মঙ্গলবার, ১ অক্টোবর, ২০১৯ ০০:০০ টা

জীববৈচিত্র্যে মুগ্ধ বিদেশি পর্যটক

সাফারি ওয়ার্ল্ড ব্যাংকক

মাহমুদ আজহার, ব্যাংকক (থাইল্যান্ড) থেকে

জীববৈচিত্র্যে মুগ্ধ বিদেশি পর্যটক

ব্যাংকক শহরের পাশেই মিনবুড়ি এলাকায় বিস্তীর্ণ ভূমিতে গড়ে তোলা হয়েছে বিশে^র অন্যতম বিনোদন কেন্দ্র সাফারি ওয়ার্ল্ড ব্যাংকক। প্রায় এক হাজার একর জমিতে গড়ে ওঠা এই বিনোদন কেন্দ্র বিশে^র বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা পর্যটকদের আকর্ষণ করে। ব্যাংককে আসা পর্যটকদের বড় অংশই সাফারি ওয়ার্ল্ড ঘুরে যান। প্রায় ৮ কিলোমিটার লম্বা সাফারি পার্ক গাড়িতে চড়ে ঘুরতে সময় লাগে ৪৫ মিনিট। হিংস্র জীবজন্তু অধ্যুষিত অঞ্চলগুলোতে গাড়ি ছাড়া চলাচল নিষিদ্ধ করে দেওয়া হয়েছে। বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে প্রচুর পশু-পাখি এখানে সংরক্ষণ করে রাখা হয়েছে। এমন কোনো প্রাণী নেই, যা এই সাফারি পার্কে নেই। বাঘ, সিংহ, হরিণ, উট, জিরাফ, জেব্রা, গ ার, হাতি, ময়ূরসহ কয়েক হাজার পশু-পাখির অবাধ বিচরণ ক্ষেত্র এ পার্ক। সাফারি ওয়ার্ল্ডের শুরুতেই রয়েছে বিভিন্ন জাতের পাখি, রিভার সাফারি ও বিভিন্ন শো। প্রথমে ঢুকতেই চোখে পড়বে রংবেরঙের ম্যাকাউ। হাতের ওপর বসিয়ে ছবি তোলার সুযোগ রয়েছে সেখানে। কিছু দূর এগোতেই ফুড ও জুস কর্নার চোখে পড়বে। জুস কর্নারের ঠিক বাঁ দিকেই খাঁচার ভিতর রাখা আছে কিছু বাঘশাবক। বাঘের সঙ্গে ছবি তুলতে চাইলে কিছু টাকা গুণতে হয়। অনেক পর্যটকই সেখানে বাঘ কোলে নিয়ে ফিডারে দুধ খাওয়ানোর ছবি তোলেন। জানা যায়, ১৯৮৮ সালে শুরুতে থাইল্যান্ডের রাজধানী ব্যাংকক শহরের মিনবুড়ি এলাকার অব্যবহৃত ভূমিতে প্রায় ৪৮০ একর জমি নিয়ে এই সাফারি পার্ক গড়ে তোলা হয়। পরে এটাকে আরও বড় করা হয়। বর্তমানে এ পার্কে প্রায় এক হাজার একর জমি আছে। সম্পূর্ণ বেসরকারি উদ্যোগে গড়ে তোলা এই বিনোদন কেন্দ্রটি এখন বিশ্বের অন্যতম সেরা চিড়িয়াখানা। সাফারি ওয়ার্ল্ডে রয়েছে মেরিন পার্ক, পশু পাখির হাসপাতাল, বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে পাখিদের অবাধ বিচরণ ক্ষেত্র।

গাড়িতে করে এক প্রাণীর আবাসস্থল থেকে আরেক প্রাণীর আবাসস্থলে যাচ্ছেন পর্যটকরা। প্রাণীদের আবাস এলাকায় পৌঁছলে অটোমেটিক ইলেকট্রিক্যাল গেট খুলে যাচ্ছে আর গাড়ির ভিতরে বসেই জঙ্গলের সৌন্দর্য অবলোকন করেন দর্শনার্থীরা। গাড়ির খুব কাছাকাছি ঘুরছে পশু-পাখিগুলো। দেখে মনে হবে না এই চিড়িয়াখানার পশুদের দেখতে এসেছে মানুষ, বরং পশুরা দেখছে চলমান খাঁচায় বন্দী মানুষকে। জানা যায়, একই উদ্দেশ্য নিয়ে বিশ্বের সর্ববৃহৎ সমুদ্র  সৈকত কক্সবাজারের চকরিয়ায় ১৯৯৮ সালে ২ হাজার ২২৪ একর ভূমি নিয়ে যাত্রা শুরু করে ‘বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্ক’। এ সাফারি পার্কই হয়ে উঠতে পারত বিশ্বের অন্যতম একটি পর্যটন কেন্দ্র। সরকারের আয়ের অন্যতম একটি উৎস হতে পারত এই সাফারি পার্ক। কিন্তু সঠিক পরিকল্পনা ও অর্থাভাবে এখানে গড়ে তোলা হয়নি পর্যাপ্ত অবকাঠামো। তৈরি করা হয়নি অভ্যন্তরীণ ভালো রাস্তাঘাট। সাফারি ওয়ার্ল্ডে সকাল ১০টা থেকে শুরু হয়ে বিকাল ৫টা পর্যন্ত বিভিন্ন শো চলে।

এর রয়েছে ম্যাকাউ শো, লায়ন শো, কাউবয় স্টোন্ট, এলিফ্যান্ট শো, ডলফিন শো, বার্ড শো ইত্যাদি। বানরদের খেলা নিয়ে একটি ম্যাকাউ শো দেখানো হয়। ড্রাম, বেহালা বাজিয়ে নেচে গেয়ে শুরু করে বিনোদনমূলক বক্সিং খেলা। এতে প্রায় এক হাজার দর্শক হাসি আনন্দে মেতে থাকেন পুরো বিশ মিনিট। শো শেষে বানরের সঙ্গে শিশু কিশোর বয়স্করা ছবি তোলেন। বানরগুলো হাততালি দেয় ও পানির বোতল ছুড়ে মারে। বার্ড শোতে দেখা যায়, কিছু পাখি মানুষের মতো করে কথা বলে। একজনের হাতে টাকা থাকলে তা ছোঁ মেরে নিয়ে যায়। আবার চাইলে ফেরতও দেয় পাখি। ডলফিন শোতে দেখা যায়, কয়েকটি ডলফিনের অন্তত ৩০-৪০ ফুট ওপরে বেলুন রাখা হয়। সেখানে ডলফিনগুলো লাফিয়ে লেজ দিয়ে ছুঁয়ে আবারো পানিতে ঝাঁপিয়ে পড়ে। কিছু ডলফিনকে মানুষের মতো করে নাচানাচি করতে দেখা যায়। এ ছাড়া হাতিদের ফুটবল খেলা, রং তুলি দিয়ে ছবি আঁকা, পাখিদের গেম শো, কাউবয়দের অস্ত্র হাতে ঘোড়া নিয়ে ছুটে চলা আর মারামারি। হলিউডের ছবির আদলে স্পাই ওয়ার শো। সাফারি ওয়ার্ল্ডের নিজস্ব বাস সার্ভিস আছে। কেউ চাইলে টিকিট কেটে বাসে করেই ঘুরে দেখতে পারেন পুরো পার্ক। কিন্তু গাড়িতে করে ইচ্ছেমতো বিভিন্ন জায়গায় দাঁড়ানো যায়, যেটা বাসে সম্ভব নয়। সবচেয়ে আকর্ষণীয় ব্যাপার হলো বাঘ ও সিংহকে খাবার খাওয়ানো লাইভ দেখা। সাধারণত দিনে দুইবার ওদের খাবার দেওয়া হয় সকালে ও বিকালে। বাংলাদেশি তিন হাজার টাকায় পুরো প্যাকেজে সাফারি ওয়ার্ল্ড ঘুরে দেখা যায়। দুপুরের খাবার ওই প্যাকেজের মধ্যেই থাকে। সেখানে বিভিন্ন ধরনের রেস্টুরেন্ট আছে। যে কেউ ইচ্ছেমতো রেস্টুরেন্টে খেতে পারবেন। আবার কেউ চাইলে বাইরে থেকে খাবার নিয়েও যেতে পারবেন। সাফারি পার্ক বিকাল পাঁচটায় বন্ধ হয়ে যায়।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর