মঙ্গলবার, ৮ অক্টোবর, ২০১৯ ০০:০০ টা

বন্ধুত্বের ফাঁদে

মির্জা মেহেদী তমাল

বন্ধুত্বের ফাঁদে

মাসুদ আলমের সঙ্গে মনি বেগমের পরিচয় হয়। তাদের মধ্যে ব্যবসায়িক সম্পর্ক গড়ে ওঠে। ঘটনার দিন মাসুদ আলম ও তার বন্ধু সাইফুল ইসলাম (৩৩) কিছু ভারতীয় শাড়ি কেনার জন্য মনি বেগমের সঙ্গে দেখা করতে যান। তখন মনি বেগম ও তার সহযোগীরা তাদের রাজধানীর যাত্রাবাড়ীর পূর্ব ধলপুর এলাকায় একটি ফ্ল্যাটে আটকে রাখে। ১ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে এবং তাদের কিল-ঘুষি মেরে দা-বঁটি দেখিয়ে জানে মেরে ফেলার ভয় দেখায়। তারা মাসুদ আলম ও সাইফুলের ছবি তোলে। একপর্যায়ে ওই মনি বেগমসহ অন্যরা পাশের কক্ষে চলে গেলে মাসুদ আলম কৌশলে তাদের অপহরণের বিষয়টি র‌্যাবকে ফোনে জানান। তাদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে ওই ফ্ল্যাটে অভিযান চালায় র‌্যাব ১০, ক্রাইম প্রিভেনশন স্পেশাল কোম্পানি। র‌্যাব এ সময় দুজনকে উদ্ধার ও অপহরণকারী চক্রের ৩ সদস্যকে আটক করে। ঘটনাটি কয়েক সপ্তাহ আগেকার।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মোবাইল, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক কিংবা বিভিন্ন মাধ্যমে বিত্তশালী ও ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বন্ধুত্ব গড়ে তোলে চক্রের নারী সদস্যরা। বাসায় ডেকে নিয়ে তোলা হয় আপত্তিকর ছবি। দাবি করা হয় লাখ লাখ টাকা। ইতিমধ্যে সেখানে হাজির হয়ে ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দেওয়া কিংবা গণমাধ্যমে প্রকাশের ভয় দেখায় চক্রের সদস্য সাংবাদিক পরিচয়ধারী প্রতারক। লোকলজ্জার ভয়ে ঘটনার শিকার ব্যক্তিরা টাকা দিয়ে মুক্তি পান। এমন চক্রের সদস্যরা প্রায়শই গ্রেফতার হয়। কিন্তু তাদের তৎপরতা কমছে না। বছরের পর বছর প্রতারকদের খপ্পরে পড়ে সর্বস্বান্ত হচ্ছেন সাধারণ মানুষ। এমন ঘটনা শুধু ঢাকাতেই নয়, সারা দেশেই।

চট্টগ্রামে গ্রেফতার হয় দিদার ও ফাতেমা নামে এক দম্পত্তি। তারা শহরে বাসাভাড়া করে থাকত। পুলিশ তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করে নানা ঘটনা জানতে পারে। পুলিশ জানায়, তাদের বাসার বসার ঘরে কিছু আসবাব রাখা হয়। বাকিগুলো খালি থাকে। তাদের চক্রের নারী সদস্যরা টার্গেট করে ব্যবসায়ী, চাকরিজীবীসহ বিত্তশালীদের সঙ্গে বন্ধুত্ব গড়ে তোলে। একপর্যায়ে বাসায় আসার নিমন্ত্রণ জানায়। আসার পর নারী সদস্যদের দিয়ে আপত্তিকর ছবি তোলা হয়। আবার কখনো ইয়াবাসহ বিভিন্ন মাদক দিয়ে ফাঁসিয়ে দেয় তারা। চক্রের সদস্যরা পুলিশ ও সাংবাদিক পরিচয়ে সেই বাসায় যায়। একদিকে ছবি তুলে ছাপানোর হুমকি, অন্যদিকে পুলিশ পরিচয়ে থানায় নিয়ে যাওয়ার তোড়জোড়। লোকলজ্জার ভয়ে তারা টাকা দিতে বাধ্য হন। কেউ পুলিশ কিংবা কাউকে বিষয়টি জানান না। একটি বাসায় এভাবে কয়েকটি ঘটনা ঘটার পর চক্রের সদস্যরা দ্রুত বাসা পরিবর্তন করে ফেলে। বাড়ির মালিক বাসায় আসবাব নিয়ে আসার কথা বললে নানা টালবাহানা করতে থাকে।

চট্টগ্রামের নূপুর মার্কেটের এক ব্যবসায়ীকে সম্প্রতি কাজীর দেউড়ি এলাকা থেকে পুলিশ পরিচয়ে অপহরণ করে নিয়ে যায় চক্রের সদস্যরা। পরে তাকে নগরের চশমা হিলের একটি বাসায় আটকে রাখা হয়। সেখানে তার সঙ্গে চক্রের নারী সদস্যদের আপত্তিকর ছবি তুলে রাখা হয়। এগুলো প্রকাশের হুমকি দেয় সাংবাদিক পরিচয়ে চক্রের এক সদস্য। তারা দুই লাখ টাকা দাবি করলেও ভুক্তভোগীর এক আত্মীয়ের মাধ্যমে ৫০ হাজার টাকা দিয়ে মুক্তি পান ওই ব্যবসায়ী। পরে বিষয়টি মৌখিকভাবে কোতোয়ালি থানার পুলিশকে জানানোর পর অভিযান শুরু হয়। নগরের বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে চক্রের পাঁচ সদস্যকে গ্রেফতার করা হয়।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর