বৃহস্পতিবার, ২৬ সেপ্টেম্বর, ২০১৯ ০০:০০ টা

দাবির মুখে বাস্তবায়নের আগেই সংশোধন হচ্ছে সড়ক আইন

বিশেষ প্রতিনিধি

পরিবহন মালিক ও শ্রমিকদের দাবির মুখে বাস্তবায়নের আগেই সংশোধন হচ্ছে ‘সড়ক পরিবহন আইন, ২০১৮’। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর নেতৃত্বে গঠিত এ-সংক্রান্ত উপকমিটি আইনটি সংশোধনের সুপারিশ করতে যাচ্ছে।

গতকাল সচিবালয়ে পরিবহন মালিক ও শ্রমিক নেতাদের সঙ্গে উপকমিটির সভা শেষে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ও আইনমন্ত্রী আনিসুল হক সড়ক পরিবহন আইন সংশোধনের সুপারিশসংবলিত প্রতিবেদন জাতীয় সড়ক নিরাপত্তা কাউন্সিলের কাছে দাখিল করতে যাচ্ছেন বলে জানিয়েছেন। গত ৮ অক্টোবর ‘সড়ক পরিবহন আইন, ২০১৮’-এর গেজেট জারি হয়। তবে পরিবহন মালিক-শ্রমিকদের বাধার মুখে এখনো আইনটি বাস্তবায়ন করেনি সরকার। নতুন সড়ক পরিবহন আইনের বিভিন্ন ধারার বিরোধিতা করে আসছেন পরিবহন মালিক-শ্রমিকরা। তারা আইনের বিভিন্ন ধারা বাতিলের দাবিতে আন্দোলনও করেন। মালিক-শ্রমিকদের দাবির মধ্যে রয়েছে- সড়ক পরিবহন আইনের সব ধারা জামিনযোগ্য করা, সড়ক দুর্ঘটনায় শ্রমিকের অর্থদ- ৫ লাখ টাকার বিধান বাতিল, ড্রাইভিং লাইসেন্স পাওয়ার শিক্ষাগত যোগ্যতা পঞ্চম শ্রেণি করা ইত্যাদি। এ পরিপ্রেক্ষিতে গত ১৭ ফেব্রুয়ারি জাতীয় সড়ক নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠকে সড়ক আইন বাস্তবায়নে চ্যালেঞ্জ নির্ধারণ ও বাস্তবসম্মত সমাধানে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর নেতৃত্বে এ কমিটি করা হয়। কমিটিতে সদস্য হিসেবে রয়েছেন আইনমন্ত্রী ও রেলমন্ত্রী। গতকাল দুপুরে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের সভাপতিত্বে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত সভায় আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন, বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের কার্যকরী সভাপতি শাজাহান খান, বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সভাপতি মসিউর রহমান রাঙ্গা উপস্থিত ছিলেন। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা একটা প্রতিবেদন তৈরি করব। সেই প্রতিবেদন মূল কমিটির (জাতীয় সড়ক নিরাপত্তা কাউন্সিল) কাছে হস্তান্তর করব। মূল কমিটি পরবর্তী কার্যক্রমের বিষয়ে ব্যবস্থা নেবে।’ তিনি বলেন, ‘যেসব অসুবিধা ছিল, যেগুলো নিয়ে এত দিন তিন-চারটা সভা করেছি, সেই সভায় একটা সিদ্ধান্তে এসে আজ সংক্ষিপ্ত আকারে প্রতিবেদন পাঠাতে পারব। চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জাতীয় সড়ক নিরাপত্তা কাউন্সিলেই হবে।’ পরিবহন মালিক-শ্রমিকদের আইনে থাকা শাস্তির মেয়াদ কমানোর দাবি ছিল- এ বিষয়ে জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘শুধু সাজা কমানো নয়, অনেক দাবি ছিল। সব নিয়ে আলোচনা হয়েছে। সব বিশ্লেষণ করে যে সিদ্ধান্তে যাচ্ছি, আজ তা চূড়ান্ত করেছি। এ ছাড়া আমাদের পাশের দেশে এবং অন্য দেশে এ আইনগুলোয় (সড়ক পরিবহন) কী আছে, সেখানে কী ধরনের শাস্তির বিধান রয়েছে। এগুলো আমরা দেখেছি, সেগুলো এনে পর্যালোচনা করেছি। সে অনুযায়ী সিদ্ধান্তটা নিতে যাচ্ছি।’

বাধার কারণে সড়ক পরিবহন আইন বাস্তবায়ন হচ্ছে না, যারা বাধা দিচ্ছে তারা কি সরকারের চেয়ে শক্তিশালী- এ বিষয়ে আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, ‘আমরা আইনটি যখন তৈরি করেছি, তখন তাদের (পরিবহন মালিক-শ্রমিক) কিছু দাবি-দাওয়া ছিল। সেগুলো সম্পূর্ণভাবে আইনে আসেনি, এটি তাদের ডিমান্ড ছিল। সেজন্য পাস হওয়া আইন প্রয়োগের কোথায় সমস্যা হচ্ছে, কেন হচ্ছে তা আমরা দেখার জন্য বসেছি।’ এর মানে আইনটি আবার সংশোধন হতে পারে কিনা- জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, ‘হ্যাঁ, এটা হতে পারে। যদি জাতীয় সড়ক নিরাপত্তা কাউন্সিল মনে করে এ আইনটি সংশোধন হতে পারে তাহলে তারা প্রক্রিয়া অনুসরণ করে সংসদে নিয়ে যাবে।’ সড়ক পরিবহন আইনের অপরাধ জামিন-অযোগ্য করার বিষয়ে শিক্ষার্থীরা আন্দোলন করেছেন। তবে পরিবহন শ্রমিকরা এটাকে জামিনযোগ্য করার দাবি জানিয়ে আসছেন। আপনাদের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী জামিনযোগ্য করলে তা শিক্ষার্থীদের আন্দোলনকে অবজ্ঞা করা হয় কিনা- এ বিষয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘আমি বলেছি পাশের দেশগুলো এ আইন কীভাবে প্রয়োগ করছে, বিধান কী কী রয়েছে তা আমরা দেখেছি। আমরা সেগুলো বিশ্লেষণ করে, স্টেকহোল্ডাররা কী চাচ্ছে এগুলো আমরা বিস্তারিতভাবে দেখেছি। সামঞ্জস্যপূর্ণ অবস্থানে যাওয়ার জন্য হয়তো আমরা একটা সুপারিশ করতে পারি। এখানে জামিন পাবে কি পাবে না, কারও শাস্তি আরও বৃদ্ধি হবে কি হবে না, তা সড়ক নিরাপত্তা কাউন্সিলের ব্যাপার।’ আইনমন্ত্রী বলেন, ‘জামিনযোগ্য হচ্ছে, এ কথাটা বলা ঠিক হবে না। দেখুন, একটা আইন করার পর সংসদে পাস হওয়ার পরও যখন প্রয়োগ করা হয় কিছু সুবিধা-অসুবিধার কথা উঠে আসে। আমরা চাই এটা (সড়ক পরিবহন আইন) সর্বজনীন প্রয়োগে যাতে কোনো অসুবিধা না হয়। আমরা এ আইনের মাধ্যমে যে সমস্যাগুলো দূর করার চেষ্টা করছিলাম তা যাতে আরও ভালোভাবে হয়, সেজন্য জাতীয় সড়ক নিরাপত্তা কাউন্সিল আমাদের এই কমিটির কাছে দায়িত্ব দিয়েছিল।’ আনিসুল হক বলেন, ‘আমরা অনেক সভা করেছি, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাব-কমিটির আহ্বায়ক। তিনি যা বলেছেন, আমরা সব দিক বিবেচনা করে একটা সুপারিশ করেছি। যদি জাতীয় সড়ক নিরাপত্তা কাউন্সিল গ্রহণ করে তাহলে এ আইনের যে পরিবর্তনগুলো করতে হবে অবশ্যই তা একটা প্রক্রিয়ার মাধ্যমে গিয়ে সর্বশেষ প্রক্রিয়া হচ্ছে জাতীয় সংসদে গিয়ে পাস হবে।’ আইনমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের বক্তব্য হচ্ছে, এ আইনটা সবার জন্য গ্রহণযোগ্য একটা আইন এবং এ আইনটার যে উদ্দেশ্য ছিল সেটাই যেন আমরা এ আইনের (পরিমার্জিত আইন) মাধ্যমে সাধন করতে পারি সেটাই আমাদের চেষ্টা।’

সর্বশেষ খবর