বুধবার, ৯ অক্টোবর, ২০১৯ ০০:০০ টা

যুবকের সম্পদ বেচে পাওনা মেটানো হবে গ্রাহকের

বসানো হতে পারে প্রশাসক

মানিক মুনতাসির

সুখবর পেতে যাচ্ছেন যুবকের ক্ষতিগ্রস্ত গ্রাহকরা। যুব কর্মসংস্থান সোসাইটি-যুবকের ক্ষতিগ্রস্ত গ্রাহকদের পাওনা মিটিয়ে দেওয়ার উদ্যোগ নিতে যাচ্ছে সরকার। যুবকের সম্পদ মূল্যায়ন ও বিক্রির জন্য খুব শিগগিরই একজন প্রশাসক নিয়োগ করা হতে পারে। অর্থ বিভাগ চাইছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে সমস্যার সমাধান হোক। তাদের মতে, যুবকের মালিকানায় সারা দেশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা সম্পদগুলো বিক্রি করে গ্রাহকদের পাওনা পরিশোধ সম্ভব। সূত্র জানায়, ক্ষতিগ্রস্ত গ্রাহকদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে এ ধরনের সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছে সরকার। সারা দেশে যুবকের প্রায় ৭ হাজার কোটি টাকার সম্পদ রয়েছে। আর যুবকের কাছে গ্রাহকদের পাওনা ৩ হাজার কোটি টাকারও কম।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘আমরা চাই আর্থিক খাতে কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা বা সমস্যা থাকবে না। হলমার্ক, বিসমিল্লাহ গ্রুপ আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে। আর যুবক ইস্যুটিও বেশ পুরনো। গ্রাহকরা আমাদের কাছে আবেদন করেছেন। এর সঙ্গে জনস্বার্থের বিষয়টি জড়িত। তাই এ সম্পর্কে ভালোভাবে জানার চেষ্টা করছি। গ্রাহকদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে বিষয়টি সমাধানের জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া যাবে। তবে এটি সময়সাপেক্ষ।’

যুবকে ক্ষতিগ্রস্ত জনকল্যাণ সোসাইটির সাধারণ সম্পদক মাহমুদ হোসেন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, প্রধানমন্ত্রী, অর্থমন্ত্রী, বাণিজ্যমন্ত্রী, গভর্নরসহ সংশ্লিষ্ট সবার কাছে তারা নতুন করে চিঠি দিয়েছেন। সরকার আন্তরিক হলে এ সমস্যার সমাধান সম্ভব। কেননা গ্রাহকদের যে পাওনা তার কয়েক গুণ বেশি সম্পদ রয়েছে যুবকের নামে। এ ছাড়া এ-সংক্রান্ত একাধিক মামলাও চলছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও সরকার চাইলে দোষীদের সাজা দিয়ে ভুক্তভোগী ক্ষতিগ্রস্তদের পাওনা ফিরিয়ে দেওয়া সম্ভব।

সূত্র জানায়, টানা তৃতীয় মেয়াদে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর যুবকে ক্ষতিগ্রস্ত জনকল্যাণ সোসাইটির ব্যানারে প্রতিষ্ঠানটির গ্রাহকরা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল, বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুন্শি ও বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবিরের কাছে পৃথক চিঠি দেন। সে সময় সারা দেশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা যুবকের সম্পদের একটি বিবরণীও জমা দেওয়া হয়। তাতে দেখানো হয়, সারা দেশে প্রায় ৭ হাজার কোটি টাকার সম্পদ রয়েছে। এর বেশির ভাগ সম্পদ যুবকের উদ্যোক্তারা ভোগদখল করে আছেন। আবার কিছু কিছু জমি, রাবারবাগান ও সম্পদ পরিত্যক্ত অবস্থায় রয়েছে। ঢাকার পাশের নারায়ণগঞ্জেও অন্তত ৭০০ কোটি টাকার সম্পদ রয়েছে। আর শুধু ঢাকা, গাজীপুর ও সাভারেই রয়েছে প্রায় ২ হাজার কোটি টাকার সম্পদ। এর মধ্যে রয়েছে ফ্ল্যাট, বহুতল ভবন, জলাধার, কৃষিজমি ও সমতল ভূমি।

এর আগে ২০১০ সালের মার্চে যুবকের ক্ষতিগ্রস্ত গ্রাহকদের পাওনা ফেরত দিতে করণীয় নির্ধারণে অবসরপ্রাপ্ত যুগ্মসচিব মো. রফিকুল ইসলামের নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যবিশিষ্ট একটি কমিশন গঠন করা হয়। কমিশন দীর্ঘ তদন্ত শেষে প্রায় এক বছর পর সরকারের কাছে একটি প্রতিবেদন দাখিল করে। কমিশন যুবকের প্রায় ৩ হাজার কোটি টাকার সম্পদ খুঁজে পায়। কমিশনের সুপারিশমালায় সম্পদ মূল্যায়ন ও অর্থ ফেরতের আগ পর্যন্ত সম্পদ রক্ষণাবেক্ষণের জন্য একজন প্রশাসক নিয়োগ করতে বলা হয়। কিন্তু প্রায় নয় বছরেও ওই সুপারিশ বাস্তবায়িত হয়নি। ক্ষতিগ্রস্ত গ্রাহকরা আবারও প্রশাসক বসিয়ে সম্পদগুলো বিক্রি করে তাদের পাওনা ফেরতের দাবি জানিয়ে অর্থমন্ত্রীকে চিঠি দিয়েছেন।

যুবকে ক্ষতিগ্রস্ত জনকল্যাণ সোসাইটির হিসাবে সারা দেশে ৬ হাজার ১২৪ কোটি ৮০ লাখ ৬৪ হাজার টাকার সম্পদ রয়েছে। এর মধ্যে জমির পরিমাণ ৩ হাজার একর। এ ছাড়া আবাসন, বৃক্ষ, বনায়নসহ মোট প্রকল্প ১৮টি। ঢাকা, গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জসহ সারা দেশে অন্তত ১৮টি বহুতল বাড়িও রয়েছে। আর যুবকের কাছে গ্রাহকদের পাওনা মাত্র ২ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। তাই মনে করা হয় যে, সম্পদ বিক্রি করে গ্রাহকদের পাওনা ফিরিয়ে দেওয়া খুব সহজ। বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিনের নেতৃত্বাধীন তদন্ত কমিশনের দেওয়া প্রতিবেদনের তথ্যমতে, সারা দেশে যুবকের জমি রয়েছে ২ হাজার ২০০ একর। ১৮টি বাড়ি ও ১৮টি প্রকল্প; যার আর্থিক মূল্য ৩ হাজার কোটি টাকার মতো।

কিন্তু এর বাইরে যুবকে ক্ষতিগ্রস্ত জনকল্যাণ সোসাইটি মাঠ পর্যায়ে তদন্ত করে আরও ১ হাজার একর জমির সন্ধান পেয়েছে বলে অর্থমন্ত্রীকে চিঠি দিয়ে জানিয়েছে সংগঠনটি। এজন্য একজন প্রশাসক বসিয়ে এ সম্পদ বিক্রি করে ক্ষতিগ্রস্ত গ্রাহকদের পাওনা ফেরত দেওয়া সম্ভব বলে মনে করেন গ্রাহকরা।

সর্বশেষ খবর