শনিবার, ২১ সেপ্টেম্বর, ২০১৯ ০০:০০ টা
নারায়ণগঞ্জে ট্রিপল মার্ডার

দায় স্বীকার ভগ্নিপতির

নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধি

নারায়ণগঞ্জ মহানগরের সিদ্ধিরগঞ্জে তুচ্ছ ঘটনার জের ধরে শ্যালিকা ও তার দুই মেয়েকে নৃশংসভাবে হত্যার ঘটনায় গ্রেফতারকৃত ঘাতক ভগ্নিপতি আব্বাস মিয়া আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করেছেন। শুক্রবার বিকালে নারায়ণগঞ্জ সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মিল্টন হোসেনের আদালতে ওই জবানবন্দি রেকর্ড করা হয়। এর আগের দিন বৃহস্পতিবার সকালে হত্যাকাণ্ডর পর বিকালেই সিদ্ধিরগঞ্জের পাওয়ার হাউস এলাকা থেকে তাকে গ্রেফতার করে ডিবির একটি টিম। রাতেই ওই হত্যাকাে র ঘটনায় নিহত গৃহবধূ নাসরিন বেগমের স্বামী সুমন মিয়া বাদী হয়ে সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলায় বাদী সুমন উল্লেখ করেন, তার স্ত্রীর বড় বোন ইয়াসমিনের সঙ্গে মাদকাসক্ত স্বামী আব্বাসের দীর্ঘদিন ধরে পারিবারিক কলহ চলছিল। বিভিন্ন সময় এই কলহের কারণে তার স্ত্রী নাসরিন আক্তার নাজনীনের বড় বোন ইয়াসমিনের পক্ষ নিয়ে কথা বলায় আব্বাসের সঙ্গে মনোমালিন্য হয়। গত ১৭ সেপ্টেম্বর রাতে আব্বাস ও তার স্ত্রী ইয়াসমিনের ঝগড়া হলে বাদী সুমনের শ্যালক হাসান বড় বোনের স্বামী আব্বাসকে মারধর করে এবং পরদিন সকালে হাসান তার বড় বোন ইয়াসমিন ও তার মেয়ে সুমাইয়াসহ সুমনের বাসায় বোন নাসরিনের কাছে চলে আসে। পরদিন ১৯ সেপ্টেম্বর বৃহস্পতিবার সকাল পৌনে ১০টায় সুমন কর্মস্থল সিদ্ধিরগঞ্জস্থ  জোনাকী পেট্রলপাম্প থেকে মিজমিজি সিআইখোলার আনোয়ারের মালিকানাধীন ৬তলা ভবনের ভাড়া বাসায় এসে স্ত্রী ও সন্তানদের গলা কাটা রক্তাক্ত লাশ এবং তার স্ত্রীর বড় বোনের প্রতিবন্ধী মেয়ে সুমাইয়াকে (১৫) রক্তাক্ত আহত অবস্থায় খাটের ওপর জীবিত দেখতে পান। পরে ঘটনাটি তার শ্যালক হাসানকে ফোন করে জানালে কর্মস্থল থেকে তার শ্যালক হাসান ও স্ত্রীর বড় বোন বাসায় আসে এবং হাসান জরুরি ভিত্তিতে সুমাইয়াকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সিদ্ধিরগঞ্জ থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আজিজুল হক জানান, আদালতে দেওয়া স্বীকারোক্তিতে আব্বাস তাকে চড় দেওয়া ও ঝগড়ার পর শ্যালিকার বাড়িতে এসে উপস্থিত হওয়া নিয়ে পুঞ্জীভূত ক্ষোভের থেকেই হত্যাকান্ডের ঘটনাটি ঘটিয়েছে জানান। বৃহস্পতিবার সকালে একটি ধারালো ছোরা নিয়ে ফ্ল্যাটে যায়। প্রথমে সুমনের স্ত্রী নাজমিন (২৮) ও তার দুই কন্যা সন্তান নুসরাত (৮) ও সায়মাকে (২) গলা কেটে হত্যা করে। এ সময় চিৎকার চেঁচামেচি করলে তার নিজের মেয়ে প্রতিবন্ধী সুমাইয়াকেও (১৫) ছোরা দিয়ে আঘাত করে গুরুতর জখম করে। নারায়ণগঞ্জ কোর্ট পুলিশের এসআই কামাল হোসেন জানান, ট্রিপল হত্যা মামলার আসামি আব্বাস দায় স্বীকার করে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। পরে তাকে জেলহাজতে প্রেরণ করার নির্দেশ দেয় আদালত। প্রসঙ্গত বৃহস্পতিবার সকালে নারায়ণগঞ্জ মহানগরের সিদ্ধিরগঞ্জের ১ নম্বর ওয়ার্ডের সিআই খোলা এলাকার আনোয়ার হোসেনের মালিকানাধীন বহুতল ভবনের ষষ্ঠ তলার একটি ফ্ল্যাটে নৃশংস ওই হত্যাকান্ডের ঘটনা ঘটে। নিহতরা হলো সুমন মিয়ার স্ত্রী নাসরিন বেগম (২৬), তার মেয়ে নুসরাত (৮) ও খাদিজা (২)। গুরুতর জখম নাসরিনের বোন ইয়াসমিনের মেয়ে সুমাইয়াকে (১৫) আশঙ্কাজনক অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। রাতে নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশ লাইনে সংবাদ সম্মেলনে তিন খুনের ঘাতক আব্বাস মিয়াকে হাজির করা হয়। ওই সময়ে জেলা পুলিশ সুপার হারুন অর রশিদ গণমাধ্যমকে জানান, ‘বৃহস্পতিবার সকালে হত্যাকান্ডের কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই দুপুরে আব্বাসকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তিনি ইতিমধ্যে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে হত্যাকান্ডের দায় স্বীকার করেছেন। ইতিমধ্যে তিনি জানিয়েছেন, শ্যালক তাকে একদিন চড় মেরেছে। এ কারণেই জিদ ছিল। প্রায়শই আব্বাসের স্ত্রী ও মেয়ে নাকি শ্যালক ও শ্যালিকার বাসায় চলে যেত। তাই তিনি মনে মনে ঠিক করে এ বাড়ির অস্তিত্বই রাখবে না যাতে করে আর এ বাড়িতে না আসতে পারে তার পরিবার।   এসপি জানান, তথ্য প্রযুক্তির মাধ্যমে স্থান শনাক্ত করে সিদ্ধিরগঞ্জ পাওয়ার হাউসের পাশের একটি কমিউনিটি সেন্টারের পর্দা ঘেরা টেবিলের নিচ  থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তিনি জানান, প্রথমে শ্যালিকাকে গলা কেটে হত্যা করে পরে একে একে শ্যালিকার দুই সন্তানকে হত্যা করেন। সবার শেষে নিজের প্রতিবন্ধী মেয়েকে সামনে  পেয়ে তাকেও কুপিয়ে জখম করে দ্রুত পালিয়ে যায়ন তিনি।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর