রবিবার, ৬ অক্টোবর, ২০১৯ ০০:০০ টা
দুই দলের সম্মেলনে পরিবর্তনের হাওয়া

নেতৃত্বে আসবেন ত্যাগী-তরুণরা ছোট হবে বিএনপির নির্বাহী কমিটি

মাহমুদ আজহার

নেতৃত্বে আসবেন ত্যাগী-তরুণরা ছোট হবে বিএনপির নির্বাহী কমিটি

আগামী বছরের শুরুর দিকে দলের সপ্তম জাতীয় কাউন্সিলের কথা ভাবছে বিএনপি। দলটি আশা করছে, খুব শিগগিরই কারাবন্দী বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া মুক্তিলাভ করবেন। তাঁর নেতৃত্বেই কাউন্সিল করতে চায় দলটি।

বিএনপির নীতিনির্ধারক পর্যায়ের একাধিক সূত্রমতে, এবারের কাউন্সিলে জাতীয় নির্বাহী কমিটির আকার ছোট হতে পারে। কোনো পর্যায়ের কমিটিই ‘ঢাউস’ হবে না। কমিটি হবে অপেক্ষাকৃত তারুণ্যনির্ভর। বিগত আন্দোলন সংগ্রামে সক্রিয় থাকা নেতারাই থাকবেন সামনের সারিতে। নিষ্ক্রয় বা বিতর্কিত নেতাদের বাদ দেওয়া হবে। এরই মধ্যে কমিটিতে থাকা নানাভাবে ‘অযোগ্য’ নেতাদের তালিকা তৈরির কাজ শুরু হয়েছে। সর্বশেষ ২০১৬ সালের ১৯ মার্চ দলের ষষ্ঠ জাতীয় কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হয়। প্রায় সাত মাস ধরে মেয়াদোত্তীর্ণ নির্বাহী কমিটি দিয়েই চলছে দলটি। দলের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী তিন বছর পরপর কাউন্সিল করার কথা। কিছুদিন আগে এক অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর গণমাধ্যমকে বলেছিলেন, ‘শিগগিরই দলের সপ্তম জাতীয় কাউন্সিল হবে।’ এরপর আর কোনো প্রস্তুতি দেখা যায়নি। বিএনপির একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়, আগামী বছরের শুরুতে কাউন্সিল করার ব্যাপারে লন্ডন থেকে বার্তা দেওয়া হয়েছে। সেই সঙ্গে বিগত আন্দোলন সংগ্রামে কারা সক্রিয়, কারা নিষ্ক্রিয়, কারা সরকারের সঙ্গে ‘আঁতাত’ করে চলেন তাদেরও পৃথক তালিকা তৈরি করতে বলা হয়। নতুন বছরের শুরুর দিকে কাউন্সিলের রোডম্যাপ নিয়েই এগোচ্ছে বিএনপি। এর আগেই জেলা বিএনপি ও দলের অঙ্গসংগঠন গোছানোর নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়। বিএনপির সাংগঠনিক ৮১ জেলার মধ্যে অর্ধশত জেলায় কমিটি হয়েছে। এর মধ্যে ৩৭টি জেলায় আহ্বায়ক বা আংশিক কমিটি। সব কমিটিই ডিসেম্বরের মধ্যে সম্পন্ন করতে বলা হয়েছে।

বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘আমরা এখন দল গোছানোয় মনোযোগী। বিএনপির সাংগঠনিক জেলার পাশাপাশি অঙ্গসংগঠনের কমিটি পুনর্গঠন করা হচ্ছে। এরপর যথাসময়ে দলের কাউন্সিল করা হবে।’ বিএনপির সিনিয়র এক নেতা জানান, কেন্দ্র থেকে তৃণমূল পর্যন্ত কাউন্সিলের মাধ্যমে কমিটি দেওয়ার চিন্তাভাবনা চলছে। এবার কেন্দ্র থেকে আর কোনো কমিটি চাপিয়ে দেওয়া হবে না। বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনগুলোয় একই আদলে কমিটি গঠন করা হবে। জানা গেছে, এবারের কাউন্সিলে শীর্ষ পর্যায়ের তিন পদে চমকের সম্ভাবনা কম। পরিবর্তন আসতে পারে দলের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারক ফোরাম স্থায়ী কমিটিতে। অসুস্থ নেতাদের বাদ দেওয়া হবে। পূরণ করা হবে শূন্যপদগুলো। এ ক্ষেত্রে নতুন মুখ স্থান পাবে। ভাইস চেয়ারম্যান, উপদেষ্টা পরিষদ, যুগ্মমহাসচিব, সাংগঠনিক সম্পাদক ও সম্পাদকীয় পদগুলোয় পরিবর্তন আসার আভাস পাওয়া গেছে। এসব পদে আসতে পারে একঝাঁক নতুন মুখ। সূত্র জানায়, স্থায়ী কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত হওয়ার আলোচনায় আছেন দলের ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান, মেজর (অব.) হাফিজউদ্দিন আহমদ, শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন, বরকত উল্লা বুলু, মো. শাহজাহান, অধ্যাপক এ জেড এম জাহিদ হোসেন, আবদুল আউয়াল মিন্টু, সিনিয়র যুগ্মমহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, জহির উদ্দিন স্বপন। বিএনপিতে আকর্ষণীয় একটি পদ হচ্ছে সিনিয়র যুগ্মমহাসচিব। দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ওই পদে থেকেই এখন ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান। এরপর দলের বর্তমান মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরও ওই পদে ছিলেন। বর্তমানে ওই পদে আছেন দফতর সম্পাদকের দায়িত্বে থাকা রুহুল কবির রিজভী। তিনি স্থায়ী কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তাই ওই পদপ্রত্যাশী বিএনপির একঝাঁক তরুণ নেতা। বিএনপির যুগ্মমহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘আগামীতে যথাসময়ে কাউন্সিল হবে বলে আমরা মনে করি। তবে এর আগেই চেয়ারপারসন মুক্তি পাবেন বলে আশা করছি। তাঁর নেতৃত্বেই কাউন্সিল করতে চাই। কাউন্সিলে সব কমিটিতেই যেন যোগ্য ও ত্যাগীরা মূল্যায়িত হন, সেটাই আমাদের চাওয়া।’

সর্বশেষ খবর