বৃহস্পতিবার, ৩ অক্টোবর, ২০১৯ ০০:০০ টা

উত্তরাঞ্চলে নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি, বন্দী বহু পরিবার

প্রতিদিন ডেস্ক

ভারি বর্ষণ ও উজানের ঢলে দেশের উত্তরাঞ্চলে নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। কোথাও কোথাও পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে বহু পরিবার পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র জানায়, ব্রহ্মপুত্র ও যমুনা ছাড়া দেশের সব নদ-নদীর পানি বেড়ে বন্যা পরিস্থিতির অবনতির আশঙ্কা তৈরি করেছে। গঙ্গা-পদ্মার পানি বৃদ্ধির প্রবণতা আগামী ৪৮ ঘণ্টা অব্যাহত থাকতে পারে। এর ফলে গঙ্গা-পদ্মা ও গড়াই নদীসংলগ্ন পাবনা, কুষ্টিয়া, মাগুরা, রাজবাড়ী, মানিকগঞ্জ, ফরিদপুর, মাদারীপুর, শরীয়তপুর ও মুন্সীগঞ্জ জেলার নিম্নাঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হতে পারে। পানি উন্নয়ন বোর্ড যে ৯৩টি পয়েন্টে নদ-নদীর পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে, তার মধ্যে ৫৬টি পয়েন্টে পানি বাড়ছে, কমছে ৩৭টি পয়েন্টে। আর ৬টি পয়েন্টে নদী বইছে বিপদসীমার ওপর দিয়ে। আমাদের নিজস্ব প্রতিবেদক ও প্রতিনিধির পাঠানো খবর-

নাটোর : ভারতের ফারাক্কা বাঁধের সবকটি গেট খুলে দেওয়ায় পদ্মা নদীর পানিপ্রবাহ বেড়ে গত ২৪ ঘণ্টায় নাটোরের লালপুর উপজেলার চরাঞ্চলের কয়েক হাজার একর জমির ফসল ডুবে গেছে। পানিবন্দী হয়ে পড়েছে প্রায় তিন হাজার পরিবার। নদীতে পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। উপজেলার ৩টি ইউনিয়নের পদ্মার চরে বসবাসকারী সব মানুষকে সরিয়ে নিতে খুলে দেওয়া হয়েছে আশ্রয়কেন্দ্র গুলো। স্থানীরা জানান, সোমবার রাতে হঠাৎ করে পদ্মা নদীতে ২-৩ ফুট পানি বেড়ে যায়। ফলে নওসারা সুলতানপুর, দিয়াড়শঙ্করপুর, চাকলা বিনোদপুর, আরাজি বাকনাই, রসুলপুর, বাকনাই, বন্দোবস্ত গোবিন্দপুর, কাগমারী ও লালপুর চরের বসতবাড়িতে পানি উঠেছে। প্রতিনিয়তই নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ : পদ্মা ও মহানন্দা নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়ে পানিবন্দী মানুষ দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন। ২৪ ঘণ্টায় পদ্মা নদীর পানি ১ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমার ৩০ সেন্টিমিটার এবং মহানন্দা নদীর পানি ১১ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে ২২ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। জানা গেছে, ভারত ফারাক্কা বাঁধের ১০৯টির মধ্যে সবকটি গেট খুলে দেওয়ায় চাঁপাইনবাবগঞ্জে প্রায় ২০ দিন ধরে পদ্মা ও মহানন্দা নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। এদিকে পানি বৃদ্ধির কারণে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর ও শিবগঞ্জ উপজেলায় প্রায় ৫ হাজার মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। পানিতে ডুবে গেছে প্রায় সাড়ে ৪ হাজার বিঘা জমির মাষকলাই ও শাক-সবজিসহ বিভিন্ন ফসল।

কুষ্টিয়া : নদীর পানি বৃদ্ধির কারণে কুষ্টিয়ার কুমারখালীতে শিলাইদহ কুঠিবাড়ি রক্ষা বাঁধ প্রকল্পে ফের ধস দেখা দিয়েছে। গতকাল সকাল ৯টার দিকে হঠাৎ করেই বাঁধ ধসে পানিতে চলে যায়। এতে বাঁধের ওপর কয়েক বাড়ির বাসিন্দারা চরম আতঙ্কের মধ্যে রয়েছেন। এ অবস্থায় দ্রুত পানি উন্নয়ন বোর্ড সিসি ব্লক ও জিওব্যাগ ফেলে ভাঙন প্রতিরোধ করার চেষ্টা করছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের কুষ্টিয়ার নির্বাহী প্রকৌশলী পীযূষ কৃষ্ণ কুন্ডু জানান, এ বছর পদ্মায় পানি বৃদ্ধি অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে যাচ্ছে।

পাবনা : পাবনায় পদ্মার পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। জেলার সদর, ঈশ্বরদী ও সুজানগর উপজেলার নদীতীরের গ্রামগুলোতে তলিয়ে গেছে কয়েক হাজার হেক্টর জমির ফসল। পানিবন্দী দিন কাটাচ্ছেন চরাঞ্চলের প্রায় ৩০ গ্রামের মানুষ। উজান থেকে নেমে আসা পানি ও প্রবল বর্ষণে আগামী কয়েকদিনে আরও বিস্তীর্ণ অঞ্চল প্লাবিত হাওয়ার আশঙ্কা সংশ্লিষ্টদের। পাবনার সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জয়নাল আবেদীন জানান, আকস্মিক বন্যায় সদর উপজেলার দোগাছি, ভাঁড়ারা, চরতারাপুর ও হেমায়েতপুর ইউনিয়নের ৬৯২ হেক্টর ফসলি জমি পানিতে তলিয়ে গেছে। পানিবন্দী হয়ে পড়েছে প্রায় ১ হাজার পরিবারের মানুষ। মঙ্গলবার পানি বৃদ্ধি অব্যাহত হওয়ায় প্লাবিত হয়েছে আরও বেশ কিছু এলাকা। উপজেলা প্রশাসন বন্যাকবলিত এলাকায় ত্রাণ কার্যক্রম চালাচ্ছে।

সর্বশেষ খবর