শনিবার, ২১ সেপ্টেম্বর, ২০১৯ ০০:০০ টা

পাচারের জন্য মজুদ ১২৯ মেট্রিক টন ধানের বীজ

আলী আজম ও জয়শ্রী ভাদুড়ী

পাচারের জন্য মজুদ ১২৯ মেট্রিক টন ধানের বীজ

বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশনের (বিএডিসি) যশোর বীজ প্রক্রিয়াজাত কেন্দ্রে অনুমোদনের বাইরে ১২৯ মেট্রিক টন হাইব্রিড ধানবীজ (এসএল-৮এইচ) মজুদ করা হয়েছে। অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে তদন্তে প্রমাণ মিলেছে প্রায় দুই কোটি টাকা বাজার মূল্যের বীজ খোলা বাজারে পাচারের জন্য অবৈধভাবে মজুদের। এতে জড়িত থাকায় চার কর্মকর্তাকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে বিএডিসি। এ ব্যাপারে বিএডিসি চেয়ারম্যান মো. সায়েদুল ইসলাম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, প্রাথমিক তদন্তে অবৈধভাবে বীজ মজুদের সত্যতা পাওয়ায় চার কর্মকর্তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। অধিকতর তদন্তের জন্য তিন সদস্যের আরেকটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্তের জন্য তারা যশোর গিয়েছেন। তদন্তে পাওয়া প্রমাণ অনুযায়ী তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। গত ১৪ আগস্ট যশোর বীজ প্রক্রিয়াজাতকরণ কেন্দ্রের উপ-সহকারী পরিচালক আবদুল কাদের সংস্থার সদস্য পরিচালক (বীজ ও উদ্যান) বরাবর যশোর বীজ গুদামে অতিরিক্ত মজুদকৃত বীজের বিষয়টি লিখিতভাবে অবহিত করেন। এর পরই ঘটনা ফাঁস হতে শুরু করে। পরবর্তীতে বিএডিসির সদস্য পরিচালক (বীজ ও উদ্যান) ড. শেখ হারুন অর রশিদ আহমেদ বিষয়টি তদন্তে দুই সদস্যবিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করেন। কমিটির আহ্বায়ক করা হয় সংস্থার পাটবীজ বিভাগের ব্যবস্থাপক মো. রাজেন আলী ম ল ও সদস্য হিসেবে রাখা হয় বীজ প্রক্রিয়াজাতকরণ ও সংরক্ষণ (বীপ্রস) বিভাগের উপ-ব্যবস্থাপক ড. মো. শাফায়েত হোসেনকে। তদন্ত শেষে কমিটির দাখিল করা প্রতিবেদনে উঠে আসে জালিয়াতির তথ্য। গত ২৬ আগস্ট বিএডিসিতে দাখিল করা প্রতিবেদন সূত্রে জানা যায়, যশোর বীজ প্রক্রিয়াজাত কেন্দ্রের উপ-পরিচালক মো. আমিন উল্যা ২০১৮-১৯ অর্থবছরের কর্মসূচিবহির্ভূতভাবে ১২৯ দশমিক ২২ মেট্রিক টন হাইব্রিড বোরো ধানবীজ মজুদ করেন। এই অবৈধ মজুদে যোগসাজশ রয়েছে গোকুলনগর বীজ উৎপাদন খামার, পাথিলা বীজ উৎপাদন খামার ও করিঞ্চা বীজ উৎপাদন খামারের উপ-পরিচালকদের। ঝিনাইদহ দত্তপাড়া গোকুলনগর বীজ উৎপাদন খামারের উপ-পরিচালক তপন কুমার সাহা কর্মসূচির অতিরিক্ত ৭৫ মেট্রিক টন ধানবীজ যশোর কেন্দ্রে পাঠিয়েছেন। পাথিলা বীজ উৎপাদন খামারের উপ-পরিচালক আক্তারুজ্জামান তালুকদার পাঠিয়েছেন ৩২ দশমিক ১১ মেট্রিক টন বীজ। করিঞ্চা বীজ উৎপাদন খামারের উপ-পরিচালক ইন্দ্রজিত চন্দ্র শীল পাঠিয়েছেন অতিরিক্ত ২২ মেট্রিক টন। এই অতিরিক্ত বীজ উৎপাদনের পরিমাণ তারা মজুদ বইতে অন্তর্ভুক্ত করেননি। এই তথ্য লিপিবদ্ধ নেই সংগ্রহ রেজিস্টারেও। এমনকি অতিরিক্ত কোনো বীজ প্রেরণের চালান তথ্য খামারে সংরক্ষণ করা হয়নি। এই চার কর্মকর্তার যোগসাজশে পুরো প্রক্রিয়া গোপন করে গেছেন। প্রতি কেজি এ হাইব্রিড ধানবীজের মূল্য ১৫০ টাকা। এ হিসাবে ১২৯ মেট্রিক টন বীজের বাজারমূল্য প্রায় ২ কোটি টাকা বলে জানান সংশ্লিষ্টরা। তদন্ত প্রতিবেদন পর্যালোচনায় বলা হয়, যশোর বীজ প্রক্রিয়াজাত কেন্দ্রের উপ-পরিচালক মো. আমিন উল্যা এবং উপ-সহকারী পরিচালক আবদুল কাদেরর মধ্যে পারস্পরিক দ্বন্দ্বে বিষয়টি সামনে আসে। এই অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত কমিটি অতিরিক্ত বীজ মজুদের বিষয়টি জানতে পারে। তদন্তে দেখা যায়, কর্মসূচির বাইরে ১২৯ দশমিক ২২ মেট্রিক টন বীজ অতিরিক্ত মজুদ করা হয়েছে। বিএডিসি সূত্রে জানা যায়, সারা দেশে বিএডিসির মোট ১৩টি খামারে ৮১৬ দশমিক ৩৯২ মেট্রিক টন  (এসএল-৮এইচ) জাতের বীজ উৎপাদিত এবং সংরক্ষিত আছে। বিভিন্ন খামারে উৎপাদিত এবং বীজ প্রক্রিয়াজাতকরণ কেন্দ্রে সংরক্ষিত বীজের পরিমাণ বেশি থাকলে বিক্রয় মৌসুমে ক্ষতির সম্মুখীন হতে হয় সরকারি এই প্রতিষ্ঠানকে। বিএডিসির বীজ বাজারজাতকরণের আগেই বিএডিসির প্যাকেটে অবৈধভাবে সংরক্ষিত বীজ বাজারে আসার আশঙ্কা থেকে যায়। এসব বীজ বিএডিসির নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে অনেক সময় কমমূল্যে বিক্রি করা হয়। ফলে বিএডিসির বীজ বিক্রি বাধাগ্রস্ত হয় ও অবিক্রীত থাকার আশঙ্কা থেকে যায়। অবৈধভাবে মজুদকৃত বীজ ও ডিলার কৃষকদের কাছে কমমূল্যে বিক্রির কারণে সঠিক দাম নিয়ে সৃষ্টি হয় বিভ্রান্তি। এই চুরির কুশীলব বাইরের কেউ নয় এই সংস্থারই ঊর্ধ্বতন চার কর্মকর্তা। এই যোগসাজশে অন্য কেউ জড়িত রয়েছে কিনা সে বিষয়ে অধিকতর তদন্তে কমিটি গঠন করা হয়েছে। বিএডিসির সদস্য পরিচালক (অর্থ) মোমিনুর রশীদ আমিনকে আহ্বায়ক করে দুই সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। অন্য দুই সদস্য হলেন- বিএডিসির ব্যবস্থাপক (বিক্রয়) আবুল কালাম আজাদ এবং উপ-পরিচালক (সংস্থাপন) রাজীব হোসেন।

সর্বশেষ খবর