শুক্রবার, ২৭ সেপ্টেম্বর, ২০১৯ ০০:০০ টা

জামালপুরের সেই ডিসি বরখাস্ত

হয়েছে বিভাগীয় মামলাও

নিজামুল হক বিপুল

নারী কেলেঙ্কারির ঘটনায় বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওএসডি) জামালপুরের সাবেক ডিসি আহমেদ কবীরকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে সরকার। একই সঙ্গে তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলাও করা হয়েছে। তদন্ত কমিটির রিপোর্টে তার বিরুদ্ধে নারী কেলেঙ্কারির অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ার পর সরকার এই পদক্ষেপ নিল। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। সূত্র জানায়, জামালপুরের সাবেক ডিসি আহমেদ কবীরের সঙ্গে তারই দফতরের নারী অফিস সহকারীর শারীরিক সম্পর্কের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়। এরপর তার বিরুদ্ধে তাৎক্ষণিক তদন্তের জন্য ময়মনসিংহের বিভাগীয় কমিশনারকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। প্রাথমিক তদন্তে ঘটনার সত্যতা পাওয়ার পর আহমেদ কবীরকে জামালপুর থেকে প্রত্যাহার করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওএসডি) করা হয়।

এর পরপরই ঘটনা সরেজমিন পুঙ্খানুপুঙ্খ তদন্তের জন্য মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ একজন যুগ্ম সচিবের নেতৃত্বে একটি কমিটি গঠন করে। ওই কমিটি প্রায় তিন সপ্তাহ সময় নিয়ে ঘটনা তদন্ত করে ২২ সেপ্টেম্বর প্রতিবেদন জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে জমা দেয়। কমিটিকে ভিডিও-সংক্রান্ত বিষয়ে তদন্ত করার নির্দেশ দেওয়া হলেও কমিটি সার্বিক একটি তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়। এতে কমিটি ঘটনার সত্যতা তুলে ধরে বেশ কয়েকটি সুপারিশ করে। কমিটির সুপারিশে মাঠ প্রশাসনে মনিটরিং দুর্বলতার বিষয়টি তুলে ধরা হয়েছে। কেন্দ্রীয়ভাবে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে মাঠ প্রশাসনের বিষয়গুলো যথেষ্ট গুরুত্ব দিয়ে দেখা হলেও বিভাগীয় কমিশনারদের অফিস যথাযথ গুরুত্ব দিয়ে তা পালন করতে পারছে না। কমিটি তাদের প্রতিবেদনে মনিটরিং আরও জোরদার করার সুপারিশ করেছে।

এ ছাড়া কমিটি তাদের প্রতিবেদনে বলেছে, ডিসির কাজের ধরন অনুযায়ী বিশ্রাম নেওয়ার জন্য খাসকামরা থাকতেই পারে। কিন্তু সেখানে দরজা বন্ধ করে খাট-পালঙ্ক না রেখে ইজি চেয়ার বা ডিভানের মতো কোনো আসবাবপত্র রাখা যেতে পারে।

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের গঠিত কমিটির প্রতিবেদন পাওয়ার পর জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় ২৫ সেপ্টেম্বর বুধবার জামালপুরের সাবেক ডিসি আহমেদ কবীরকে সাময়িক বরখাস্ত করে আদেশ জারি করেছে। একই সঙ্গে তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলাও করা হয়েছে। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের একজন পদস্থ কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ডিসির নারী কেলেঙ্কারির ঘটনায় সরকারের প্রশাসনযন্ত্রের ভাবমূর্তি ব্যাপকভাবে ক্ষুণœ হয়েছে। এটিকে সরকার সর্বোচ্চ গুরুত্বের সঙ্গে নিয়ে অভিযুক্তের বিরুদ্ধে দ্রুততার সঙ্গে ব্যবস্থা নিচ্ছে এবং সেটি দ্রুততার সঙ্গেই করা হচ্ছে। এর প্রমাণ হচ্ছে, ইতিপূর্বে প্রশাসনের কোনো কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ নিয়ে এত দ্রুততার সঙ্গে ব্যবস্থা নেয়নি। এবারই ব্যতিক্রম ঘটল। প্রশাসনের কর্মকর্তারা মনে করছেন, জামালপুরের সাবেক ডিসি যে অপরাধ করেছেন, তাতে প্রশাসনের গায়ে কালি মেখে দিয়েছেন। তাই প্রশাসনের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকেই বিষয়টি দ্রুত নিষ্পত্তি এবং অভিযুক্তের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়। এ কারণেই দ্রুত তদন্ত কমিটি করে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, প্রশাসনের ভাবমূর্তি ক্ষুণেœর জন্য অভিযুক্ত ডিসিকে সর্বোচ্চ শাস্তিই ভোগ করতে হবে।

প্রসঙ্গত, ২২ আগস্ট জামালপুরের তৎকালীন ডিসি আহমেদ কবীর ও তার অফিস সহায়কের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। এর পরিপ্রেক্ষিতে ২৫ আগস্ট ডিসিকে প্রত্যাহার করে বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওএসডি) করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে পদায়ন করা হয়।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর