বৃহস্পতিবার, ৩ অক্টোবর, ২০১৯ ০০:০০ টা
থানার সামনে গায়ে আগুন

বাঁচানো গেল না সেই কলেজছাত্রীকে

নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী

বাঁচানো গেল না সেই কলেজছাত্রীকে

রাজশাহী মহানগরীর শাহ মখদুম থানা থেকে বেরিয়ে থানার সামনে শরীরে কেরোসিন দিয়ে আগুন লাগিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করা কলেজছাত্রী লিজা আক্তার (১৯) মারা গেছেন। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গতকাল সকালে তার মৃত্যু হয়। ২৮ সেপ্টেম্বর স্বামীর বিরুদ্ধে থানায় মামলা করতে গিয়ে ব্যর্থ হয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন লিজা। কলেজছাত্রী লিজা গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার প্রধানপাড়ার আবদুল লতিফ বিশ্বাসের পালিত মেয়ে। তিনি রাজশাহী মহিলা কলেজের দ্বাদশ শ্রেণির বাণিজ্য বিভাগের শিক্ষার্থী ছিলেন। তার স্বামীর নাম সাখাওয়াত হোসেন (২০)। তিনি রাজশাহী সিটি কলেজের দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী। সাখাওয়াত চাঁপাইনবাবগঞ্জের নাচোল উপজেলার খান্দুরা এলাকার খোকন আলীর ছেলে। গত জানুয়ারিতে প্রেম করে পরিবারের অমতে বিয়ে করেন তারা। বিয়ের পর থেকেই নগরীর গাঙপাড়া এলাকায় বাসা ভাড়া নিয়ে সংসার করছিলেন সাখাওয়াত ও লিজা। ঘটনার পর থেকে সাখাওয়াত পলাতক।

নগর পুলিশ কমিশনার হুমায়ুন কবির জানান, লিজা আত্মহত্যার ঘটনায় পুলিশের কোনো গাফিলতি আছে কি না তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। প্ররোচনা থাকলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ জন্য পুলিশের পক্ষ থেকে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে বলে জানান পুলিশের এই কর্মকর্তা। ২৮ সেপ্টেম্বর হঠাৎ থানা থেকে বের হয়েই কাছের একটি দোকান থেকে কেরোসিন কিনে আবার থানার সামনে আসেন এই তরুণী। থানার সামনেই নিজের গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেন তিনি। মুহূর্তে তার শরীরের অধিকাংশ পুড়ে যায়। আশপাশের লোকজন ছুটে এসে পানি ঢেলে আগুন নেভান। পরে প্রায় অচেতন লিজাকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে ভর্তি করা হয়। অবস্থার অবনতি হলে তাকে পুলিশ পাহারায় ঢাকায় পাঠানো হয়। নগরীর শাহ মখদুম থানার সামনে এমন ঘটনা ঘটে। লিজার সহপাঠী ও তার বান্ধবীরা জানান, ২০ জানুয়ারি লিজার সঙ্গে সাখাওয়াতের বিয়ে হয়। পরিবারকে না জানিয়েই লিজাদের গোবিন্দগঞ্জের বাড়িতে গিয়ে বিয়ে করেন সাখাওয়াত। জানা গেছে, বিয়ের পর কিছুদিন স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে স্বাভাবিক সম্পর্ক থাকলেও পরে দ্বন্দ্ব শুরু হয়। পরিবারের সম্মতি না পাওয়ায় লিজাকে সাখাওয়াত নিজের বাড়িতে নিয়ে যেতে পারেননি। একপর্যায়ে সাখাওয়াত স্ত্রী লিজার সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ করে গ্রামের বাড়িতে গিয়ে থাকতে শুরু করেন।

জুলাই মাসে সাখাওয়াতের খোঁজে লিজা যান চাঁপাইনবাবগঞ্জের নাচোলে। স্বামীর বাড়ি খুঁজে লিজা সেখানে গেলে সাখাওয়াত বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে যান। ওই সময় লিজা নাচোল থানায় অভিযোগ করেন। পুলিশ সাখাওয়াত ও তার বাবাকে ডেকে এনে তাদের সঙ্গে লিজাকে পাঠিয়ে দেন। এরপর কয়েক দিন একসঙ্গে থাকলেও রাজশাহীতে ফিরে আবারও সাখাওয়াত স্ত্রীর সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ করে দেন।

অভিযোগে জানা গেছে, কয়েক দিন আগে লিজার সঙ্গে দেখা করেন সাখাওয়াতের এক ভগ্নিপতি। ওই সময় সাখাওয়াতও সঙ্গে ছিলেন। তারা উভয়ই লিজাকে মারধর করেন এবং এ বিষয়ে অভিযোগ করলে প্রাণে মেরে ফেলার হুমকি দেন। সেই থেকে লিজা নগরীর শাহ মখদুম থানায় অভিযোগ দেওয়ার চেষ্টায় কয়েক দিন ধরে ঘুরছিলেন। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, লিজা ২৮ সেপ্টেম্বর দুপুরে স্বামীর বিরুদ্ধে অভিযোগ দিতে আবারও শাহ মখদুম থানায় যান। সেখানে ডিউটি অফিসারকে অনুরাধ করেন তার অভিযোগ রেকর্ড করার জন্য। ওসির সঙ্গে শেষে দেখা করেন। কিন্তু সংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্মকর্তারা তাকে পাত্তা না দিয়ে তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করেন।

সর্বশেষ খবর