মঙ্গলবার, ১ অক্টোবর, ২০১৯ ০০:০০ টা

ধর্ষণের অভিযোগে পল্টন থানার ওসি বরখাস্ত

নিজস্ব প্রতিবেদক

ধর্ষণের অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) পল্টন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহমুদুল হককে বরখাস্ত করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলাও দায়ের করা হয়েছে। গতকাল এ বিষয়টি নিশ্চিত করেন পুলিশ সদর দফতরের এআইজি (মিডিয়া) মো. সোহেল রানা।

জানা গেছে, চাকরি দেওয়ার কথা বলে এক তরুণীকে ঢাকায় এনে ধর্ষণ এবং গর্ভপাত করার অভিযোগ ছিল ওসি মাহমুদুল হকের বিরুদ্ধে। ভুক্তভোগী তরুণী প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ও পুলিশ মহাপরিদর্শক বরাবর অভিযোগ করেন। ঘটনার তদন্তে সত্যতা পায় পুলিশ কর্মকর্তারা। ভুক্তভোগী তরুণী বলেন, সরকারি একটি কলেজ থেকে পড়ালেখা শেষ করে চাকরির জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। এর মধ্যে ফেসবুকে পরিচয়ের সূত্র ধরে ওসি মাহমুদুল হকের সঙ্গে ফোনে কথা বলতেন। গত বছর ২১ সেপ্টেম্বর তিনি চাকরি দেওয়ার কথা বলে তাকে ঢাকায় ডেকে আনেন। এরপর পল্টনের ক্যাপিটাল হোটেলের একটি রুমে নিয়ে যান। সেখানে হোটেল বয়কে দিয়ে স্যুপ নিয়ে আসেন। স্যুপ খেতে না চাইলেও জোর করে খাওয়ান। এরপরই তিনি ঘুমিয়ে পড়েন। ঘুম ভাঙলে দেখেন রাত ২টা বাজে। ওই সময় মাহমুদুল হক তার পাশেই শুয়ে ছিলেন। তিনি বুঝতে পারেন, ঘুমিয়ে থাকা অবস্থায় তাকে ধর্ষণ করা হয়েছে। মাহমুদুল হকের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, তিনি তাকে ভালোবাসেন। তার স্ত্রীর সঙ্গে সম্পর্ক ভালো নয় এবং তাকে বিয়ের প্রতিশ্রুতি দেন। ওই তরুণীর অভিযোগ, এরপর প্রতি সপ্তাহেই তাকে ঢাকায় ডেকে এনে একই হোটেলে নিয়ে যেতেন মাহমুদুল হক। পরে তিনি বুঝতে পারেন, তিনি অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়েছেন। এ কথা মাহমুদুল হককে জানালে তিনি বিয়ে করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে গর্ভপাত করতে বলেন এবং একপর্যায়ে তার কথায় রাজি হয়ে গর্ভপাত করান। দু’জনের সম্মতিতে তাদের মধ্যকার শারীরিক সম্পর্কের ভিডিও ও ছবিও ধারণ করা হয়েছে এবং সেই ভিডিও তার কাছে রয়েছে। ওই তরুণী বলেন, মাহমুদুল হক বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিলেও বিয়ে না করে গত ২ এপ্রিল তার সঙ্গে সব যোগাযোগ বন্ধ করে দেন। পরে তার পরিবার সবকিছু জানতে পারলে তারা মাহমুদুলের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করে। এ সময় আমার পরিবারকে হুমকি দেওয়া হয়, পল্টন থানার ওসির অনেক ক্ষমতা, বাড়াবাড়ি করলে আমার অনেক ক্ষতি হবে। তিনি বলেন, ঢাকার বাইরে চাকরি করছি। সেখানেও আমার ক্ষতি করার চেষ্টা করেছেন মাহমুদুল হক। সবশেষে বাধ্য হয়ে তিনি মতিঝিল জোনের এডিসি শিবলী নোমানকে বিষয়টি জানান। তিনি মীমাংসা করে দেবেন বলেও জানান। কিন্তু কোনো পদক্ষেপ নেননি। মাহমুদুলের বাবাকেও বিষয়টি জানাই। তবুও কোনো কাজ হয়নি। শেষ পর্যন্ত আমি আইজিপি বরাবর লিখিত অভিযোগ করি। পুলিশের মতিঝিল বিভাগের এডিসি মোনালিসা বেগম বলেন, ঘটনার সত্যতা পাওয়া গেছে।

এ বিষয়ে একটি তদন্ত প্রতিবেদন ডিএমপি সদর দফতরে পাঠানো হয়। সেখান থেকে ২৫ সেপ্টেম্বর পুলিশ সদর দফতরে পাঠানো হয়েছে। এরপর পুলিশ সদর দফতর ওসি মাহমুদুল হককে বরখাস্ত করে এবং তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা করতে অনুমোদন দেয়। জানা গেছে, ওসি মাহমুদুল হক ২০০১ সালে এসআই পদে পুলিশে যোগ দেন। তার বাড়ি নওগাঁ জেলায়। চাকরি জীবনে তিনি একটি গুরুদ--ব্ল্যাক মার্ক এবং ২২টি লঘুদন্ডে দ-িত হয়েছেন। তিনি ২০১৭ সালের ২ জুলাই পল্টন থানার ওসি হিসেবে যোগ দেন। তার স্ত্রী ও এক সন্তান রয়েছে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর