সোমবার, ৩০ সেপ্টেম্বর, ২০১৯ ০০:০০ টা

লাঠি হাতে শক্তির লড়াই

বাবুল আখতার রানা, নওগাঁ

লাঠি হাতে শক্তির লড়াই

গ্রামীণ সংস্কৃতির একটি বড় অংশ লাঠিখেলা। এই খেলাটি এখনো বেশ জনপ্রিয়। আবহমানকাল ধরে নওগাঁ জেলায় বিনোদনের খোরাক জুগিয়েছে লাঠিখেলা। এ অঞ্চলে বিভিন্ন ধরনের লাঠিখেলা রয়েছে। তার মধ্যে অন্যতম সড়কি, ফড়ে, ডাকাত, বানুটি, গ্রুপ, নরি বারী, দা এবং ঢেঁকি খেলা। কিন্তু কালের বিবর্তনে মানুষ আজ ভুলতে বসেছে খেলাটি। ঢোল আর লাঠির তালে তালে নাচানাচি। অন্যদিকে প্রতিপক্ষের হাত থেকে আত্মরক্ষার কৌশল অবলম্বনের প্রচেষ্টা সম্বলিত টানটান উত্তেজনার খেলাটির নাম লাঠিখেলা। লাঠিখেলা অনুশীলনকারীকে লাঠিয়াল বলা হয়। এ খেলার জন্য লাঠি সাড়ে চার-পাঁচ ফুট লম্বা। তবে তা  প্রায় তৈলাক্ত। মহাদেবপুর উপজেলার সফাপুর ইউনিয়নের বিনোদপুর গ্রামের আবদুল মজিদ (৫২)। ছোটবেলা থেকেই লাঠি খেলতেন। গণেশপুরের জব্বার ফকিরের কাছ থেকে তিনি লাঠিখেলা শিখেছেন। তিনিই ছিলেন তার লাঠি খেলার ওস্তাদ। এ মেলার আরেকজন ঢুলি ছিলেন মজিবরের ছেলে হাসেম (৩৫)। তার বাড়ি গণেশপুর শেখিপাড়ায়। তাদের পূর্ব-পুরুষের কাছ থেকেই মাত্র ১০-১২ বছর বয়সেই লাঠিখেলা শিখেছেন তারা। ১২-১৪ বছর আগে লাঠিখেলাগুলো জেলার বিভিন্ন অঞ্চলে খেলে থাকতেন। কোনো মাঠে খেলা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা শুনলে আশপাশের গ্রামের শত শত মানুষ আসত। এক সময় দেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট খারাপ থাকার কারণে এ খেলাগুলো প্রায় বন্ধ হয়ে যায়। এরপর থেকে কৃষিকাজের সঙ্গে যুক্ত হয়ে যান খেলোয়াড়রা।

গণেশপুর গ্রামের লাঠিয়াল মজিবর রহমান জানান, প্রতি বছর এ দিনে আমরা লাঠি খেলে থাকি। এটি এলাকার মানুষের সংস্কৃতি। এলাকার মানুষকে আনন্দ দিতে গ্রামীণ ঐতিহ্যবাহী লাঠিখেলার আয়োজন করা হয়। এ উপলক্ষে কাঞ্চন বাজারের পূর্বে রাস্তা সংলগ্ন মাঠে বিকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত লাঠিখেলা হয়। এ উপলক্ষে এলাকায় জামাই-মেয়েসহ অন্য আত্মীয়স্বজনদের দাওয়াত করা হয়। 

মেলা কমিটির সভাপতি জিল্লুর রহমান, সাধারণ সম্পাদক শাহজাহান আলী এবং কাঞ্চন বাজার বণিক সমিতির সভাপতি রফিকুল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক আবদুল জলিল জানান, লাঠিখেলাটি অত্র এলাকায় এখনো জনপ্রিয়তার শীর্ষে। আজ থেকে কয়েক বছর আগে এ এলাকায় মেলার এক সপ্তাহ আগে থেকেই প্রতিটি গ্রামে লাঠিখেলা হতো। লাঠিখেলা আর ঢোলের শব্দে কেউ পাশে থেকে কাউকে ডাকলেও শোনা যেত না।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর