মঙ্গলবার, ১৭ সেপ্টেম্বর, ২০১৯ ০০:০০ টা

রাখাইনে রোহিঙ্গা প্রতিনিধি দল পাঠাতে চায় চীন

টেকনাফ (কক্সবাজার) প্রতিনিধি

কক্সবাজার সফররত চীনের প্রতিনিধিরা মিয়ানমার থেকে নির্যাতন নিপীড়নের মুখে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের একটি প্রতিনিধি দলকে রাখাইন রাজ্যের পরিস্থিতি দেখে আসার প্রস্তাব দিয়েছেন।

গতকাল দুপুর ১২টার দিকে কক্সবাজারের টেকনাফের শালবাগান  রোহিঙ্গা ক্যাম্পের সিআইসি কার্যালয়ে ২০ জন রোহিঙ্গা নারী-পুরুষের সঙ্গে বৈঠকে এই প্রস্তাব উত্থাপন করেন চীনের পক্ষে বাংলাদেশে নিযুক্ত চীনা রাষ্ট্রদূত লি জিমিং। এ সময় বাংলাদেশ শরণার্থী, ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন সহকারী কমিশনারসহ চীনের প্রতিনিধি দলের অন্য সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।

ওই বৈঠকে রোহিঙ্গা নেতারা জানান, মিয়ানমারে নাগরিকত্ব, কেড়ে নেওয়া জমিজমা ফেরত এবং নিরাপত্তার নিশ্চয়তা দিলে স্বেচ্ছায় তারা স্বদেশে ফিরে যাবেন। তারা চীনের রাষ্ট্রদূত লি জিমিংয়ের কাছে এসব বিষয় নিশ্চিত করতে সহায়তা প্রদানের দাবি করেন।

চীনের প্রতিনিধি দল প্রধানের ‘মিয়ানমারে ফিরে যেতে কী সমস্যা’ প্রশ্নের জবাবে রোহিঙ্গারা বলেন, মিয়ানমারে এখনো রোহিঙ্গাদের জন্য শান্তির পরিবেশ সৃষ্টি হয়নি। সেদেশে বিবদমান গ্রুপের মধ্যে সংঘাত লেগে আছে। এখনো যেসব রোহিঙ্গা সেদেশে রয়েছে তাদের ওপর নির্যাতন চলছে। এ ছাড়া ২০১২ সালে আকিয়াবে এক লাখ ৮০ হাজার রোহিঙ্গাকে কয়েক মাসের জন্য একটি জায়গায় জড়ো করে রাখলেও এখন পর্যন্ত তারা একই অবস্থায় রয়েছেন। তারা জানান, এ পরিস্থিতিতে রোহিঙ্গারা মিয়ানমারে গিয়ে বিপদে পড়তে চান না।

‘কী করলে মিয়ানমারে যাবেন’ এমন প্রশ্নের উত্তরে এ শিবিরের রোহিঙ্গা নেতা গুরা মিয়া ও মোহাম্মদ জসিম বলেন, আমাদের তিনটি দাবি পূরণ করলে কালই স্বেচ্ছায় নিজ দেশে চলে যাব। মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব ও কেড়ে নেওয়া জমি ফেরত দিতে হবে এবং নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।

চীনা রাষ্ট্রদূত জানতে চান ‘বাংলাদেশ সরকারের সহায়তায় মিয়ানমারের পরিস্থিতি দেখতে রোহিঙ্গাদের একটি প্রতিনিধি দল সেদেশে পাঠালে যাবেন কিনা’ প্রশ্নের জবাবে রোহিঙ্গারা ‘হ্যাঁ’ সূচক উত্তর দেন।

চীনের রাষ্ট্রদূত রোহিঙ্গাদের জন্য দুটি প্রস্তাব দেন। যেমন, প্রথমত: রোহিঙ্গা প্রতিনিধি দলের সবাইকে জনপ্রতি দুটি করে মোবাইল সেট দেওয়া হবে। একটি নিজে সেদেশে যাওয়ার সময় নিয়ে যাবেন, অন্যটি এখানে পরিবারের কাছে রাখবেন। যদি মিয়ানমারে পরিস্থিতি ভালো হয়, মোবাইলে পরিবারকে সেদেশে ডেকে নিয়ে যাবেন। দ্বিতীয়ত: প্রতিনিধি দলটি মিয়ানমারে গিয়ে অবস্থা দেখে ঘুরে চলে আসবেন। যদি সেখানকার অবস্থা ভালো দেখে আসেন- তাহলে পরিবার নিয়ে মিয়ানমারে ফেরত যাবেন।

মতবিনিময় শেষে শালবন রোহিঙ্গা ক্যাম্পে অশ্রিত রোহিঙ্গাদের তিনটি বাসায় যান চীনের প্রতিনিধিরা। তারা রোহিঙ্গাদের ঘর ঘুরে দেখেন, পরিবারের লোকদের সঙ্গে কথা বলেন এবং কিছু স্কুল ব্যাগ ও ফুটবল তুলে দেন। এর আগে সকাল ১০টার দিকে চীনের রাষ্ট্রদূত টেকনাফের কেরুনতলী ট্রানজিট ঘাট পরিদর্শন করেন।

পরিদর্শনকালে প্রত্যাবাসন বিষয়ে লি জিমিং জানতে চাইলে ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার (অতিরিক্ত) শামসুদ্দৌজা নয়ন বলেন, প্রত্যাবাসনের জন্য বাংলাদেশের সব ধরনের প্রস্তুতি রয়েছে। 

সর্বশেষ খবর