শুক্রবার, ২৭ সেপ্টেম্বর, ২০১৯ ০০:০০ টা

পরিবারপ্রধানের দায়িত্বে নারীর অংশগ্রহণ বাড়ছে

১০০টির মধ্যে ১৪ পরিবারপ্রধান নারী

জিন্নাতুন নূর

পরিবারপ্রধানের দায়িত্বে নারীর অংশগ্রহণ বাড়ছে

বাংলাদেশে পরিবারের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে নারীর অংশগ্রহণ বৃদ্ধি পাচ্ছে। বর্তমানে প্রতি ১০০টি পরিবারের মধ্যে অন্তত ১৪টি পরিবারের প্রধান নারী। গত বছর জুন মাসে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) প্রকাশিত জরিপে এমনটি উল্লেখ করা হয়। অথচ এক দশক আগেও নারীপ্রধান পরিবারের হার ছিল মাত্র ১০ শতাংশের মতো। সংশ্লিষ্টদের মতে, নারীপ্রধান পরিবারের ক্ষেত্রে বর্তমান ধারা বজায় থাকলে ২০৩০ সালের দিকে নারীপ্রধান পরিবারের হার ২৫ শতাংশে গিয়ে দাঁড়াবে। বিবিএসের জরিপ অনুযায়ী, ২০১১ সালে নারীপ্রধান পরিবারের হার ছিল ১৩.৩ শতাংশ, যা সর্বশেষ বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়ায় ১৪.২ শতাংশে। গ্রামে নারীপ্রধান পরিবারের হার বেশি। তবে শহরে নারীপ্রধান পরিবারের সংখ্যা কমছে। পরিবারে আয় করেন এমন নারীর সংখ্যা ২০০৫ সালে ছিল ১২.৯ শতাংশ, যা ২০১০ সালে এসে দাঁড়ায় ১৫ শতাংশে। বর্তমানে দেশের ৮৫.৮ শতাংশ পরিবারের প্রধান পুরুষ। এর মধ্যে শহরে ৮৫.৬ শতাংশ এবং গ্রামে ৮৬.২ শতাংশ পরিবারের প্রধান ব্যক্তি পুরুষ। অন্যদিকে দেশের ১৪.২ শতাংশ পরিবারপ্রধানের দায়িত্বে আছেন নারীরা। এর মধ্যে শহরের ১৩.৮ শতাংশ আর গ্রামের ১৪.৪ শতাংশ পরিবারের প্রধান নারী। মূলত বিধবা ও বিবাহবিচ্ছেদের শিকার নারীরা পরিবারের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব নিচ্ছেন। দেখা যাচ্ছে, নারীপ্রধান পরিবারের ক্ষেত্রে বিভাগগুলোর মধ্যে এগিয়ে আছে চট্টগ্রাম। এর পরই আছে সিলেট, ঢাকা ও খুলনা। গাইবান্ধার সুফিয়া ঢাকার মিরপুরে একটি গার্মেন্টে কাজ করেন। ১৫ বছর বয়সে বিয়ে হয় সুফিয়ার। বিয়ের দুই বছর পরই সুফিয়ার স্বামী এক কন্যাসন্তানসহ সুফিয়াকে রেখে পালিয়ে যান। এরপর সন্তান নিয়ে ঢাকায় এসে গার্মেন্টে কাজ শুরু করেন তিনি। সুফিয়ার মেয়ে এখন উচ্চ মাধ্যমিকে পড়ছে। পোশাক কারখানায় কাজ করে মেয়েকে লেখাপড়া শিখিয়ে নিজেই মানুষ করছেন। অপরদিকে ঢাকার একটি মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানিতে সেলস এক্সিকিউটিভ রাইনা হাসান। স্কুলশিক্ষক বাবার চাকরি শেষ হলে রাইনা নিজেই পরিবারের হাল ধরেন। পরিবারে উপার্জনকারী একমাত্র ব্যক্তি রাইনা। ছোট ভাইকে একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি করিয়েছেন। আর সংসারের প্রয়োজনে মায়ের দেওয়া তালিকা অনুযায়ী সব বাজার-সদাই রাইনা একাই করেন। সুফিয়া-রাইনাদের মতো এমন আরও অনেক নারী আছেন, যারা স্বেচ্ছায়, আবার কখনো বাধ্য হয়ে সংসারের হাল ধরছেন। বিবিএসের হিসাবে যেসব পরিবারের প্রধান নারী, তাদের মধ্যে ৮৪ শতাংশই বিধবা কিংবা স্বামীর সঙ্গে তাদের বিচ্ছেদ হওয়ায় তারা পরিবারের প্রধান ব্যক্তি হিসেবে দায়িত্ব নেন। আবার অবিবাহিত মেয়েরা, যারা চাকরিজীবী বা বিভিন্ন পেশায় জড়িত, তারাও এখন পরিবার পরিচালনার ক্ষেত্রে স্বেচ্ছায় দায়িত্ব নিচ্ছেন। দেখা যায়, নারীপ্রধান পরিবারের ২১ শতাংশ কর্ত্রীর বয়স ১৫ বছর বা এরও কম। তথ্যমতে, নারীপ্রধান পরিবারের নারীরা পেশাভিত্তিক বিভিন্ন কাজের বাইরে বিক্রয়কর্মী, চাকরিজীবী, কৃষিকাজ, ব্যবসা, মৎস্য খাত, উৎপাদন শিল্পসহ বিভিন্ন মাধ্যমে কাজ করেন। গড়ে গ্রামাঞ্চলে একজন নারীর মাসে আয় হয় ৮ হাজার ৪১৩ টাকা আর শহরাঞ্চলে আয় হয় ১৪ হাজার ৪৮৪ টাকা। অর্থনীতিবিদ ড. নাজনীন আহমেদ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, অনেক ক্ষেত্রে বাধ্য হয়ে, আবার কিছু ক্ষেত্রে স্বেচ্ছায় পরিবারের প্রধান ব্যক্তি হিসেবে দায়িত্ব নিচ্ছেন নারী। তবে স্বেচ্ছায় যদি পরিবার পরিচালনার দায়িত্ব নেন নারী, একে নারীর ক্ষমতায়ন বলা হবে। কিন্তু বাধ্য হয়ে যে নারীরা পরিবারের হাল ধরছেন, তারা নানারকম বিভাজন ও সামাজিকভাবে হেনস্তার শিকার হচ্ছেন।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর