সোমবার, ৩০ সেপ্টেম্বর, ২০১৯ ০০:০০ টা

রাজশাহীতে থানা থেকে বের হয়েই গায়ে আগুন তরুণীর

মামলা না নেওয়ার অভিযোগ

নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী

রাজশাহীতে থানা থেকে বের হয়েই গায়ে আগুন তরুণীর

হঠাৎ থানা থেকে বের হয়েই কাছের একটি দোকান থেকে কেরোসিন কিনে আবার থানার সামনে আসেন ১৯ বছর বয়সী এক তরুণী। থানার সামনেই নিজের গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেন তিনি। মুহূর্তে তার শরীরের অধিকাংশ পুড়ে যায়। আশপাশের লোকজন ছুটে এসে পানি ঢেলে আগুন নেভান। পরে প্রায় অচেতন ওই তরুণীকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে ভর্তি করা হয়। অবস্থার অবনতি হলে তাকে পুলিশ পাহারায় ঢাকায় পাঠানো  হয়েছে। শনিবার দুপুরে নগরীর শাহ মখদুম থানার সামনে এমন ঘটনা ঘটে। দগ্ধ ওই তরুণীর নাম লিজা। তিনি গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার প্রধানপাড়া এলাকার আবদুল লতিফ বিশ্বাসের পালিত মেয়ে। লিজা রাজশাহী মহিলা কলেজের বাণিজ্য দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী। নগরীর পবাপাড়া এলাকার একটি মেসে থাকতেন তিনি।

লিজার সহপাঠী ও তার বান্ধবীরা জানান, ২০ জানুয়ারি লিজার সঙ্গে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার নাচোল উপজেলার খানদুরা গ্রামের খোকন আলীর ছেলে রাজশাহী সিটি কলেজের দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্র সাখাওয়াত হোসেনের (২০) বিয়ে হয়। পরিবারকে না জানিয়েই লিজাদের গোবিন্দগঞ্জের বাড়িতে গিয়ে বিয়ে করেন সাখাওয়াত। সাখাওয়াতও রাজশাহীতে একটি ছাত্রাবাসে থাকেন। জানা গেছে, বিয়ের পর কিছুদিন স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে স্বাভাবিক সম্পর্ক থাকলেও পরে দ্বন্দ্ব শুরু হয়। পরিবারের সম্মতি না পাওয়ায় লিজাকে সাখাওয়াত নিজের বাড়িতে নিয়ে যেতে পারেননি। একপর্যায়ে সাখাওয়াত স্ত্রী লিজার সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ করে গ্রামের বাড়িতে গিয়ে থাকতে শুরু করেন। জুলাই মাসে সাখাওয়াতের খোঁজে চাঁপাইনবাবগঞ্জের নাচোলে যান লিজা। স্বামীর বাড়ি খুঁজে লিজা সেখানে গেলে সাখাওয়াত বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে যান। ওই সময় লিজা নাচোল থানায় গিয়ে পুলিশের কাছে অভিযোগ করেন। পুলিশ সাখাওয়াত ও তার বাবাকে ডেকে এনে তাদের সঙ্গে লিজাকে পাঠিয়ে দেন। এরপর কয়েক দিন একসঙ্গে থাকলেও রাজশাহীতে ফিরে আবারও সাখাওয়াত স্ত্রীর সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ করে দেন।

অভিযোগ থেকে জানা গেছে, কয়েকদিন আগে লিজার সঙ্গে দেখা করেন সাখাওয়াতের এক ভগ্নিপতি। ওই সময় সাখাওয়াতও সঙ্গে ছিলেন। তারা উভয়ই লিজাকে মারধর করেন এবং এ বিষয়ে অভিযোগ করলে তাকে প্রাণে মেরে ফেলার হুমকি দেন। সেই থেকে লিজা নগরীর শাহ মখদুম থানায় অভিযোগ জানানোর চেষ্টায় কয়েকদিন ধরে ঘুরছিলেন। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, লিজা শনিবার দুপুরে স্বামীর বিরুদ্ধে অভিযোগ দিতে আবারও শাহ মখদুম থানায় যান। সেখানে ডিউটি অফিসারকে অনুরোধ করেন তার অভিযোগ নথিভুক্ত করার জন্য। ওসির সঙ্গে শেষে দেখা করেন লিজা। কিন্তু সংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্মকর্তারা তাকে পাগল বলে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করেন। এতে লিজা অপমানিত হয়ে ফিরে থানার সামনে নিজের গায়ে আগুন ধারিয়ে দেন। রাজশাহী মেডিকেলের বার্ন ইউনিটের প্রধান ডা. অসীম কুমার জানান, লিজার শরীরের বেশির ভাগই পুড়ে গেছে। তার অবস্থা আশঙ্কাজনক। তার শ্বাসনালি বেশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এদিকে অভিযোগ দিতে গিয়ে অপমানিত হয়ে ফিরে থানার সামনে গায়ে আগুন দেওয়ার অভিযোগ সম্পর্কে শাহ মখদুম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাসুদ পারভেজ বলেন, ‘লিজার অভিযোগ শোনা হয়েছিল। তার অভিযোগ মামলা আকারে রেকর্ডের নির্দেশও দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু তিনি হঠাৎ করেই থানা থেকে বের হয়ে নিজের গায়ে আগুন ধরিয়ে দেন।’ অন্যদিকে সহপাঠীরা জানান, পুলিশের কাছে অভিযোগ দিতে ব্যর্থ হয়েই লিজা আত্মহত্যার চেষ্টা করেছেন।

সর্বশেষ খবর