বুধবার, ৯ অক্টোবর, ২০১৯ ০০:০০ টা

বিসর্জনে দেবীকে বিদায়

নিজস্ব প্রতিবেদক

বিসর্জনে দেবীকে বিদায়

প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে শেষ হলো বাঙালি সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা। গতকাল বিকালে ঢাকের বাদ্য আর ভক্তদের সিঁদুর খেলা শেষে বিসর্জনের মধ্য দিয়ে মর্ত্য ছেড়ে কৈলাসে ফিরে গেলেন দেবী দুর্গা। যাওয়ার আগে দিয়ে গেলেন ‘আসছে বছর আবার হবে’ এই বার্তা।

বাঙালি হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় সার্বজনীন এ উৎসবে দুষ্টের দমন শিষ্টের পালনের বার্তা নিয়ে মর্ত্যে আসেন দেবী। পাঁচ দিনের উৎসব শেষে দশমী তিথিতে দর্পণ বিসর্জনের মধ্য দিয়ে শেষ হলো দুর্গাপূজার আনুষ্ঠানিকতা। অশুভ শক্তির বিনাশে যে মঙ্গলবার্তা নিয়ে দেবী দুর্গার আগমন, দশমীর আনুষ্ঠানিকতা শেষে তার বিদায় বেলা তাই ছিল বেদনার্ত। গতকাল দুপুর সোয়া ১২টায় রাজধানীর শ্রী শ্রী ঢাকেশ্বরী মন্দিরে সিঁদুর খেলার উদ্বোধন করেন ভারতীয় হাইকমিশনার রিভা গাঙ্গুলী দাশ। এর আগে ১২টার দিকে রক্তদান কর্মসূচি উদ্বোধন করেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) উপাচার্য অধ্যাপক ডা. কনক কান্তি বড়ুয়া। এরপর ঢাক-ঢোলের আওয়াজের সঙ্গে নাচ, গানে মেতে ওঠেন হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা।

দুপুর গড়াতেই ম-পে ম-পে বেজে ওঠে দেবী বিদায়ের সুর। রাজধানীর দুই শতাধিক পূজা ম-পের প্রতিমা বিসর্জনের জন্য নিয়ে যাওয়া হয় বুড়িগঙ্গা, তুরাগ ও বালু নদীতে। দশমী পূজা শেষে বিকাল ৪টার দিকে পলাশী মোড় থেকে শুরু হয় মূল বিসর্জন শোভাযাত্রা। বিভিন্ন ম প প্রতিমা বিসর্জনের জন্য মূল শোভাযাত্রায় এসে যুক্ত হয়। প্রতিমাবাহী ট্রাকের শেষ অংশটি ছিল ঢাকেশ্বরী মন্দির পর্যন্ত। শোভাযাত্রাটি পলাশী বাজার-জগন্নাথ হল-কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার-দোয়েল চত্বর-শিক্ষাভবন, বেগম সুফিয়া কামাল হল, পুলিশ হেডকোয়ার্টার, গুলিস্তান, নবাবপুর রোড, পাটুয়াটুলী হয়ে বুড়িগঙ্গার ওয়াইজঘাটে পৌঁছায়। এরপর শুরু হয় দেবী বিসর্জন। এ ছাড়া ঢাকার অনেক পূজাম-পের দেবী বিসর্জন দেওয়া হয় তুরাগ ও বালু নদীতে। বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক নির্মল কুমার চ্যাটার্জি বলেন, এ বছর সারা দেশে ৩১ হাজার ৩৯৮টি পূজাম পে দুর্গাপূজা পালিত হয়। এর মধ্যে ঢাকাতেই হয় ২৩৭টি পূজাম প। কেন্দ্রীয় মন্দির ঢাকেশ্বরীর পুরোহিত রণজিৎ চক্রবর্ত্তী বলেন, দশমীর সকালে দেবী দুর্গার দশমী বিহিত পূজা শেষে দর্পণ বিসর্জন করা হয়। উপবাস থেকে অঞ্জলি প্রদান করেন ভক্তরা। দুর্গতিনাশিনী এবার এসেছিলেন ঘোটক অর্থাৎ ঘোড়ায় চড়ে, ফিরেও যান ঘোড়ায় চড়ে। প্রতি বছরের মতো এবারও রাজধানীর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকাতে তৈরি হয় দৃষ্টিনন্দন পূজাম-প। বসুন্ধরা সর্বজনীন পূজা উদযাপন কমিটির সাধারণ সম্পাদক পবিত্র সরকার বলেন, প্রতিমা ও আলোকসজ্জার দিক দিয়ে বসুন্ধরা পূজাম-প প্রতি বছর ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে সেরা তিনের মধ্যে থাকে। ম-পে প্রতিদিনই ধুপতি নাচ, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন ছিল। বসুন্ধরা এলাকা ছাড়াও বাইরে থেকে অসংখ্য মানুষ পূজা দেখতে এসেছে। আগতদের জন্য প্রসাদের পাশাপাশি বিভিন্ন খাবারের ব্যবস্থা ছিল। পুলিশ সর্বোচ্চ নিরাপত্তা দিয়েছে। বিকালে ম-প থেকে শোভাযাত্রাসহ আশুলিয়ায় গিয়ে আমরা দেবীকে বিসর্জন দিয়েছি। গতকাল বিজয়া দশমীতে ‘বিহিত পূজা’ আর ‘দর্পণ বিসর্জনের’ মধ্য দিয়ে দুর্গাপূজার শাস্ত্রীয় সমাপ্তি ঘটে। শেষ মুহূর্তটা সিঁদুর মেখে হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা নিজেদের মতো করে উৎযাপন করেন দেবীর বিদায়। এদিন সকালে ম-পে ম-পে ভক্ত-পূজারিরা মায়ের চরণে সিঁদুর মাখিয়ে দেন। এরপরই শুরু নিজেদের মধ্যে সিঁদুর খেলা। দেবীর বিসর্জনের মধ্য দিয়ে শেষ হয় সেই আনন্দ-উচ্ছ্বাস আর সর্বজনীন দুর্গাপূজার আয়োজন।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর