শিরোনাম
বুধবার, ২৫ সেপ্টেম্বর, ২০১৯ ০০:০০ টা
অষ্টম কলাম

পিয়াজের দাম কমাতে ঢাকার দিল্লি লবিং

৫০ দিনের মজুদ আছে দেশে

রুকনুজ্জামান অঞ্জন

পিয়াজের দাম কমাতে এবার দিল্লি লবিং শুরু করেছে সরকার। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে এরই মধ্যে দিল্লির বাংলাদেশ দূতাবাসকে (কমার্শিয়াল কাউন্সিলর) জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, বাংলাদেশের জন্য পিয়াজের রপ্তানি মূল্য কমানোর জন্য দেশটির সংশ্লিষ্ট দফতরের সঙ্গে যেন আলোচনা শুরু করা হয়। কলকাতায় বাংলাদেশ উপ হাইকমিশনকেও একই বার্তা দেওয়া হয়েছে। বাণিজ্য সচিব ড. জাফর উদ্দিন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, আমরা চারদিক থেকেই যোগাযোগ শুরু করেছি। পিয়াজ নিয়ে ভারতও সংকটে আছে। এরপরও রপ্তানি মূল্য কমানোর বিষয়ে আমাদের দিক থেকে প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। পাশাপাশি পণ্যটির সরবরাহ বাড়াতে মিয়ানমার, তুরস্ক ও মিসর থেকে আমদানি বাড়ানোর পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। গত ১৩ সেপ্টেম্বর ভারত পিয়াজের ন্যূনতম রপ্তানি মূল্য ৮৫০ মার্কিন ডলার বেঁধে দেয়। এই তথ্য বাংলাাদেশে ব্যবসায়ীদের কাছে পৌঁছতেই হঠাৎ বেড়ে যায় পণ্যটির দাম। ১৪ সেপ্টেম্বর সকালে যে পিয়াজের কেজি ছিল ৫০ টাকা বিকালে সেই পিয়াজ কিনতে হয়েছে ৭০ টাকা কেজি দরে। বিষয়টি নিয়ে গত ১৫, ১৮ ও সবশেষ ২৩ সেপ্টেম্বর বৈঠক করে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় বেশ কিছু সিদ্ধান্ত নেয়। তবে এরপরও পণ্যটির দাম এখনো কমেনি।

ভারত কী বাড়াতে পারে পিয়াজের দাম : বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সূত্রগুলো জানায়, বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা (ডব্লিউটিও)’র বিধান অনুযায়ী একটি দেশ সংকটকালীন পরিস্থিতিতে অভ্যন্তরীণ সুরক্ষার জন্য নিজস্ব পণ্যের আমদানি-রপ্তানির ওপর ‘সেফগার্ড মেজার’ গ্রহণ করলেও সংশ্লিষ্ট দেশগুলোকে আগাম নোটিস করতে হয়। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সাবেক অতিরিক্ত সচিব শওকত আলী ওয়ারেছি বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, আমরা যখন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে ছিলাম, তখনও পিয়াজের দাম বেড়েছিল। ২০১২-১৩ সালে দুই দেশের বাণিজ্য সচিব পর্যায়ের বৈঠক অথবা জয়েন্ট ট্রেড কমিশনের বৈঠকে আমরা বাংলাদেশের পক্ষ থেকে প্রস্তাব করেছিলাম যে, ভারত অভ্যন্তরীণ সুরক্ষার জন্য নিত্যপণ্যের রপ্তানি মূল্য বাড়ালেও তা যেন বাংলাদেশের জন্য কার্যকর না হয়। অর্থাৎ মানবিক দিক বিবেচনা করে বাংলাদেশকে যেন আগের রপ্তানি মূল্যেই পণ্যটি দেওয়া হয়। ভারত সেই সময় ইতিবাচক সাড়া দিয়েছিল। বাংলাদেশ চাইলে এখন সেই সূত্র ধরে ভারতের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যেতে পারে।  এ বিষয়ে জানতে চাইলে, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব শফিকুল ইসলাম জানান, ২০১২ সালে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে এরকম একটি বিষয় উপস্থাপন করা হয়েছিল, তবে এ বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত পাওয়া যায়নি। পিয়াজের রপ্তানি মূল্য ওই সময় উন্মুক্ত ছিল বলে দেশটির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছিল। ডব্লিউটিও’র বিধান সম্পর্কে জানতে চাইলে শফিকুল ইসলাম বলেন, ডব্লিউটিও’র বিধানটি ফুড সেফটির ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়। অর্থাৎ কোনো দেশ তার খাদ্য নিরাপত্তার স্বার্থে এ ধরনের পদক্ষেপ (নোটিস ছাড়াই রপ্তানিমূল্য বাড়ানো) গ্রহণ করতে পারে। ভারতও তাই করেছে। মজুদ ৫০ দিনের : গত ২৩ সেপ্টেম্বর ট্যারিফ কমিশন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে যে প্রতিবেদন দিয়েছে তাতে বলা হয়েছে, বর্তমানে বাংলাদেশে পিয়াজের দৈনিক চাহিদা ৬ হাজার মেট্রিকটন। দেশে এখন ৩ লাখ মেট্রিকটন পিয়াজ মজুদ রয়েছে। সে হিসেবে ৫০ দিনের পিয়াজ রয়েছে  দেশে। ট্যারিফ কমিশনের সদস্য আবু রায়হান আল-বেরুনী জানিয়েছেন, পিয়াজের যে মজুদ আছে তাতে প্রায় দুই মাস চলবে। আগামী এক মাসের মধ্যেই (অক্টোবর-নভেম্বর) নতুন পিয়াজ বাজারে আসবে। ফলে পিয়াজের কোনো সংকট হবে না, নতুন করে পণ্যটির দাম বাড়ারও কোনো আশঙ্কা নেই।

সর্বশেষ খবর