শনিবার, ১৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৯ ০০:০০ টা

ফ্রি ওয়েব ফিশিং

মির্জা মেহেদী তমাল

ফ্রি ওয়েব ফিশিং

ফেসবুক। শহর-গ্রাম সবখানেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম হিসেবে সাধারণ মানুষের কাছে ব্যাপক জনপ্রিয়। আর বিপুল মানুষের পছন্দের মাধ্যমটিকে ব্যবহার করে মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করতে রাজধানীসহ সারা দেশে বেশ কয়েকটি চক্র সক্রিয় আছে জানিয়েছে পুলিশ।

গোয়েন্দা সূত্র জানায়, ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠিয়ে ও বেশ কিছু ডোমেইন ব্যবহার করে এসব প্রতারক চক্র অপকর্ম করে আসছে। তারা এসব ডোমেইনে ফ্রি ওয়েব ফিশিং সাইট খুলে লাইক বাড়ানো এবং চটকদার ভিডিও দেখানোর কথা বলে প্রতারণা করে বিভিন্ন ব্যক্তিকে ইনবক্সে মেসেজ পাঠায়। তাদের পাতানো ফাঁদে পা দিয়ে আইডি ও পাসওয়ার্ড খোয়াচ্ছেন অনেকেই। পরবর্তীতে আইডি ও পাসওয়ার্ড দিয়ে প্রতারক চক্র অ্যাকাউন্টগুলো তাদের নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে নেয়।

ঢাকা মহানগর পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের সাইবার নিরাপত্তা ও অপরাধ দমন বিভাগের এক কর্মকর্তা বলেন, ‘এই প্রতারক চক্রের সদস্যরা সাধারণত তাদের ফেসবুক আইডি হ্যাক করার চেষ্টা করেন, যাদের আইডির তথ্য সহজে পাওয়া যায়। অর্থাৎ যেটির প্রাইভেসি পাবলিক করা। তারা সাধারণত এই প্রাইভেসি পাবলিক করে রাখা ফেসবুক আইডির মালিকদের খুঁজে বের করে তাদের র‌্যানডমলি ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠান। যারা তাদের এই ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট অ্যাকসেপ্ট করেন তারাই মূলত এই চক্রের শিকারে পরিণত হন।’

গোয়েন্দা তথ্যমতে, পরে ওই প্রতারক চক্রের সদস্যরা বিকাশ নম্বরে টাকা দেওয়ার বিনিময়ে অ্যাকাউন্ট ফেরত দেবে বলে ফেসবুক অ্যাকাউন্টের আসল মালিকদের ব্ল্যাকমেইল করে। কিংবা আসল ফেসবুক মালিকের অ্যাকাউন্টের বিভিন্ন বন্ধুকে তিনি বিপদে পড়েছেন বলে সহানুভূতি চেয়ে টাকা বিকাশ করে দিতে বলেন। মূলত মানসিক চাপ প্রয়োগ করে ফেসবুকের প্রতারক চক্রের সদস্যরা সাধারণ মানুষের কাছ থেকে বিকাশ বা অন্যান্য আরও টাকা লেনদেনের মাধ্যম ব্যবহার করে টাকা হাতিয়ে নেওয়ার চেষ্টা চালায়। আর্থিকভাবে লাভবান হওয়াই এদের মূল লক্ষ্য।

এমনই একজন হলেন সামির আল মাসুদ। বয়সে তরুণ মাসুদকে গত ফেব্রুয়ারিতে গ্রেফতার করা হয় রাজধানীর খিলক্ষেত থেকে। পড়াশোনাও করা হয়নি খুব একটা। কিন্তু প্রযুক্তি-বিষয়ক জ্ঞানার্জন করেছে নিজে নিজেই। সেই জ্ঞান ভালো কাজে না লাগিয়ে শুরু করে অপরাধমূলক কর্মকা-। তিনটি হ্যাকার গ্রুপের হয়ে কাজ করত সে। তার টার্গেট ছিল মডেল আর উঠতি বয়সী অভিনেত্রীরা। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে মিথ্যা পরিচয় দিয়ে তাদের সঙ্গে বন্ধুত্ব ও মাঝেমধ্যেই চ্যাট করত। পরে কৌশলে তাদের ফেসবুক আইডি হ্যাক করে নিত নিজের দখলে। অর্থ না দিলে অশ্লীল ছবি বা লেখা পোস্ট করার ভয় দেখাত। এভাবে গত এক বছরে সে অন্তত ৩০ জন মডেল-অভিনেত্রীর ফেসবুক আইডি হ্যাক করে অর্থ আদায় করেছে। কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি। সর্বশেষ মিস ওয়ার্ল্ড-২০১৮ এর প্রথম রানার্সআপ নিশাত নাওয়ার সালওয়ারের ফেসবুক আইডি হ্যাক করে। ১০ হাজার টাকা নিয়েও আইডি ফেরত না দিয়ে শুরু করে টালবাহানা। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের সাইবার সিকিউরিটি অ্যান্ড ক্রাইম ডিভিশনের দ্বারস্থ হন নিশাত। তার অভিযোগের পর খিলক্ষেত থেকে আলোচিত এই হ্যাকারকে গ্রেফতার করে পুলিশ।

সাইবার সিকিউরিটি অ্যান্ড ক্রাইম ডিভিশনের সিনিয়র সহকারী কমিশনার ইশতিয়াক আহমেদ জানান, নিশাত নাওয়ার সালওয়ারের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে প্রযুক্তির সহায়তায় মাসুদকে শনাক্ত করা হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে সে নিয়মিত উঠতি মডেল ও অভিনেত্রীদের ফেসবুক আইডি হ্যাক করার কথা স্বীকার করেছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যক্তিগত গোপনীয় ছবি বা তথ্য না রাখা কিংবা কারও সঙ্গে আদান-প্রদান না করাটাই ভালো বলে মন্তব্য করেছেন সাইবার সিকিউরিটি ইউনিটের কর্মকর্তারা। তাদের ভাষ্য, দিন দিন সাইবার ক্রাইমের প্রবণতা বাড়ছে। ব্যক্তিগত ছবি অনলাইনে থাকলে অনেক সময় তা হ্যাকারের কারণে একাধিক হাতে চলে যেতে পারে। এ জন্য অনেক সময় সামাজিকভাবে হেনস্তার শিকার হতে হয়। একই সঙ্গে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আইডি খোলার সময় টু ফ্যাক্টর অথেনটিকেশন এবং ট্রাস্টেড ব্যক্তি চিহ্নিত করে রাখলে হ্যাক হওয়া আইডি ফেরত পাওয়া সহজ হয়। তারা বলেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারের জন্য সবাইকে আরও সচেতন হতে হবে। ইন্টারনেটনির্ভরশীল হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে এর নিরাপত্তার বিষয়গুলোকেও গুরুত্ব দিতে হবে। তা না হলে সাইবার ক্রিমিনালদের আক্রমণের শিকার হতে হবে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর