শনিবার, ২১ সেপ্টেম্বর, ২০১৯ ০০:০০ টা
কৃষি সংবাদ

মাচায় মাচায় লাউ শসা ঝিঙে

নিজস্ব প্রতিবেদক, খুলনা

মাচায় মাচায় লাউ শসা ঝিঙে

খুলনার রূপসা উপজেলার শেষ প্রান্তে নর্নিয়া শিয়ালীর বিল এলাকা। মাছের ঘের আর খাল পাড়ে যতদূর চোখ যায় সবুজের হাতছানি। মাটি থেকে প্রায় ৬/৭ ফুট উঁচু মাচায় সারি সারি গাছে ঝুলছে শসা, উচ্ছে, করলা, লাউ, বরবটি ও ঝিঙে। আগাম ফসল হিসেবে তরমুজ ও টমেটোর আবাদ করা হয়েছে। বিলের কয়েক হাজার একর জমিতে ঘেরের আইলে বছরের বারো মাসই সবজি চাষ করেন চাষিরা। কৃষি কর্মকর্তারা বলেন, মৌসুমে ধান ও মাছ চাষ করে একসময় যাদের পরিবার-পরিজন নিয়ে কষ্টে দিন কাটত, এখন ঘেরের আইলে সবজি চাষে তাদের মুখে হাসি ফুটেছে। বাজারে ভালো দাম পাওয়ায় সবজি বিক্রি করে আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছেন চাষিরা। জানা গেছে, লবণাক্ততার কারণে আগে খুলনা, বাগেরহাট, সাতক্ষীরা, নড়াইল অঞ্চলে বছরে একবার রোপা আমন ধান চাষ হতো। বাকি সময় জমি অনাবাদি পড়ে থাকত। এর মধ্যে খুলনায় ঘের করে শুরু হয় চিংড়ি চাষ। কিন্তু চিংড়ি চাষে লোকসান ও ধান উৎপাদনে ন্যায্যমূল্য না পাওয়ায় চাষিরা বিকল্প হিসেবে ঘেরের আইলে শসা, উচ্ছে, করলা, লাউ, বরবটি, বাঁধাকপি, ঝিঙে, সিম, সরিষা, সয়াবিন, সূর্যমুখী, মুগ, কুমড়া, তরমুজ ও টমেটো উৎপাদনের দিকে ঝুঁকে পড়েন। গত কয়েক বছরে সবজিতে ভালো ফলন ও লাভবান হওয়ায় আগ্রহ বাড়ছে চাষিদের। এতে সবজি উৎপাদনে ভরসা হয়ে ওঠার ইঙ্গিত দিচ্ছে দক্ষিণাঞ্চল। রূপসা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো. ফরিদুজ্জামান জানান, উপজেলার নর্নিয়া শিয়ালী বিল এলাকা থেকে প্রতি সপ্তাহে কয়েক হাজার টন সবজি ঢাকা, চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে পাঠানো হয়। বিশেষ করে প্রতি সোম, বুধ ও শুক্রবার স্থানীয় হাট থেকে শসা ও টমেটো কিনে ৪০/৫০টি ট্রাকে করে নিয়ে যান ব্যবসায়ীরা। তিনি বলেন, গ্রীষ্ম ও শীতকালীন সবজির পাশাপাশি বর্তমানে ঘেরের আইলে মাচা করে বর্ষাকালেও সবজির আবাদ হচ্ছে। অল্প জমিতে ফলন বেশি হওয়ায় কৃষকরা ঝুঁকছেন বিষমুক্ত সবজি চাষে। এদিকে বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট (ব্রি) চার বছরে মোট ২০টি নতুন ধানের জাত উদ্ভাবন করেছে। যার অর্ধেকই দক্ষিণাঞ্চলের উপযোগী লবণাক্ততা, খরা ও ঠান্ডা সহিষ্ণু জাত। একই সঙ্গে লবণাক্ত জমিতে ‘হাইব্রিড ভুট্টা’র নতুন চাষ পদ্ধতি উদ্ভাবন করেছেন গবেষকরা। বটিয়াঘাটায় দেবিতলায় কৃষকের জমিতে পরীক্ষামূলক ভুট্টা চাষে মিলেছে দারুণ সফলতা। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর, খুলনার উপ-পরিচালক পংকজ কান্তি মজুমদার বলেন, গত বছরে ধানের দাম না বেড়ে উল্টো কমেছে। এতে হতাশ হয়ে পড়েছেন কৃষকরা। তবে বিকল্প ফসল হিসেবে সবজি চাষ উপকূলীয় এলাকায় ব্যাপক সম্ভাবনা তৈরি করেছে। উৎপাদিত ফসল ন্যায্যমূল্যে বিক্রির ব্যবস্থা করতে পারলে সবুজ বিপ্লব ঘটবে এ অঞ্চলে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর