রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) শিক্ষক নিয়োগে উপ-উপাচার্য চৌধুরী মো. জাকারিয়ার সঙ্গে এক চাকরিপ্রত্যাশীর স্ত্রীর আর্থিক লেনদেন সংক্রান্ত একটি ফোনালাপ ফাঁস হয়েছে। সোমবার রাতে ৪১ সেকেন্ডের ওই ফোনালাপ ফাঁস হওয়ার পর ক্যাম্পাসে তোলপাড় সৃষ্টি হয়।
তবে ওই ফোনালাপ সম্পাদনা করে ‘উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে’ সংবাদ তৈরি করা হয়েছে বলে উপ-উপাচার্য চৌধুরী মো. জাকারিয়া দাবি করেন। এ প্রসঙ্গে গতকাল দুপুরে তিনি একটি প্রতিবাদলিপিও পাঠিয়েছেন। তাতে তিনি দাবি করেন, ‘হুদা (চাকরিপ্রত্যাশী) অসাধু কিছু ব্যক্তির কবলে পড়ে আর্থিক লেনদেনে জড়িয়ে পড়েছে।’ ‘স্থানীয় অভিভাবক হিসেবে এহেন অসাধুকর্ম রোধকল্পে খোঁজ নেওয়ার জন্য হুদার স্ত্রীকে ফোন দিয়েছিলাম’। ফাঁস হওয়া ওই ফোনালাপ থেকে জানা যায়, চাকরিপ্রত্যাশী নূরুল হুদার স্ত্রী সাদিয়াকে ফোনে নিজের পরিচয় দিয়ে উপ-উপাচার্য চৌধুরী মো. জাকারিয়া আর্থিক লেনদেনের বিষয়ে জানতে চান। একপর্যায়ে তিনি সাদিয়াকে প্রশ্ন করেন, ‘তোমরা কয় টাকা দেওয়ার জন্য রেডি?’ পরে আবার তিনি বলেন, ‘সত্যি কথাই তো বলবা। উপরে আল্লাহ তায়ালা, নিচে আমি।’ উত্তরে সাদিয়া বলেন, ‘অবশ্যই অবশ্যই। স্যার আপনি যেহেতু তার অবস্থা জানেন। আরেকটা বিষয় এখানে স্যার, সেটা হচ্ছে আপনি হুদার মানে, এমনিতে সে কতটা স্ট্রিক্ট আপনি বোধহয় এটাও জানেন স্যার, একটু রগচটা ছেলে।’ এর পরেই উপ-উপাচার্য বলেন, ‘আচ্ছা রাখো রাখো, এখান থেকে কথা বলা যাবে না।’ এরপর তিনি ফোন লাইন কেটে দেন। সূত্রে জানা যায়, ওই চাকরিপ্রত্যাশী বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের ২০১০-১১ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী মো. নূরুল হুদা। আইন বিভাগে সেরা ফলাফল অর্জন করায় ২০১৭ সালে তিনি বিশ্ববিদ্যালয় স্বর্ণপদক ও ২০১৮ সালে প্রধানমন্ত্রী স্বর্ণপদক লাভ করেন। তার বাড়ি লালমনিরহাট জেলায় চৌধুরী মো. জাকারিয়ার এলাকায়। সম্প্রতি আইন বিভাগে উপ-উপাচার্য চৌধুরী মো. জাকারিয়ার জামাই ও এক আওয়ামী লীগ নেতার মেয়েসহ তিনজন প্রভাষককে নিয়োগ দেওয়া হলেও নিয়োগ পাননি স্বর্ণপদকপ্রাপ্ত সাবেক এই শিক্ষার্থী। আইন বিভাগে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বিভাগের তিনটি প্রভাষক পদে গত বছর ১৩ নভেম্বর নিয়োগ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। ১৭ নভেম্বর সিন্ডিকেট সভায় তিনজনকে নিয়োগ দেওয়া হয়। এই তিন প্রভাষকের মধ্যে একজন উপ-উপাচার্য চৌধুরী মো. জাকারিয়ার জামাতা সাইমুম তুহিন, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য নুরুল ইসলাম ঠা ুর মেয়ে নুর নুসরাত সুলাতান ও রাবির আইন বিভাগের ২০১১-১২ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী বনশ্রী রানী। এদিকে নিয়োগে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগসহ বিভিন্ন কেন্দ্রে উপাচার্য ও উপ-উপাচার্য অপসারণের দাবি তুলেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা। এই দাবিতে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় মশাল মিছিলের আয়োজন করে প্রগতিশীল ছাত্রজোট।
