সোমবার, ১৬ সেপ্টেম্বর, ২০১৯ ০০:০০ টা

নারী নয়, ওরা পুরুষ

মির্জা মেহেদী তমাল

নারী নয়, ওরা পুরুষ

১৮ বছর বয়সী শিমলার বাবার নাম সিরাজ। সিরাজ সাহেবের বয়স ৪৮ বছর। তিনি একদিন ফেসবুক অ্যাকাউন্টে তাহসিনা নামের এক মেয়ের ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পেলেন। তাহসিনার বয়স সবে একুশ হয়েছে। প্রোফাইল পিকচারটা আকর্ষণীয় বললে ভুল বলা হবে। পোশাকও বেশ খোলামেলা। সবমিলিয়ে ঘোর লাগা সুন্দরী। এই বয়সেও সিরাজ সাহেবের মনে ঘোর লাগল। তিনি তাহসিনার ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট অ্যাকসেপ্ট করলেন। ইনবক্সে শুভ সকাল আর শুভ রাত্রি দিয়ে শুরু হওয়া আলাপ অল্পদিনেই সিমেন্টের মতো জমে গেল। তাতে ফিনিশিং টাচ দিতেই যেন একুশ বছর বয়সী তাহসিনা ৪৮ বছর বয়সীয় সিরাজকে প্রেম নিবেদন করল। সিরাজ যেন এই অপেক্ষাতেই ছিলেন। শুরু হলো তাদের অসম প্রেম। খোলামেলা ছবি লেনদেন। শরীর নিয়ে আলাপচারিতা চলতে লাগল রাত  বিরাতে। এদিকে সিরাজ সাহেবের আর তর সইছে না। আর না পেরে তাহসিনাকে নির্জন কোথাও দেখা করার কথা বললেন। আপত্তি করল না তাহসিনা। দেখতে দেখতে সেই বহু কাক্সিক্ষত দিনটি এলো। সিরাজ সাহেব তাহসিনার সঙ্গে দেখা করার জন্য সেজেগুজে রওনা হওয়ার মুহূর্তে তার ফোন বেঁজে উঠল। ওপাশ থেকে এক পুরুষ কণ্ঠ তাকে বললÑ তাহসিনার সঙ্গে আর দেখা করতে আসতে হবে না। বরং সে একটা মোবাইল নম্বর দিচ্ছে সেখানে বিকাশ করে ৫ হাজার টাকা যেন পাঠায়। সিরাজ সাহবের প্রশ্ন, আপনি কে? আর কেনই বা ৫ হাজার টাকা পাঠাব? প্রশ্ন করতেই ফোনের ওপাশ থেকে অট্টহাসির শব্দ ভেসে এলো আর সেই পুুরুষ কণ্ঠটি বলল, সেই তাসকিনা। মানে তাসকিনা সেজে তার সঙ্গে এতদিন প্রেমের অভিনয় করেছে। আরও বলল, এটা নিয়ে বেশি বাড়াবাড়ি করলে ফেসবুকে তার সঙ্গে তাসকিনার কথাবার্তাগুলো প্রকাশ করে দেবে। এমনকি ছবিও। সিরাজ সাহেবের তখন উদভ্রান্ত অবস্থা। এই ঘটনা জানাজানি হলে তার কতখানি সম্মানহানি হবে ভাবতেই তার মনে ভয় ধরে গেল। ওই অবস্থাতেই ঘর থেকে বের হয়ে বিকাশ করে টাকা পাঠাল। তারপর আরও কয়েকবার টাকা পাঠাতে হয়েছে তাকে। ব্ল্যাকমেইলের শিকার হন সিরাজ। পরে তিনি জানতে পেরেছেন তাহসিনা কোনো মহিলা নয়। একজন পুরুষ। নারীর ছদ্মবেশী এই পুরুষ প্রতারণা চক্রের সদস্য। যতদিনে বুঝতে পেরেছেন সিরাজ, ততদিনে বহু টাকা তার দিতে হয়েছে কোনো প্রতিবাদ ছাড়াই। এভাবে সুন্দরী মেয়েদের প্রোফাইল বানিয়ে ছেলেদের প্রতারণার ফাঁদে ফেলে চক্রটি। কারও কারও এটা আয়ের উৎসও বটে। ফেসবুকের প্রোফাইলজুড়ে সুন্দরী মহিলার ছবি। ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট ও মেসেজ পেয়ে তাতেই আকৃষ্ট হন অনেক পুরুষই। মহিলাদের গলায় ভয়েস মেসেজ ও ভিডিওর ফলে কোনো সন্দেহও থাকত না। কিন্তু সামনাসামনি দেখা করতে গেলেই ঘনিয়ে আসত বিপদ। প্রতারকদের খপ্পরে খোয়াতে হয় সর্বস্ব। মহিলাদের নাম ও ছবি দিয়ে ভুয়া প্রোফাইল খুলে এভাবেই বন্ধুত্বের ফাঁদ পেতে প্রতারণা করত পাবনার শলিগাড়িয়ার পাঁচ ব্যক্তি। পুলিশের বিশেষ বাহিনী পাকড়াও করে তাদের। কোনো সুন্দরী মহিলা নন, এক দল যুবকের পাতা ফাঁদেই পা দিয়েছেন একের পর এক ব্যক্তি। তারা হলেনÑ মনোয়ারুল ইসলাম (৩১), মাসুদ রানা ওরফে শাওন (২৭), ইমদাদুল হক ওরফে হিরো (৩৭), রাকিব হাসান ওরফে রুবেল (২৮) ও শালগাড়িয়া মুজাহিদ ক্লাব মহল্লার সুজান আলী ওরফে প্রিন্স (৩০)। তাদের মোবাইল ও ল্যাপটপ বাজেয়াপ্ত করেছে পুলিশ। সেখানে একাধিক মহিলার নামে ফেসবুক আইডি, ছবি, ভিডিও ও ভয়েস রেকর্ডিং পাওয়া গেছে। দীর্ঘদিন ধরেই ফেসবুকে ভুয়া প্রোফাইলের মাধ্যমে প্রতারণা চালাচ্ছিল এই পাঁচ অভিযুক্ত। প্রথমে কোনো সুন্দরী মহিলার একাধিক ছবি দিয়ে প্রোফাইল তৈরি করা হতো। তার পর সেই প্রোফাইল থেকে পুরুষদের সঙ্গে কথা বলে প্রেমের ফাঁদ পাতা হতো। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে পুরুষরা নিজেরাই দেখা করতে রাজি হয়ে যেতেন। দেখা করতে এলে সকলে মিলে চড়াও হতেন ওই ব্যক্তির ওপর। মারধর করে আটকে রেখে কেড়ে নেওয়া হতো সর্বস্ব। চাওয়া হতো মোটা টাকা। পুলিশ জানায়, এমন অসংখ্য অভিযোগ রয়েছে পুলিশের ফাইলে। তদন্ত হচ্ছে। গ্রেফতারও হচ্ছে নিয়মিত। এরপরও বন্ধ হচ্ছে না এমন প্রতারণা। এর অন্যতম কারণ, মানুষ নিজেই নিজেকে বিপদে ফেলছে। ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট অ্যাকসেপ্ট করার আগে অবশ্যই প্রোফাইল ভালো ভাবে দেখতে হবে। মানুষকে সচেতন হতে হবে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর