সোমবার, ১৬ সেপ্টেম্বর, ২০১৯ ০০:০০ টা

মডেল নগরীর পথে কেরানীগঞ্জ

মোস্তফা কাজল, কেরানীগঞ্জ থেকে ফিরে

মডেল নগরীর পথে কেরানীগঞ্জ

রাজধানীর উপকণ্ঠের কেরানীগঞ্জ উপজেলায় আধুনিক মডেল নগরী গড়ে ওঠার পথে। আবাসন ব্যবসার বিপুল সম্ভাবনার আভাস পেয়ে অনেকে হুমড়ি খেয়ে পড়েছেন। এ সুবাদে একের পর এক আবাসন প্রকল্পের ফিতে কাটার ধুম পড়েছে। এর ফলে তিলোত্তমা রাজধানী ঢাকার পাশে নতুন এক ঝলমলে   শহর গড়ে ওঠার পদধ্বনি পাওয়া যাচ্ছে। এটি হবে রাজধানীর উত্তরাঞ্চলের পর দক্ষিণাঞ্চলের (বুড়িগঙ্গা নদীর ওপারে) অভাবনীয় উন্নয়ন। কেরানীগঞ্জ ১২টি ইউনিয়ন নিয়ে একটি সম্ভাবনাময় আধুনিক উপজেলা। ইউনিয়নগুলো হচ্ছে কোন্ডা, তেঘরিয়া, শুভাঢ্যা, বাস্তা, আগানগর, জিনজিরা, কালিন্দী, রোহিতপুর, শাক্তা, তারানগর, কলাতিয়া ও হযরতপুর। এই ১২টি ইউনিয়নের কোন্ডা, তেঘরিয়া, শুভাঢ্যা, বাস্তা, কালিন্দী, রোহিতপুর, কলাতিয়া ও হযরতপুর ইউনিয়নে গড়ে উঠেছে নতুন নতুন আবাসন প্রকল্প। এলাকার নিচু ও পতিত জমি ভরাট করে গড়ে তোলা হয়েছে এসব প্রকল্প। সবচেয়ে বেশি আবাসন প্রকল্প গড়ে উঠেছে কেরানীগঞ্জের কোন্ডা, তেঘরিয়া, শুভাঢ্যা, বাস্তা, রোহিতপুর ও হযরতপুর ইউনিয়নের বিভিন্ন মৌজায়। স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সরকারি-বেসরকারিভাবে এ এলাকায় ব্যাপক উন্নয়ন করার চিন্তা থেকেই গড়ে উঠছে নতুন নতুন বসতি, স্থাপনা ও সুউচ্চ অট্টালিকা। একসময়ের পতিত জমিগুলো এখন মূল্যবান সম্পদে পরিণত হয়েছে। জমির মূল্য বৃদ্ধি পাওয়ায় এ এলাকার মানুষের আর্থ-সামাজিক মানও বেড়েছে। অভাব ঘুচতে শুরু করেছে অনেকের। স্থানীয় বাসিন্দারা স্বপ্ন দেখছেন সমৃদ্ধ জীবনযাপনের।

ফলে উন্নয়নের এই দূরদর্শনকে আর বেশি দূরে বলে মনে করছেন না কেরানীগঞ্জবাসী। তাদের মতে, পদ্মা সেতুর নির্মাণকাজ সমাপ্ত হয়ে গেলে কেরানীগঞ্জ আধুনিক নগরীর খেতাবও অর্জন করবে। এ জন্য গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ও এখানে আবাসন প্রকল্প হাতে নিয়েছে। পাশাপাশি প্লট বরাদ্দের প্রক্রিয়া শেষ করেছে। জানা গেছে, কেরানীগঞ্জ ছাড়াও সিরাজদিখান উপজেলাসহ তৎসংলগ্ন এলাকার বহু মানুষ আমেরিকা, লন্ডন ও সৌদি আরবসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে কর্মরত আছেন। পর্যাপ্ত অর্থ থাকলেও পরিকল্পিত নগরীর অভাবে এত দিন তারা বিনিয়োগ করতে পারেননি। কিন্তু এখন কেরানীগঞ্জে অপার সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচিত হওয়ায় প্রবাসীদের মনেও জন্মভূমি নিয়ে আশার আলো উঁকি দিয়েছে। তারা সুন্দর ও আধুনিক পরিবেশে দেশে থাকা পরিবার-পরিজনের জন্য মানসম্পন্ন বাড়ি তৈরির স্বপ্ন দেখছেন। মূলত এই প্রবাসীরাই এসব আবাসন প্রকল্পের প্লট ও ফ্ল্যাটের ক্রেতা। অনেকে আবার সরাসরি আবাসন প্রকল্পে অর্থ লগ্নি করছেন। এ ছাড়া রাজধানী ঢাকার কাছাকাছি হওয়ায় বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষও এখানে প্লট-ফ্ল্যাট কেনার প্রতি ঝুঁকছেন। জানতে চাইলে স্থানীয় কোন্ডা এলাকার বাসিন্দা আবদুল মজিদ বলেন, ইছামতী, ধলেশ্বরী, কালিগঙ্গা আর বুড়িগঙ্গা এই চার নদী দ্বারা কেরানীগঞ্জ বেষ্টিত। বুড়িগঙ্গা নদীর ওপারে অবস্থিত কেরানীগঞ্জের গুরুত্ব অন্যান্য অঞ্চলের তুলনায় বেশি। পূর্বে মুন্সীগঞ্জ, পশ্চিমে সাভার, উত্তরে ঢাকা আর দক্ষিণে নবাবগঞ্জ। গুরুত্বপূর্ণ এই চারটি এলাকার মাঝেই কেরানীগঞ্জ উপজেলা অবস্থিত। এ ছাড়া এর উত্তর পাশ দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে বুড়িগঙ্গা। এ নদীর মাঝপথেই রয়েছে চিরচেনা সদরঘাট। ফলে গুরুত্বের দিক দিয়ে এর অবস্থান অনেক ওপরে। কিন্তু এত দিন পরিকল্পিত কোনো উন্নয়ন এ অঞ্চলে হয়নি। তবে শিগগিরই এর পরিবর্তন দেখতে পাচ্ছেন তিনি। স্থপতি ইকবাল হাবিবের ভাষায়, একসময় মেগা সিটিতে রূপ নিয়ে গৌরবে আসীন হয়ে দাঁড়াবে এই কেরানীগঞ্জ। একটি আবাসন কোম্পানির পরিচালক আফজাল হোসেন বলেন, কেরানীগঞ্জের এই অপার সম্ভাবনার কথা বুঝতে পেরে তারা এখানে ছোট-বড় বিভিন্ন প্রকল্প গড়ে তোলার কাজ শুরু করেছেন। এ ছাড়া দেশের বৃহৎ শিল্প পরিবার বসুন্ধরা গ্রুপের এখানে রয়েছে চারটি প্রকল্প। এগুলো হচ্ছেÑ রিভারভিউ, বসুন্ধরা সিটি ভিউ, দক্ষিণা সিটি ও গ্রিন সিটি। এর পাশাপাশি রাজউক হাতে নিয়েছে ঝিলমিল প্রকল্প। তিনি বলেন, পদ্মা সেতুর কাজ শেষ হয়ে গেলে কেরানীগঞ্জ মেগা সিটিতে পরিণত হতে বেশি সময় লাগবে না।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, সরকারি উদ্যোগে এ অঞ্চলে গড়ে উঠছে রাজউকের ঝিলমিল আবাসন প্রকল্প, বিসিক শিল্পনগরী, সেনাবাহিনীর নিউ ডিওএইচএস আবাসন প্রকল্প, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস প্রকল্প প্রভৃতি। স্থানীয়রা বলছেন, সরকারিভাবে এ এলাকায় বড় বড় প্রকল্পের কাজ শুরু হওয়ায় কেরানীগঞ্জের সার্বিক চিত্র বদলে যেতে শুরু করেছে। একই সঙ্গে বিদ্যুতের চাহিদা মেটাতে বিদ্যুৎ প্রকল্প ও যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নে প্রশস্ত সড়ক তৈরির প্রকল্পও চলমান রয়েছে। এ ছাড়া কেরানীগঞ্জেই গড়ে উঠছে দেশের সর্ববৃহৎ কারাগার। এটিকে কেন্দ্র করেও এখানকার পতিত জমির দাম বেড়ে গেছে কয়েক গুণ। আবাসন ব্যবসায়ীদের মতে, ক্রমবর্ধমান চাহিদাকে কেন্দ্র করে আধুনিক ঢাকাকে আরও বড় করে গড়ে তুলতে তারা এ উদ্যোগ নিয়েছেন। কেরানীগঞ্জে সবচেয়ে বড় আকারে আবাসন প্রকল্প হাতে নিয়েছে বসুন্ধরা গ্রুপ। ১৬ থেকে ১৭ বছর আগে বসুন্ধরা রিভারভিউ প্রকল্পের মাধ্যমে ওই অঞ্চলে প্রকল্প হাতে নেয় প্রতিষ্ঠানটি। পরে গ্রাহকদের চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে আরও তিনটি প্রকল্প হাতে নেয় বসুন্ধরা। এগুলো হলো- বসুন্ধরা সিটি ভিউ, দক্ষিণা ও গ্রিন সিটি। গ্রিন সিটির প্লটমালিক হাজী নাজিম উদ্দিন বলেন, কেরানীগঞ্জে যে হারে উন্নয়ন হচ্ছে, তাতে অল্প দিনের মধ্যে এটি আধুনিক মডেল সিটি হিসেবে গড়ে উঠবে। একসময় এসব নিয়ে কেউ চিন্তাও করেনি। কিন্তু এখন এটি আর স্বপ্ন নয়, বাস্তব। কেরানীগঞ্জের আগানগরের ইউপি সদস্য মিজানুর রহমান বলেন, বসুন্ধরার আবাসন প্রকল্পগুলো অত্যাধুনিক ও অপর সৌন্দর্যমন্ডিত। এখানে থাকছে প্রশস্ত সড়ক, নাগরিকদের জন্য সব রকম সুযোগ-সুবিধা। ইতিমধ্যে প্রকল্পের কাজ শুরু হয়ে গেছে। অনেকে প্লট কিনে সেখানে বাড়িঘরও নির্মাণ শুরু করেছেন।

সর্বশেষ খবর