মঙ্গলবার, ১৭ সেপ্টেম্বর, ২০১৯ ০০:০০ টা

মায়ের অপমানে দোতলা থেকে ছাত্রের লাফ

শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ, ভাঙচুর

নিজস্ব প্রতিবেদক

রাজধানীর কাফরুলের বনফুল আদিবাসী গ্রিনহার্ট কলেজের দোতলা থেকে শাহরিয়ার আলম আকাশ নামে এক ছাত্র লাফিয়ে পড়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেছে। গুরুতর আহত আকাশকে আগারগাঁওয়ের একটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। গতকাল বেলা ১১টায় দ্বাদশ শ্রেণির ওই শিক্ষার্থী লাফিয়ে পড়ে। মৃত্যুর গুজবে ওই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সামনে বিক্ষোভ ও ভাঙচুর করেছে শিক্ষার্থীরা। পরে ওই কলেজে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হলে পরিস্থিতি কিছুটা শান্ত হয়।

শিক্ষার্থীরা জানায়, সম্প্রতি কলেজের ফাইনাল পরীক্ষার ফল প্রকাশ করা হয়েছে। আকাশ রেজাল্ট একটু খারাপ করায় কলেজের শিক্ষক ও কর্তৃপক্ষ তাকে বকা দেয়। আকাশের মা-বাবাকে কলেজে আসতে খবর দেয় কর্তৃপক্ষ। পরে আকাশের মাকে ফোন করে অপমান করে কলেজ কর্তৃপক্ষ। আকাশ এটি সহ্য করতে না পেরে কলেজের দোতলার ছাদ থেকে লাফ দিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করে। ভাগ্যক্রমে এ যাত্রায় প্রাণে বেঁচে যায় আকাশ। আমরা এর বিচার চাই।

এদিকে আকাশ লাফিয়ে পড়ার পর কলেজে গুজব ছড়িয়ে পড়ে তার মৃত্যু হয়েছে। এতে শিক্ষার্থীরা ক্ষুব্ধ হয়ে কলেজের জানালার গ্লাস ভাঙচুর করে। ক্লাস বর্জন করে বিক্ষোভ শুরু করে। শিক্ষার্থীদের শান্ত করতে কলেজ কর্তৃপক্ষ ব্যর্থ হলে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়। পরে পুলিশ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে তাদের শান্ত করলে পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হয়।

কলেজ কর্তৃপক্ষ বলছে, আকাশ কলেজের দোতলার সিঁড়ি থেকে একতলায় পড়ে যায়। তাকে তাৎক্ষণিকভাবে আগারগাঁওয়ের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরো সায়েন্সেস অ্যান্ড হসপিটালে নেওয়া হয়। বর্তমানে সেখানে চিকিৎসাধীন রয়েছে সে। আকাশ সুস্থ আছে। তবে কলেজে গুজব ছড়িয়েছে সে মারা গেছে। এ নিয়ে শিক্ষার্থীরা ঝামেলা করেছিল। এরপর পুলিশ এসে তাদের শান্ত করে।

বনফুল আদিবাসী গ্রিনহার্ট কলেজের রেক্টর সজল চন্দ্র সরকার বলেন, আকাশ আগামী বছর এইচএসসি পরীক্ষা দেবে। সম্প্রতি পরীক্ষার ফল খারাপ হওয়ায় তার বাবাকে কলেজে আসতে বলি। এ কথা জেনেই ওই ছাত্র শ্রেণিকক্ষ থেকে বের হয়ে এ ঘটনা ঘটায়। তবে শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করছে, নিজেদের দোষ ঢাকতে কলেজ কর্তৃপক্ষ সব সিসিটিভি ক্যামেরা খুলে ফেলেছে।

ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরো সায়েন্সেস অ্যান্ড হসপিটালের চিকিৎসক মনসুর আহমেদ বলেন, ছেলেটি সুস্থ আছে। কথাবার্তা বলছে। তার সিটি স্ক্যান করা হয়েছে। রিপোর্ট পেলে তার অবস্থা বোঝা যাবে। সে এখন স্বাভাবিক আছে।

পুলিশের মিরপুর বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) মোস্তাক আহমেদ জানান, ছেলেটি হাসপাতালে ভর্তি আছে। সুস্থ আছে। সেখানে ছেলের বাবা-মা ও কলেজ কর্তৃপক্ষ রয়েছে। কলেজের পরিস্থিতি এখন শান্ত। তবে ছাত্রের অভিভাবক অভিযোগ দিলে বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে।

এর আগে, গত বছরের ডিসেম্বরে পরীক্ষায় নকল করার অভিযোগে ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থী অরিত্রি অধিকারীকে বহিষ্কার করে স্কুল কর্তৃপক্ষ। পরে অরিত্রীর বাবা-মাকে ডেকে নিয়ে তার সামনেই অপমান করা হয়। অরিত্রি এটি সহ্য করতে না পেরে আত্মহত্যা করে। গতকাল প্রায় একই রকম ঘটনার পুনরাবৃত্তি হতে যাচ্ছিল মিরপুরের বনফুল আদিবাসী গ্রিনহার্ট কলেজের ছাত্র আকাশের ক্ষেত্রেও। তবে আকাশ অল্পের জন্য রক্ষা পেয়েছে।

সর্বশেষ খবর