বুধবার, ২ অক্টোবর, ২০১৯ ০০:০০ টা

ঝাঁজ কমেছে পিয়াজের, হচ্ছে আমদানি

নিজস্ব প্রতিবেদক

রপ্তানিতে ভারতের নিষেধাজ্ঞা জারির ফলে একলাফে ১০০ টাকার ওপরে পিয়াজের দাম ওঠার পর এখন কিছুটা কমতে শুরু করেছে। অতিরিক্ত মূল্য বৃদ্ধি ঠেকাতে স্থানীয় প্রশাসনের উদ্যোগে দেশের বিভিন্ন এলাকায় চলছে মোবাইল কোর্ট। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ১০টি টিম গতকাল দেশের গুরুত্বপূর্ণ ১০ জেলায় মনিটরিং কার্যক্রম শুরু করেছে। এ ছাড়া সংকট এড়াতে মিয়ানমার থেকে ট্রলারে করে পিয়াজ ঢুকছে বাংলাদেশে।

কক্সবাজারের টেকনাফ স্থলবন্দর দিয়ে মিয়ানমার থেকে প্রায় ৩৫ লাখ কেজি পিয়াজ আমদানি করা হয়েছে। এর মধ্যে ৯ লাখ কেজি পিয়াজ গত দুই দিনে বন্দরে পৌঁছেছে। এ ছাড়া আরও কয়েক লাখ কেজি পিয়াজ দু-তিন দিনের মধ্যে স্থলবন্দরে এসে পৌঁছাবে বলে জানিয়েছেন আমদানিকারক ও সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা। এ ছাড়া চট্টগ্রাম বন্দরেও চীন ও মিসর থেকে গত তিন দিনে আসা জাহাজভর্তি পিয়াজ খালাস হচ্ছে। কক্সবাজার প্রতিনিধি জানান, সোমবার ও মঙ্গলবার পর্যন্ত আটজন ব্যবসায়ীর আমদানি করা ৯ লাখ কেজি পিয়াজ মিয়ানমার থেকে ট্রলারযোগে টেকনাফ স্থলবন্দরে পৌঁছেছে। শ্রমিকেরা ট্রলার থেকে পিয়াজ খালাস করে ট্রাকে বোঝাই করছেন। পিয়াজভর্তি ট্রাকগুলো সারিবদ্ধভাবে দেশের বিভিন্ন স্থানের উদ্দেশে স্থলবন্দর ছেড়ে যায়। স্থলবন্দর শুল্ক স্টেশন সূত্রে জানা যায়, ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৩ হাজার ৫৭৩ মেট্রিক টন পিয়াজ আমদানি হয়েছে মিয়ানমার থেকে। এর মূল্য ১৫ কোটি ৫৫ লাখ ২৪ হাজার ৩৫৭ টাকা। আমদানিকারকরা বলেন, মিয়ানমারে প্রতি কেজি পিয়াজের দাম ৪৩ টাকা। এ পিয়াজ টেকনাফ থেকে চট্টগ্রাম পৌঁছাতে পরিবহন, শ্রমিকসহ কেজিপ্রতি আরও ৫ টাকার মতো খরচ হচ্ছে। প্রতি কেজি পিয়াজের দাম পড়ছে ৪৮ থেকে ৫০ টাকা। ফলে এসব পিয়াজ খুচরা বাজারে ৫৫ থেকে ৬০ টাকায় পাওয়া যাবে। আমদানিকারক মোহাম্মদ সেলিম, এম এ হাশেম, সজীব ও সাদ্দাম বলেন, মিয়ানমারের আকিয়াব বন্দর থেকে কয়েক লাখ কেজি ভর্তি পিয়াজের জাহাজ সমুদ্রপথে রয়েছে। সেগুলো অল্প কয়েকদিনের মধ্যে টেকনাফ স্থলবন্দরে এসে পৌঁছাবে বলে আশা করা হচ্ছে।

এদিকে পিয়াজ আমদানির পাশাপাশি দেশের অভ্যন্তরে পণ্যটির দাম কমাতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ১৪টি মনিটরিং টিম মাঠে নেমেছে। এর মধ্যে রাজধানী ঢাকায় ৪টি ও সারা দেশের বিভিন্ন জেলায় ১০টি মনিটরিং টিম গতকাল মাঠে নেমেছে। এ ছাড়া দেশের বিভিন্ন এলাকায় স্থানীয় প্রশাসনের উদ্যোগে চলছে মোবাইল কোর্ট।

বাণিজ্য সচিব ড. জাফর উদ্দীন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, পিয়াজ আমদানি, উৎপাদন ও মজুদ হয় দেশের এমন ১০টি জেলায় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ১০টি টিম মনিটরিং কার্যক্রম শুরু করেছে। যুগ্মসচিব পর্যায়ের নেতৃত্বাধীন এসব টিম জেলা প্রশাসনের সঙ্গে সমন্বয় করে মনিটরিং চালাবে। পরবর্তী নির্দেশনা না দেওয়া পর্যন্ত তাদের তদারকি কার্যক্রম চালিয়ে যেতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া বিভিন্ন এলাকায় স্থানীয়ভাবেও ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে মজুদ ও মূল্য পরিস্থিতি তদারকি করা হচ্ছে। এ ছাড়া সরবরাহ বাড়াতে মিয়ানমার, চীন, মিসর ও তুরস্ক থেকে প্রচুর পিয়াজ আসছে। সচিব জানান, ‘আমরা খবর নিয়েছি, পাইকারি বাজারে পিয়াজের দাম ১০ থেকে ১৫ টাকা কমে আসছে। এর ফলে খুচরা বাজারেও পণ্যটির দাম কমে যাবে।’ অভিযানের পর কমল পিয়াজের দাম : চাঁপাইনবাবগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, অভিযানের পর পিয়াজের পাইকারি দর ওই শহরে একলাফে কমেছে প্রতি কেজিতে ১৫ টাকা। গতকাল দুপুরে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট রুহুল আমীনের নেতৃত্বে শহরের পুরান বাজারস্থ পিয়াজের পাইকারি বাজারে অভিযানে যায় ভ্রাম্যমাণ আদালত। এ সময় সেখানে পিয়াজ বিক্রি হচ্ছিল ৭০ টাকা কেজি দরে। সেই দামেই পিয়াজ কিনছিলেন খুচরা ব্যবসায়ীরা। কিন্তু অভিযান শুরুর পর পাইকারি ব্যবসায়ীদের অতিরিক্ত মূল্য না নেওয়ার জন্য সতর্ক করে ভ্রাম্যমাণ আদালত। এর পরই আগের মূল্য অর্থাৎ ৫৫ টাকা দরে পিয়াজ বিক্রি শুরু হয়। চার প্রতিষ্ঠানকে জরিমানা : ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধি জানান, ৯০ টাকা কেজি দরে পিয়াজ বিক্রির অভিযোগে গতকাল বিকালে জেলা শহরের চার ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানকে ৩৯ হাজার টাকা জরিমানা করেছে ভ্রাম্যমাণ আদালত। বিকালে শহরের জগৎ বাজারে সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট পঙ্কজ বড়ুয়ার নেতৃত্বে এ অভিযান পরিচালিত হয়। অভিযানকালে ভ্রাম্যমাণ আদালত সঠিক মূল্য তালিকা ও ক্রয়মূল্যের চালান না থাকায় চারটি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানকে ৩৯ হাজার টাকা জরিমানা করে। চারটি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে মেসার্স বিসমিল্লাহ স্টোরকে ১০ হাজার, মেসার্স মায়ের দোয়া এন্টারপ্রাইজকে ১০ হাজার, মেসার্স শাহ আমানত ট্রেডার্সকে ১৫ হাজার ও মেসার্স শাহজালাল ট্রেডার্সকে ৪ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। এ প্রতিষ্ঠানগুলো ক্রেতাদের কাছে ৯০ টাকা কেজি দরে পিয়াজ বিক্রি করছিল।

সর্বশেষ খবর