শুক্রবার, ৪ অক্টোবর, ২০১৯ ০০:০০ টা

লাদেনের সঙ্গে বৈঠক করা হুজি নেতা আতিকুল্লাহ গ্রেফতার

নিজস্ব ও আদালত প্রতিবেদক

লাদেনের সঙ্গে বৈঠক করা হুজি নেতা আতিকুল্লাহ গ্রেফতার

নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন হুজিবির (হরকাতুল জিহাদ বাংলাদেশ) সৌদিফেরত শীর্ষ নেতাসহ তিন সদস্যকে গ্রেফতার করেছে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) কাউন্টার টেররিজম ইউনিট। তারা হলেন মো. আতিকুল্লাহ ওরফে আসাদুল্লাহ ওরফে জুলফিকার, মো. বোরহান উদ্দিন রাব্বানী ও মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিন ওরফে শামীম। বুধবার বিকালে রাজধানীর খিলক্ষেত থানার নিকুঞ্জ-২-এর বড় মসজিদ-সংলগ্ন এলাকা থেকে তাদের গ্রেফতার করা হয়। পরে গতকাল তাদের আদালতে হাজির করে রিমান্ডের আবেদন জানানো হয় প্রত্যেকের চার দিন করে রিমান্ড মজ্ঞুর হয়। পুলিশ বলছে, গ্রেফতার তিনজনের মধ্যে আতিকুল্লাহ আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসী গোষ্ঠী আল-কায়েদার নেতা ওসামা বিন লাদেন ও তালেবান নেতা মোল্লা ওমরের সঙ্গে নিয়মিত বৈঠকে অংশ নিতেন। সম্প্রতি তিনি দেশে ফিরে হুজিকে নতুন করে সংগঠিত করছিলেন। গ্রেফতার নাজিম উদ্দিন ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সেক্রেটারি এবং বোরহান উদ্দিন ফেনী জেলার দায়িত্বশীল ছিলেন। গতকাল এসব বিষয় নিশ্চিত করেছেন কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের ডিসি মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম। তিনি বলেন, গ্রেফতার হুজির শীর্ষ নেতা আতিকুল্লাহ হলেন মুফতি হান্নানের ১৯৯৬ সালে গঠিত হরকাতুল জিহাদ কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক। পরবর্তী সময়ে বায়তুল মাল ও আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগে দায়িত্বরত ছিলেন।

বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রথম দিকে তিনি দুবাই হয়ে সৌদি আরব পালিয়ে গিয়ে আত্মগোপন করেন এবং সাংগঠনিক কাজে একাধিকবার পাকিস্তান যান। দীর্ঘদিন বিদেশে পলাতক থেকে এ বছর মার্চে দেশে ফেরেন। সংগঠনের পুরনো সদস্যদের সক্রিয় করা এবং নতুন সদস্য সংগ্রহ করে সংগঠনের কার্যক্রম চালু করার মিশন নিয়ে কর্মতৎপরতা চালান তিনি। সংগঠনকে গতিশীল করতে তিনি দেশের বিভিন্ন স্থানে সাংগঠনিক সফর করেন। এ ছাড়া দেশি-বিদেশি বিভিন্ন উৎস থেকে সংগঠনের জন্য অর্থ সংগ্রহ করছিলেন আতিকুল্লাহ। আতিকুল্লাহ আফগান-ফেরত যোদ্ধা ও বোমা বিশেষজ্ঞ। পাকিস্তান, আরব আমিরাত ও সৌদি আরবসহ অন্যান্য দেশের জঙ্গি সংগঠনের সঙ্গে আতিকুল্লাহর যোগাযোগ রয়েছে। তিনি আফগানিস্তানে যুদ্ধের সময় ওসামা বিন লাদেন, মোল্লা ওমর, আইমান আল জাওয়াহিরিসহ আল-কায়েদা ও তালেবানের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে একাধিকবার বৈঠক করেছেন। গ্রেফতার নাজিম ও বোরহান বর্তমানে কাশ্মীর সমস্যা এবং রোহিঙ্গা পরিস্থিতিকে পুঁজি করে পরস্পর যোগসাজশে নতুন করে সংগঠিত হওয়ার চেষ্টা করছিলেন। তাদের বিরুদ্ধে সন্ত্রাস দমন আইনে খিলক্ষেত থানায় মামলা করা হয়েছে। গ্রেফতার তিনজনকে গতকাল আদালতে হাজির করে ১০ দিনের রিমান্ডে নেওয়ার আবেদন করে কাউন্টার টেররিজম ইউনিট। এর পরিপ্রেক্ষিতে হুজিবির তিন নেতার প্রত্যেককে চার দিন করে রিমান্ডে নেওয়ার অনুমতি দিয়েছেন আদালত। গতকাল ঢাকা মহানগর হাকিম আশেক ইমাম আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য রিমান্ডের এ আদেশ দেন। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের পরিদর্শক মো. কামরুজ্জামান আসামিদের আদালতে হাজির করে ১০ দিন করে রিমান্ডে নেওয়ার আবেদন করেন। রিমান্ড আবেদনে বলা হয়, আসামিরা হরকাতুল জিহাদের সদস্য। আতিকুল্লাহ ১৯৯২ সালে মিয়ানমারে যান এবং রোহিঙ্গাদের সশস্ত্র গ্রুপে যোগ দিয়ে যুদ্ধ করেন। ১৯৯৭ সালে তিনি পাকিস্তান থেকে টিমসহ আফগানিস্তানে যান। সেখানেও সশস্ত্র গ্রুপে যোগ দিয়ে যুদ্ধ করেন এবং তালেবান নেতা মোল্লা ওমর ও ওসামা বিন লাদেনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। আতিকুল্লাহ দীর্ঘদিন দুবাইয়ে পলাতক থেকে পুনরায় বাংলাদেশে আসেন। এখানে এসে সংগঠনের পুরনো সদস্য বোরহান উদ্দিন ও নাজিম উদ্দিনসহ পলাতক আসামিদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। পাশাপাশি তিনি নতুন সদস্য সংগ্রহ করে সংগঠনের কার্যক্রম চালু করার মাধ্যমে দেশকে অস্থিতিশীল করার লক্ষ্যে কার্যক্রম করে আসছেন। মামলার সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে ও তাদের সহযোগী পলাতক নিষিদ্ধ সংগঠন হুজিবির সদস্যদের নাম-ঠিকানা সংগ্রহ করা জন্য আসামিদের ১০ দিনের রিমান্ড প্রয়োজন।

সর্বশেষ খবর