সোমবার, ২৩ সেপ্টেম্বর, ২০১৯ ০০:০০ টা

বিচারকদের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহারে সুপ্রিম কোর্টের নীতিমালা

বিচারিক সময়ে ফেসবুক নয়, জাতীয় ঐক্য পরিপন্থী কিছু প্রকাশ নয়, মামলা সংশ্লিষ্ট কাউকে বন্ধু নয়

নিজস্ব প্রতিবেদক

বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তাদের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যবহারের অনুসরণীয় নীতিমালা প্রকাশ করেছে সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন। এই নীতিমালা অনুযায়ী বিচারিক কর্মঘণ্টার মধ্যে ফেসবুকসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করতে পারবেন না বিচারকরা। এমন কাউকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বন্ধু হিসেবে যুক্ত করতে পারবে না, যিনি মামলার স্বার্থ বা মামলা পরিচালনা সংশ্লিষ্ট কেউ। এসব নির্দেশনা অমান্য করা পেশাগত অসদাচরণ হিসেবে গণ্য হবে। গতকাল সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে এ নিয়ে একটি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়েছে। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, বর্তমানে বাংলাদেশে তথ্য যোগাযোগ প্রযুক্তির ব্যাপক উন্নয়নের সুযোগে ইন্টারনেট ভিত্তিক সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহারের মাত্রা অতীতের তুলনায় অনেক গুণ বেড়েছে। তবে অতিমাত্রায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহারের ফলে এক ধরনের আসক্তি তৈরি হয়, যা ব্যক্তি জীবন ও পেশাগত জীবনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। বিজ্ঞপ্তিতে জাতীয় ঐক্য ও চেতনার পরিপন্থী, কোনো সম্প্রদায়ের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত লাগতে পারে এমন কোনো তথ্য, রাজনৈতিক মতাদর্শ বা আলোচনা সংশ্লিষ্ট কোনো বিষয়, কোনো সম্প্রদায়ের প্রতি বৈষম্যমূলক বা হেয় প্রতিপন্নমূলক কোনো তথ্য, কোনো ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান বা রাষ্ট্রকে হেয় প্রতিপন্ন করে এমন তথ্য, লিঙ্গ বৈষম্যমূলক কোনো তথ্য, জনমনে অসন্তোষ ও অপ্রীতিকর মনোভাব সৃষ্টি করতে পারে এমন কোনো তথ্য, মন্তব্য বা অনুভূতি প্রকাশ ও প্রচার পরিহার করতে বলা হয়েছে বিচারকদের।

এ ছাড়া কোনো মামলা সংক্রান্তে বিরূপ মন্তব্য বা ব্যক্তিগত অনুভূতি, নিয়ন্ত্রণকারী কর্তৃপক্ষ বা উপযুক্ত কর্তৃপক্ষের কোনো সিদ্ধান্তের বিষয়ে কোনো বিরূপ মন্তব্য বা ব্যক্তিগত অনুভূতি, সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিদের ছবি বা ভিডিও ক্লিপ, অপ্রাসঙ্গিক, অপ্রয়োজনীয়, মানহানিকর এবং নৈতিকতা পরিপন্থী কোনো স্ট্যাটাস, পোস্ট, লিংক, ছবি ইত্যাদিতে অন্যজনকে সংযুক্তকরণ (ট্যাগিং), আদান-প্রদান (শেয়ারিং), প্রকাশ ও প্রচার করতেও বারণ করা হয়েছে বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তাদের। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, প্রকাশিতব্য লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও ইত্যাদি নির্বাচন ও বাছাইয়ের ক্ষেত্রে সতর্ক থাকতে হবে। প্রকাশিত তথ্য-উপাত্তের যথার্থতা ও নির্ভরযোগ্যতা সম্পর্কে নিশ্চিত হতে হবে। ব্যক্তিগত ও পারিবারিক তথ্য আদান-প্রদান, প্রকাশ ও প্রচারের ক্ষেত্রে অবশ্যই সতর্কতা এবং বিচারকসুলভ মনোভব অবলম্বন করতে হবে। অপ্রয়োজনীয় বা গুরুত্বহীন বিষয়ে তথ্য, স্ট্যাটাস বা পোস্ট দেওয়া যাবে না। বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তাদের জন্য একটি পোর্টাল/গ্রুপ থাকতে পারে। যেখানে বিচারাধীন মামলার বিষয় এবং ব্যক্তিগত বিষয় ব্যতীত কেবল আইনগত বিষয়ে অ্যাকাডেমিক আলোচনা ও তথ্য আদান-প্রদান করা যাবে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহারের ক্ষেত্রে দায়িত্বশীল ও বিচারকসুলভ আচরণ করার পাশাপাশি রাষ্ট্রীয় অনুশাসন মেনে চলতেও বিচারকদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে বিজ্ঞপ্তিতে। এ ছাড়া সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কোনো তথ্য আদান-প্রদান ও বন্ধু নির্বাচনের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করে নিজ কর্মক্ষেত্রে মামলার স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বা মামলা পরিচালনার সঙ্গে জড়িত কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের ব্যক্তিগত অ্যাকাউন্টে বন্ধু হিসেবে গ্রহণ না করতেও সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশনায় বলা হয়েছে। বাস্তব ও স্বাভাবিক অবস্থায় সহকর্মীদের সঙ্গে মিথস্ক্রিয়া সংক্রান্ত নিয়ম-নীতি, করণীয় ও বর্জনীয় দিকসমূহের প্রতিফলন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও নিশ্চিত করতে বিচারকদের প্রতি নির্দেশনা দিয়েছে সর্বোচ্চ আদালত।

সর্বশেষ খবর