রবিবার, ১৫ সেপ্টেম্বর, ২০১৯ ০০:০০ টা
ড্রাইভিং লাইসেন্স ইস্যু জটিলতা

বিদেশি প্রতিষ্ঠানকে সুবিধা দিতে অনিয়মের শেষ নেই

নিজস্ব প্রতিবেদক

বিনা টেন্ডারে বিদেশি প্রতিষ্ঠান মাদ্রাস সিকিউরিটি প্রিন্টার্সকে ড্রাইভিং লাইসেন্স ইস্যুর কাজ দেওয়ার পরিকল্পনা চূড়ান্ত করছে বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটি-বিআরটিএ। এর মধ্য দিয়ে সরকারের অন্তত ১৬ কোটি টাকা অতিরিক্ত ব্যয়ের আশঙ্কা করা হচ্ছে। কোনো সার্ভার, ডাটা সেন্টার,  কানেকটিভিটি তৈরি ছাড়াই প্রায় বিনা বিনিয়োগে ওই প্রতিষ্ঠানকে পূর্বের মূল্য লাইসেন্সপ্রতি ৪৭২.৬০ টাকা করে ৩০ শতাংশ বা ৬ লাখ ড্রাইভিং লাইসেন্স সরবরাহের চিঠি দেওয়া হয়েছে। একইভাবে প্রতিষ্ঠানটিকে নিয়মিত টেন্ডারে অংশ নিতে শর্ত শিথিল করা হয়েছে। অথচ প্রতিটি ড্রাইভিং লাইসেন্স কার্ড আমদানি মূল্য ২০০ টাকার বেশি নয়। নিয়ম-নীতি উপেক্ষা করে দেশীয় প্রতিষ্ঠান টাইগার আইটির পাওয়া কাজ বিনা টেন্ডারে মাদ্রাস সিকিউরিটি প্রিন্টার্সকে দেওয়ার উদ্যোগে ৬ লাখ আবেদনকারী কবে ড্রাইভিং লাইসেন্স পাবেন-তার জবাব নেই কারও কাছে। ফলে দীর্ঘ দুর্ভোগে পড়তে যাচ্ছেন লাইসেন্স প্রার্থীরা।

বিআরটিএ ২০১৫ সালের শেষে ড্রাইভিং লাইসেন্স সরবরাহের একটি আন্তর্জাতিক টেন্ডার আহ্বান করে। টেন্ডারটিতে ৫ বছরের জন্য ১৫ লাখ ড্রাইভিং লাইসেন্সসহ অন্যান্য যন্ত্রপাতি ও আনুষঙ্গিক সেবা সরবরাহের কথা ছিল। দেশি-বিদেশি একাধিক প্রতিষ্ঠান অংশ নিলেও দেশীয় প্রতিষ্ঠান টাইগার আইটি বাংলাদেশ লি. সর্বনিম্ন দরদাতা হওয়ায় ২০১৬ সালের ২৩ জুন টাইগার আইটিকে কার্যাদেশ দেওয়া হয়। দরপত্র অনুসারে টাইগার আইটি লাইসেন্স কার্ড, পার্সোনালাইজেশন সেন্টার (প্রিন্টিং স্টেশন), নেটওয়ার্ক কানেকটিভিটি, অনলাইন ইউপিএস, ডাটা সেন্টার, সার্ভার,  স্টোরেজ মেইনটেইন, ট্রেনিং, ২৪/৭ মনিটরিং সাপোর্ট, এসএমএস এবং ডাটা কালেকশন এর জনবলের খরচসহ লাইসেন্সপ্রতি ৪৭২.৬০ টাকা মূল্য নির্ধারণ করা হয়। ৫ বছরের চুক্তিতে প্রতি বছর গড়ে ৩ লাখ করে মোট ১৫ লাখ লাইসেন্স কার্ড সরবরাহের কথা বলা হলেও আড়াই বছরেই বিআরটিএ থেকে ১৫ লাখ লাইসেন্স ডাটা পাওয়া যায় এবং ৩ বছরের মধ্যেই ১৩,৯১,৩৮৮টি লাইসেন্স বিআরটিএকে সরবরাহ করা হয়। বাকি দুই বছরের জন্য গত ২৪ মার্চ অতিরিক্ত ৫০% কার্ড সরবরাহের অনুমতির জন্য টাইগার আইটি বিআরটিএকে চিঠি দেয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে বিআরটিএ থেকে টাইগার আইটিকে গত ১ আগস্ট জানানো হয়, চুক্তির দলিলে বর্ণিত লাইসেন্সপ্রতি একই মূল্যে চুক্তির অতিরিক্ত ৩০% (৪,৫০,০০০ পিস) পার্সোনালাইজড স্মার্ট ড্রাইভিং লাইসেন্স সরবরাহ নেওয়ার বিষয়ে মন্ত্রণালয়ে বিআরটিএ প্রস্তাব পাঠিয়েছে। কিন্তু গত ২৮ আগস্ট টাইগার আইটির প্রতিনিধিকে বিআরটিএ কর্মকর্তারা মৌখিকভাবে জাপ্রণ যে, বিআরটিএর পাঠানো প্রস্তাবটি সরকারের ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠকে নাকচ করা হয়েছে। বলা হয়, বিশ্বব্যাংকের একটি প্রতিবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ক্রয় কমিটি এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। অথচ প্রকল্পটি সরকারের নিজস্ব তহবিলের মাধ্যমে পরিচালিত, যাতে বিশ্বব্যাংক বাধা সৃষ্টি করতে পারে না। এরপর কোনো টেন্ডার ছাড়াই বিদেশি প্রতিষ্ঠান ‘মাদ্রাস সিকিউরিটি প্রিন্টার্স প্রাইভেট লি.কে গত ২৯ আগস্ট বিআরটিএ’র পরিচালক (ইঞ্জি.) স্বাক্ষরিত একটি প্রস্তাব দেওয়া হয়। এতে বলা হয়, ২০১৬ সালে অনুষ্ঠিত টেন্ডারে বিআরটিএ যে দরে (৪৭২.৬০ টাকা প্রতিটি) লাইসেন্স কার্ড কিনেছে সেই দরেই ‘মাদ্রাস সিকিউরিটি প্রিন্টার্স’ হতে লাইসেন্স কার্ড কিনতে আগ্রহী। ৩১ আগস্ট মাদ্রাস সিকিউরিটি প্রিন্টার্স চিঠি দিয়ে বিআরটিএ’কে সম্মতি জানায়। অথচ বর্তমানে প্রতিটি কার্ডের ৪৭২.৬০ টাকা মূল্যের সঙ্গে পুরো সিস্টেমসহ ৭০ জনের টেকনিক্যাল টিম জড়িত। মাদ্রাস সিকিউরিটি প্রিন্টার্সকে এই বিদ্যমান সিস্টেম ব্যবহার করেই একই মূল্যে কাজ দেওয়ার আয়োজন সম্পন্ন হয়েছে।   

অনিয়মের জন্য শর্ত শিথিল : এদিকে বিআরটিএ গত ২৫ আগস্ট ড্রাইভিং লাইসেন্স সরবরাহের জন্য নিয়মিত দরপত্র আহ্বান করে। এতে অংশগ্রহণকারী বিদেশি প্রতিষ্ঠনের মধ্যে ইউরোপ, আমেরিকা, কানাডা ও জাপানের প্রতিষ্ঠানের কথা উল্লেখ করা হয়। পরে ‘মাদ্রাস সিকিউরিটি প্রিন্টার্স প্রাইভেট লি.কে সুবিধা দিতে টেন্ডার প্রক্রিয়া পিছিয়ে দেওয়া হয় এবং স্পেসিফিকেশন বদলে ভারতের নাম অন্তর্ভুক্ত করা হয়।

সর্বশেষ খবর