বৃহস্পতিবার, ১৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৯ ০০:০০ টা

মাদ্রাসাছাত্রীকে জিনে নিয়েছে!

নিজস্ব প্রতিবেদক

রাজধানীর পল্লবীর একটি মাদ্রাসা থেকে সাজমিন আক্তার (১৩) নামে এক ছাত্রী বেশ কয়েক দিন ধরে নিখোঁজ। গত ৩১ আগস্ট সে নিখোঁজ হয়। মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ বলছে, ‘মেয়েটিকে জিন নিয়ে গেছে।’ আর মেয়েটির পরিবার বলছে, মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ তার মেয়েকে গুম করেছে। গতকাল সকালে মেয়ের সন্ধান চেয়ে বাবা মো. শরিফ উল্লা এবং মা শিল্পী আক্তার সেগুনবাগিচায় ক্রাইম রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করেন। এ সময় তারা একমাত্র মেয়েকে উদ্ধারে প্রধানমন্ত্রীর সহযোগিতা চেয়েছেন।

সংবাদ সম্মেলনে সাজমিনের মা শিল্পী আক্তার বলেন, ‘চার বছর ধরে আমার মেয়ে পল্লবীর বাউনিয়াবাদ জামিয়া ফোরকানিয়া তালিমিয়া মহিলা মাদ্রাসায় পড়ছে। সে খুছুছি জামায়াত বা ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্রী। গত ২৭ আগস্ট তাকে মাদ্রাসায় দিয়ে আসি। ৩১ আগস্ট মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ ফোনে জানায়, সাজমিনকে পাওয়া যাচ্ছে না। এরপর আমি মাদ্রাসায় গেলে নিরাপত্তাকর্মী বলেন, আপনার মেয়েকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। এরপর আমি মাদ্রাসার হুজুর ও আপাকে ফোন দিই। তারা একেক সময় একেক কথা বলছেন।’

তিনি আরও বলেন, ‘মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ প্রথমে বলে, গেটে বাবার সঙ্গে দেখা করতে গিয়ে সাজমিন আর ফিরেনি। আবার বলে, আমার মেয়ের সঙ্গে জিন আছে। তাকে জিনে নিয়ে গেছে। আবার বলে সে অসুস্থ। মাথা ঘুরে সিঁড়িতে পড়ে গেছে। এভাবে তারা একেকবার একেক তথ্য দিচ্ছেন। পরে এ বিষয়ে ১ সেপ্টেম্বর পল্লবী থানায় সাধারণ ডায়রি (জিডি) করি। কিন্তু পুলিশ আজ পর্যন্ত মেয়েটির সন্ধান দিতে পারেনি। এর মধ্যে কয়েকটি নম্বর থেকে পুলিশ পরিচয়ে আমার কাছে টাকা চাওয়া হয়েছে।’ সাজমিনের বাবা মো. শরিফ উল্লা বলেন, ‘মাদ্রাসায় পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা ছিল বলে মেয়েকে সেখানে পড়তে দিয়েছি। আমরা দেখা করতে গেলেও ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হতো। মাদ্রাসায় সিসিটিভি ও নিরাপত্তাকর্মী রয়েছে। রয়েছে শিক্ষকদের নজরদারি। সেখান থেকে অনুমতি ছাড়া কেউ বের হতে পারে না। এমনকি বাবা-মা ছাড়া কারও সঙ্গে দেখাও করতে দেওয়া হয় না। এত কিছুর পরও আমার মেয়ে কীভাবে নিখোঁজ হয়। আমাদের একমাত্র মেয়েকে ফেরত চাই।’ জানা গেছে, মিরপুর-১ নম্বর শাহআলী বাগের ১ নম্বর রোডের ভাড়াটে বাসায় বাবা-মায়ের সঙ্গে থাকত সাজমিন আক্তার। সাজমিনের বাবা মো. শরিফ উল্লা ইলেকট্রিক মিস্ত্রি এবং মা শিল্পী আক্তার গার্মেন্টকর্মী। বাড়ি নোয়াখালীর কবিরহাটে। শান্তশিষ্ট ও বিনয়ী স্বভাবের সাজমিনকে গত চার বছর আগে ওই মাদ্রাসায় ভর্তি করা হয়।

এ বিষয়ে মাদ্রাসার শিক্ষক মাসুদ আকবর বলেন, মেয়েটি নিখোঁজের সময় প্রিন্সিপাল হজে ছিলেন। সিসি ক্যামেরা মনিটরিং তার কক্ষ থেকে করা হয়। কক্ষ পরিষ্কার করতে গিয়ে ঘটনার দিন ক্লিনাররা সিসি ক্যামেরার সুইচ অফ করে রাখে। তাই সিসি ক্যামেরায় কিছু ধরা পড়েনি। তবে ঘটনার দিন সকালে একজন শিক্ষিকা তাকে গেট থেকে বের হতে দেখেছেন। তখন সে তার বাবার সঙ্গে দেখা করতে যাচ্ছি বলে বের হয়ে যায়। এরপর থেকে সে নিখোঁজ রয়েছে। জিনের বিষয় জানতে চাইলে তিনি বলেন, মেয়েটির সহপাঠীরা বলছে সে অসুস্থ ছিল।

এ বিষয়ে পল্লবী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নজরুল ইসলাম বলেন, ঘটনার পর মেয়েটিকে উদ্ধারে কাজ করছি। মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষের অনেককে জিজ্ঞাসাবাদ করেছি। আমরাও বিভিন্নভাবে চেষ্টা করছি। তবে তেমন অগ্রগতি নেই।

সর্বশেষ খবর