শনিবার, ৫ অক্টোবর, ২০১৯ ০০:০০ টা
রাজশাহীতেও জমজমাট ক্রিকেট জুয়া

কেউ কেউ কোটিপতি শত শত মানুষ নিঃস্ব

নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী

রাজশাহী মহানগরীর তেরোখাদিয়া এলাকার সুমন (৩৫)। বছর দুয়েক আগেও নগরীর আরডিএ মার্কেটে ছিল তার ক্রোকারিজের ব্যবসা। এই ব্যবসা করে খুব ভালোভাবেই সংসার চলত। এ ব্যবসা থেকে মাসে তার কমপক্ষে ৫০ হাজার টাকা আয় হতো। সেই আয় দিয়ে সুমনের সংসারে এসেছিল স্বাচ্ছন্দ্য।

কিন্তু এখন তিনি নিঃস্ব। এতটাই নিঃস্ব যে, জুয়ার টাকা পরিশোধের জন্য তার বাবার শেষ সম্বল বাড়ির ভিটাটুকুও বিক্রি করতে হয়েছে। মাত্র দেড় কাঠার ওই জমি বিক্রি করেও মেটেনি জুয়ার দেনা। এখনো পাওনাদারদের চাপে বাড়িছাড়া হয়ে থাকেন। পরিবার নিয়ে থাকেন পাশের ভাড়া বাড়িতে।

সুমনের মতো রাজশাহী নগরীজুড়ে শত শত যুবক থেকে শুরু করে নানা শ্রেণি-পেশা ও বয়সের মানুষ ক্রিকেট জুয়ায় এখন নিঃস্ব। তাদের কেউ কেউ এখনো বাড়িছাড়া। কেউ কেউ দেনা মেটাতে পড়েছেন ধারদেনায়, আবার কেউ কেউ ছেড়েছেন সংসার। কিন্তু এই জুয়া পরিচালনা করে একেকজন হয়েছেন কোটিপতি। একসময়ে যাদের দিন চলত কোনোমতে, তারা এখন রাজশাহী শহরে জমি, বাড়ি ও  গাড়ির মালিক। জুয়ায় নিঃস্ব হওয়া সুমন জানান, তিনি বছর দেড়েক আগে মোবাইলের মাধ্যমে আইপিএল ও বিপিএল চলাকালীন জুয়ায় আসক্ত হয়ে পড়েন। দিনের পর দিন লোকসান গুনতে গুনতে ক্রোকারিজের ব্যবসাও গুটিয়ে ফেলতে হয়। তারপরেও ক্রিকেট জুয়াড়িদের কাছে দেনায় পড়েন অন্তত ১৭ লাখ টাকা। শেষে বাবার বাড়ির ভিটেটা বিক্রি করে কোনোমতে দেনা শোধ করেন তিনি। তবে এখনো অন্তত ৪ লাখ টাকা দেনা আছে তার। এই টাকার জন্য জুয়াড়িরা আসে তার কাছে। ভয়ে এখনো মাঝে-মধ্যে বাড়িছাড়া হয়ে থাকতে হয় তাকে। সুমনের মতো জুয়ায় নিঃস্ব হওয়া তেরোখাদিয়া এলাকার আজিবুর রহমান জানান, শত শত যুবকসহ বিভিন্ন বয়সের মানুষ নিঃস্ব হয়েছে এই ক্রিকেট জুয়ায়। তিনি এক সময় সবজি ব্যবসা করে ভালোভাবেই সংসার চালাতেন। এখন ব্যবসা হারিয়েছেন। পাশাপাশি অন্তত ৭ লাখ টাকা ঋণ নিয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন বাসা ছেড়ে। অনুসন্ধানে জানা গেছে, আইপিএল, বিপিএল শুরু হলে রাজশাহী নগরীর লক্ষ্মীপুর, শালবাগান মোড়, উপশহর, কাশিয়াডাঙ্গা মোড়, সপুরা মোড়, পাঠানপাড়া ও কোর্ট বাজার এলাকায় বসে জুয়ার আসর। এ ছাড়াও বিশ্বকাপ ক্রিকেট, বিশ্বকাপ ফুটবল থেকে যে কোনো বড় আসর পৃথিবীজুড়ে যেখানেই বসুক না কেন রাজশাহীর জুয়াড়িরা মেতে ওঠে জুয়ায়। নিঃস্ব হওয়ার তালিকা যেমন দীর্ঘ, তেমনি এই জুয়া চালিয়ে কোটিপতি বনে যাওয়ার সংখ্যাও কম নয়। অনুসন্ধানে জানা গেছে, জুয়ার নিয়ন্ত্রণ করে কোটিপতি বনে যাওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে আছেন রাজশাহী নগরীর সপুরা এলাকার জীবন, কোর্ট এলাকার মোহন, লক্ষ্মীপুর এলাকার হযরত ও পারভেজ। আর লাখোপতি বনে যাওয়াদের মধ্যে আছেন কাদিরগঞ্জ এলাকার তুষার, লক্ষ্মীপুরের রবিউল, পাঠানপাড়ার রাজেশ, উপশহরের রাসেলসহ আরও অন্তত ১০ জন। তাদের নিয়ন্ত্রণেই রাজশাহীতে পরিচালিত হয় জুয়া। সাধারণত মোবাইলে মেসেজ দিয়ে বা কল করে জুয়ায় বাজি ধরেন জুয়াড়িরা। আবার কেউ কেউ সরাসরি দেখা করেও এই বাজিতে জড়িয়ে পড়েন। নগর পুলিশের মুখপাত্র গোলাম রুহুল কুদ্দুস জানান, এসব জুয়া প্রতিরোধে তারা সব সময় তৎপর থাকেন। অনেকের পরিবারও এসব নিয়ে অভিযোগ করে। তবে পুলিশ অভিযোগ পেলেই ব্যবস্থা নেয়।

সর্বশেষ খবর