মঙ্গলবার, ১ অক্টোবর, ২০১৯ ০০:০০ টা

রাজধানীতে পুলিশের উপকমিশনারের ছেলের গুলিবিদ্ধ লাশ উদ্ধার

নিজস্ব প্রতিবেদক

রাজধানীতে পুলিশের উপকমিশনারের ছেলের গুলিবিদ্ধ লাশ উদ্ধার

ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) রমনা বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) সাজ্জাদুর রহমানের ছেলের গুলিবিদ্ধ লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। মৃতের নাম সাদিক বিন সাজ্জাদ (১৮)। গতকাল সকালে আজিমপুর সরকারি কলোনির ৬৭/এইচ নম্বর বাড়ির চতুর্থ তলার নিজ বাসা থেকে তার লাশ উদ্ধার করা হয়। পুলিশ বলছে, গুলিটি তার মাথার ডান পাশ থেকে বাম পাশে গিয়ে আটকে ছিল। লাশের পাশে একটি সুইসাইড নোট পাওয়া গেছে। ধারণা করা হচ্ছে, মানসিক অসুস্থতা থেকে সে আত্মহত্যা করেছে। পুলিশ ও পরিবার বলছে, সকালে গৃহশিক্ষক পড়াতে এলে সাদিকের রুমের দরজা বন্ধ পায়। দরজায় ধাক্কাধাক্কি করলেও না খোলায় তা ভেঙে ভিতরে গিয়ে সাদিকের গুলিবিদ্ধ লাশ পাওয়া যায়। পরে তার লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) মর্গে পাঠানো হয়। সিটি কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র ছিল সাদিক। তাদের গ্রামের বাড়ি ঝিনাইদহের কালীগঞ্জে। দুই ছেলে ও এক মেয়ের মধ্যে সাদিক বড়। বাবার লাইসেন্স করা ব্যক্তিগত পিস্তল দিয়ে সাদিক নিজ রুমে আত্মহত্যা করে। ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসক ও ফরেনসিক বিভাগের প্রধান ডা. সোহেল মাহমুদ বলেন, মৃতের মাথার বাম পাশ থেকে একটি গুলি উদ্ধার করা হয়েছে। গুলিটি তার মাথার ডান পাশ থেকে বাম পাশে আটকে ছিল। প্রাথমিকভাবে মনে হচ্ছে, সে আত্মহত্যা করেছে।

আজিমপুর সরকারি কলোনিতে গিয়ে দেখা যায়, চতুর্থ তলার ফ্ল্যাটে পরিবার নিয়ে থাকেন সাজ্জাদুর রহমান। চার কক্ষের ফ্ল্যাটটিতে প্রবেশের পথে বসার কক্ষ ও করিডর সংলগ্ন কক্ষটি নিহত সাদিকের শোয়ার কক্ষ। ওই কক্ষেই তার গুলিবিদ্ধ লাশ পড়েছিল। জানা গেছে, সাতক্ষীরা জেলার এসপি সাজ্জাদুর রহমান দুই মাস আগে ডিএমপিতে বদলি হয়ে আসেন। সাদিক কখন তার বাবার আলমারি থেকে পিস্তলটি সরিয়ে নিয়েছিলেন, ঠিক কখন তিনি নিজের মাথায় গুলি চালান সে বিষয়ে এখনো নিশ্চিত হতে পারেনি পুলিশ।

 তবে নিহত সাদিকের বাবা সাজ্জাদুর রহমানের বরাত দিয়ে পুলিশ জানায়, রবিবার রাতে বাবা, মা, ভাই-বোনসহ পরিবারের সঙ্গে রাতের খাবার খেয়েছে সাদিক। এরপর রাত ১টা পর্যন্ত পরিবারের সবার সঙ্গে অনেক খোলামেলা কথা বলেছে। বাবা-মায়ের সঙ্গে টেলিভিশন দেখেছে। এরই এক পর্যায়ে সে একটি চিরকুটে নিজের কম্পিউটারের পাসওয়ার্ড লিখে বাবার হাতে দেয়। সেই সঙ্গে তার শৈশবের কিছু ছবিও বাবার হাতে দেয় সে। তখন সাদিক বাবাকে বলেছিল, এগুলো যত্ন করে রেখে দিও। অবসর সময়ে আমাকে মনে পড়বে। কিন্তু ছেলের এই আবেগি কথার কী অর্থ বাবা-মা তখনও বুঝতে পারেননি। এটাই যে ছেলের শেষ কথা সেটা মনে হয়নি তাদের। এরপর পরিবারের সবার সঙ্গে অনেক রাত পর্যন্ত কাটায় সে। রাত ১টার দিকে যখন সাদিক তার নিজ রুমে ঘুমাতে যায়, তখন দরজার সিটকিনি দিতে দেখে তার বাবা এ নিয়ে প্রশ্ন করেন। তখন সাদিক বলে, আমি এমনভাবে দিচ্ছি যেন তুমি ধাক্কা দিলেই খুলে যাবে। অথচ আগে সাদিক কখনই দরজা বন্ধ করে ঘুমায়নি। এরপর কোনো একসময় সে আত্মহত্যা করে। লালবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কে এম আশরাফ উদ্দিন বলেন, সাদিক বেশ ভদ্র ছেলে ছিল। মোটা হওয়া নিয়ে সে প্রায়ই দুঃখ করত। এসএসসি পরীক্ষায় এ-প্লাস পায়নি। সামনে এইচএসসি পরীক্ষায়ও ফল ভালো করা নিয়ে সন্দেহ ছিল। এসব নিয়ে মানসিক অসুস্থতা থেকে সে আত্মহত্যা করতে পারে। এ বিষয়ে লালবাগ থানায় একটি অপমৃত্যুর মামলা হয়েছে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর