাজে বানানো ডাইভারসন সড়ক ব্যবহার করতে গেলে যন্ত্রণা পোহাতে হবেই। এ ছাড়া ধুলায় নাকাল হন কেরানীগঞ্জবাসীসহ পথচারীরা। আবদুল্লাহপুর বাসস্ট্যান্ড থেকে লেগুনায় চড়া ২০ বছরের একজন যুবক নয়াবাজার/পোস্তগোলা যেতে যেতেই ৭০ বছরের বুড়োর মতো চুল সাদা হয়ে যায়। কালো জামার রং হয়ে যায় ধূসর। এসব সড়কের ঝক্কিঝামেলা যেমনই হোক ধুলাবালির যন্ত্রণা প্রকট রূপ ধারণ করেছে। এতে শ্বাসকষ্ট, এলার্জিসহ ফুসফুসের প্রদাহের রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। পাঁচ বছরের শিশুপুত্র কোলে নিয়ে চুনকুটিয়া থেকে লেগুনায় চড়ে মিটফোর্ড হাসপাতাল যাচ্ছিলেন আয়েশা বেগম। ওড়না দিয়ে সাধ্যানুযায়ী নাক-মুখ ঢেকে ধুলা থেকে বাঁচার ব্যর্থ চেষ্টা করছেন। তিনি বলেন, ধুলাবালি আর কত সওয়া যায়? নিজেরা নাক মুখ ঢেকে রাখলেও বাচ্চাকে ঢেকে রাখতে পারছেন না। গোলাম কিবরিয়া বাদল বলেন, পানি জমে থাকায় বার বার ভাঙনের কবলে পড়া ওই অংশটুকু আরসিসি ঢালাই করা হবে জানিয়ে এলজিইডি কর্তৃপক্ষ খানাখন্দে ভরা ওই অংশের কাজ করতে নিষেধ করে দিয়েছে। আরসিসি করার বিষয়ে এখনো কোনো নির্দেশনা আসেনি। কর্তৃপক্ষের এ গাফিলতির কারণেই বর্তমানে জনদুর্ভোগের সৃষ্টি হয়েছে। কেরানীগঞ্জ মূলত ১২ ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত। এসব ইউনিয়নের প্রায় ৬০ কিলোমিটার পাকা ও আধাপাকা সড়ক এখন চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। এসব সড়কের মধ্যে বাস্তা ইউনিয়নে রয়েছে ৫ কিলোমিটার, রুহিতপুরে ৭, কালিগঞ্জে ৮, তারানগরে ৯, সাক্তায় ৫, কলাতিয়ায় ১০ ও হযরতপুরে ৫ কিলোমিটার রয়েছে। এ ছাড়াও কোন্ডায় ৬, তেঘরিয়ায় ৪, শুভ্যাডায় ৬, আগানগরে ৫ ও জিনজিরায় ৭ কিলোমিটার সড়ক ভাঙাচোরা। এদিকে এ উপজেলায় সড়কে তৈরি হওয়া বড় বড় গর্তে প্রতিদিন বাস-ট্রাকসহ অন্য ভারি যানবাহন আটকে গিয়ে যানজট তৈরি হচ্ছে। দুর্ভোগে পড়ছেন যাত্রীরা। এ উপজেলা রাজধানী ঢাকার অন্যতম প্রবেশদ্বার হওয়ায় ২২ জেলার যানবাহন এখান দিয়ে চলাচল করে। এ উপজেলার একাংশের মানুষকে রাজধানীতে যাতায়াত করতে মাওয়া সড়কটি ব্যবহার করতে হয়। এ ছাড়া মুন্সীগঞ্জ জেলার সিরাজদিখানসহ কয়েকটি উপজেলার মানুষ ওই সড়ক হয়ে ঢাকায় যাতায়াত করেন। ট্রাকচালক আবদুল হক বলেন, সড়কের গর্তে প্রতিদিনই কোনো না কোনো গাড়ির চাকা আটকে যাচ্ছে। ফলে বিকল হচ্ছে যানবাহন। ঘণ্টার পর ঘণ্টা আটকে থাকতে হচ্ছে অথবা বিকল্প সড়ক ব্যবহার করতে হচ্ছে। উপজেলা এলজিইডির উপ-সহকারী প্রকৌশলী জসিম উদ্দিন বলেন, অতি বৃষ্টি ও ভারী যানবাহন চলাচলের ফলে উপজেলার কিছু সড়ক নষ্ট। পাশাপাশি ভাঙা অংশে আরসিসি ঢালাই করার জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে কাগজপত্র পাঠানো হয়েছে। কোনাখালী এলাকার বাসিন্দা জব্বার মিয়া বলেন, এ ইউনিয়নের প্রধান সড়কটির পাঁচ কিলোমিটার পর্যন্ত বড় বড় গর্ত ও খানাখন্দে ভরা। এ সড়কের প্রায় এক কিলোমিটার সংস্কারের অভাবে চলাচলের অনুপযোগী। ওই সড়কে একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ২টি কিন্ডারগার্টেন ও একটি মাদ্রাসা রয়েছে। আর এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের পানির মধ্য দিয়ে যাতায়াত করতে হচ্ছে। কখনো কখনো জমে থাকা পানির নিচে খানাখন্দে পড়ে আহত হওয়ার ঘটনাও ঘটছে। স্থানীয়রা জানান, সড়কটির কাজ হয়েছে খুব নিম্নমানের। যে কারণে অনেক গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। সামান্য বৃষ্টি হলেই জনজীবনে নেমে আসে চরম দুর্ভোগ।  স্থানীয় ইউপি সদস্য আশরাফ আলী জানান, উপজেলা প্রশাসনের সঙ্গে কথা হয়েছে। খুব শিগগিরই তার ইউনিয়নের সড়কটির সংস্কারের উদ্যোগ নেবে বলে তারা আশ^াস দিয়েছেন। উপজেলার উপ-সহকারী প্রকৌশলী জসিম উদ্দিন জানান, এটি অতি গুরুত্বপূর্ণ সড়ক। এ সড়কের দুই পাশের বাড়ির মালিকরা পরিকল্পনা মতো ড্রেনেজ ব্যবস্থা না রাখায় জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হচ্ছে। জনদুর্ভোগ কমাতে শিগগিরই সড়কটির সংস্কারে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এলাকার হাজার হাজার মানুষ প্রতিনিয়ত উপজেলা সদর, জেলা সদরসহ বিভিন্ন স্থানে যাতায়াত করে। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে সড়কটি চলাচল অনুপযোগী থাকায় সাধারণ মানুষকে বিড়ম্বনার শিকার হতে হচ্ছে। প্রায়ই দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছে সাধারণ মানুষ। তাছাড়া যাত্রীদের গুনতে হচ্ছে বাড়তি ভাড়া। তেঘরিয়ার বাসিন্দা ওমর ফারুক জানান, এ ইউনিয়নের প্রধান সড়কটি নতুন করে নির্মাণের জন্য কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ করা হয়েছে। এ ছাড়া বাবুবাজার ব্রিজের জনি টাওয়ার থেকে মাওয়া ঘাট পর্যন্ত পদ্মা সেতুতে পাথর সরবরাহের কাজে সড়কটি ব্যবহার করায় কোয়ার্টার কিলোমিটার সড়ক কিছুটা নষ্ট হয়েছে। এ সড়কের দুই পাশে বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হওয়ায় দিনের বেলায়ও চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে।

সর্বশেষ খবর