সবার হাত ছিল খালি। কেউ আবার খালি পায়ে। কারও মুখে বড় দাড়ি, আবার কারও গায়ে কাজের পোশাক। এক কাপড়ে ঘর থেকে বের করে দেওয়ার মতো অবস্থা প্রত্যকের। নিঃস্ব হয়ে এভাবেই দেশে ফেরেন ১৭৫ প্রবাসী কর্মী। ভাগ্য বদল করতে বিদেশে গিয়ে এমন দুর্দশা নিয়ে ফিরতে হয়েছে তাদের। সৌদি আরব সরকারের ধরপাকড়ের শিকার হওয়া এসব কর্মী যে যেভাবে ছিলেন সেভাবেই বিমানে উঠেছেন। রবিবার রাত ১১টা ৭ মিনিটে সৌদি এয়ারলাইনসের একটি ফ্লাইটে ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে নামেন তারা। কোনো টাকা-পয়সা না নিয়েই দেশে ফিরতে বাধ্য করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন ভুক্তভোগীরা। ব্র্যাকের মাইগ্রেশন প্রোগ্রামের প্রধান শরিফুল হাসান জানান, ফেরত আসা শ্রমিকদের ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ডের সহযোগিতায় ব্র্যাক মাইগ্রেশন প্রোগ্রাম থেকে বিমানবন্দরে খাবার সরবরাহসহ নিরাপদে বাড়ি পৌঁছানোর জন্য জরুরি সহায়তা দেওয়া হয়। বিমানবন্দরে ফেরত আসা কর্মীরা জানান, সৌদি সরকার প্রতিদিন শত শত বিদেশি কর্মীকে গ্রেফতার করছে। রিয়াদ ডিপোর্টেশন ক্যাম্পে এখন হাজারখানেক বাংলাদেশি রয়েছেন। ভাগ্য বদল করতে বিদেশে গিয়ে এমন দুর্দশা নিয়ে ফেরা কোনোভাবেই মেনে নিতে পারছেন না চাঁদপুরের বাবুল হোসেন। তার অভিযোগ, সৌদিতে ছয় মাসের বৈধ আকামা (কাজের অনুমতিপত্র) থাকার পরও কর্মস্থল থেকে ধরে তাকে দেশে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। তার কোনো কথা শুনেনি দেশটির সরকার। টাঙ্গাইলের আলিম ও মনির হোসেন, নরসিংদীর জোবাইর, লক্ষ্মীপুরের ফরিদ, মুন্সীগঞ্জের শরিফ হোসেন এবং মেহেরপুরের সেলিম রেজাসহ আরও কয়েকজনের অভিযোগ, বৈধ আকামা থাকা সত্ত্বেও তাদের জোর করে ধরে জেলখানাতে নিয়ে যাওয়া হয়। বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে এখনই ব্যবস্থা নেওয়া না হলে সমস্যাটি বড় আকার ধারণ করবে বলে জানান তারা।
তাদের ভাষ্য, অনেক ক্ষেত্রে মালিকপক্ষ আকামা নবায়ন করেনি। বরং তা বাতিল করে শ্রমিকদের দেশে পাঠিয়ে দিচ্ছে। এক্ষেত্রে সৌদি আরবে বাংলাদেশ দূতাবাস তাদের কোনো সহযোগিতা করেনি। জানা যায়, কাজ ও থাকার নিয়ম লঙ্ঘনের অভিযোগে ২০১৭ সালের নভেম্বরে অভিযান শুরু করে প্রায় ৩৮ লাখ বিদেশিকে গ্রেফতার করে। চলতি বছরের জুন থেকে শুরু করে এখন পর্যন্ত ৫ লাখ ৪৪ হাজার ৫২১ জনকে গ্রেফতার করেছে সৌদি পুলিশ। গ্রেফতার হওয়া বিদেশিদের মধ্যে ২০১৭ সালের নভেম্বর থেকে এখন পর্যন্ত ৯ লাখ ৪০ হাজার ১০০ জনকে নিজ দেশে ফেরত পাঠানো হয়েছে।
