শুক্রবার, ১১ অক্টোবর, ২০১৯ ০০:০০ টা

সম্মেলনে ব্যস্ত আওয়ামী লীগ

মহিলা শ্রমিক লীগ আগামীকাল, কৃষক লীগ ২ নভেম্বর, স্বেচ্ছাসেবক লীগ ৯ নভেম্বর শ্রমিক লীগ ১৬ নভেম্বর ও যুবলীগের সম্মেলন ২৩ নভেম্বর

শাবান মাহমুদ ও রফিকুল ইসলাম রনি

সম্মেলন ব্যস্ততা শুরু হয়েছে আওয়ামী লীগে। কেন্দ্রীয় সম্মেলনের পাশাপাশি যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, কৃষক লীগ, জাতীয় শ্রমিক লীগে স্বচ্ছ ইমেজের নতুন নেতৃত্ব সন্ধান করা হচ্ছে। পরিচ্ছন্ন ইমেজ, দক্ষ সংগঠক, দলের জন্য নিবেদিত ও পরীক্ষিতদের হাতে নেতৃত্ব তুলে দিতে চান আওয়ামী লীগের হাইকমান্ড। ছাত্রলীগ ব্যাকগ্রাউন্ড ছাড়া সহযোগী সংগঠনের শীর্ষ নেতৃত্বে কাউকে বসানো হবে না। দলের নেতা-কর্মীদের ইতিমধ্যে সাফ জানিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

গণভবন সূত্র জানিয়েছে, আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের সম্মেলন নিয়ে এবার হার্ড লাইনে দলীয় সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। নিজের মতো করেই প্রধানমন্ত্রী সাজাতে চান মূল দল ও সহযোগী সংগঠনকে। ক্যাসিনো কান্ডে জড়িয়ে যারা বিতর্কিত হয়েছেন কেউ ঠাঁই পাচ্ছেন না যুবলীগ-স্বেচ্ছাসেবক লীগে। সহযোগী ও মূল দল আওয়ামী লীগের পদ-পদবিতে ‘সিন্ডিকেট’র ব্যাপারে জিরো টলারেন্সে শেখ হাসিনা। ঠাঁই পাচ্ছেন না অনুপ্রবেশকারীরা। নেপথ্যে যদি কেন্দ্রীয় নেতারা সুপারিশ করেন তারাও চিহ্নিত হবেন দলের হাইকমান্ডের কাছে।

সূত্রমতে, আগামীকাল শনিবার রাজধানীর কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশনে আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠন মহিলা শ্রমিক লীগের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। এ ছাড়া কৃষক লীগের ২ নভেম্বর, স্বেচ্ছাসেবক লীগের ৯ নভেম্বর, শ্রমিক লীগের ১৬ নভেম্বর ও যুবলীগের সম্মেলন ২৩ নভেম্বর সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলনকেন্দ্রে এই সম্মেলন হওয়ার কথা রয়েছে। স্বেচ্ছাসেবক লীগ ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণের সম্মেলনের তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে ২৯ অক্টোবর। এ ছাড়াও আগামী ২০-২১ ডিসেম্বর আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। এই সম্মেলনকে ঘিরে বিশাল কর্মযজ্ঞ শুরু করেছে ক্ষমতাসীন দল ও সহযোগী সংগঠনের নেতারা। প্রস্তুতি হিসেবে তারা সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটি, গঠনতন্ত্র সংশোধন, পুস্তিকা প্রকাশনীসহ যাবতীয় কর্মকা  চালিয়ে যাচ্ছেন। দফায় দফায় মিটিং করছেন দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা।

এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, আসন্ন দলের জাতীয় কাউন্সিলে পরিচ্ছন্ন ও ক্লিন ইমেজের ব্যক্তিই দলে স্থান পাবেন। সহযোগী সংগঠনের ক্ষেত্রেও তাই হবে। কোনো বিতর্কিত, দুর্নীতিতে জড়িত, চাঁদাবাজদের স্থান দেওয়া হবে না।

আওয়ামী লীগ নেতারা বলছেন, দলের তৃণমূল থেকে শুরু করে কেন্দ্র পর্যন্ত সংগঠনকে নতুন করে ঢেলে সাজানোর কাজ শুরু হয়ে গেছে। এর মধ্য দিয়ে দলের থেকে যারা অপকর্ম করেছে তাদের আউট করা হবে। বিতর্কিত কাউকেই দলের নেতৃত্বস্থানীয় কোনো পদে বসানো হবে না। পদ-পদবিতে বসানো হবে দলের ত্যাগী, দক্ষ ও ক্লিন ইমেজ সম্পন্ন এবং ছাত্রলীগ করে আসা নেতা-কর্মী থেকেই। কোনো হাইব্রিড-অনুপ্রবেশকারীর স্থান আওয়ামী লীগে হবে না। কেন্দ্রীয় নেতারা বলছেন, দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্সের যে নীতি নিয়ে সরকার অভিযান চালাচ্ছে, সেটি সফলতার সঙ্গে এগিয়ে নেওয়া সম্ভব। কারণ, এর মাধ্যমে সাধারণ জনগণের পূর্ণ সমর্থন রয়েছে। রাজনীতিতে আওয়ামী লীগ আরও একধাপ এগিয়ে গেল বলে মনে করছেন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরাও।

আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা বলছেন, চলমান শুদ্ধি অভিযানে যুবলীগের ভাবমূর্তি একেবারে ধুলোয় মিশে গেছে। বিভিন্ন অনিয়মে জড়িয়ে পড়েছেন যুব নেতারা। তাদের অনেকেই অবৈধভাবে হাজার কোটি টাকা আয় করেছেন গত কয়েক বছরে। এ দিকে সম্প্রতি চাঁদাবাজির অভিযোগ ওঠার পরপরই ছাত্রলীগ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয় সংগঠনটির সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন ও সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানীকে। কিন্তু যুবলীগের ক্ষেত্রে অভিযুক্ত নেতাদের তালিকা অনেক লম্বা। সংগঠনটির কেন্দ্রীয় কমিটির শীর্ষ নেতা থেকে অন্য নেতারা, মহানগর নেতারা এমনকি জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের অনেকের নামেই অভিযোগ রয়েছে। এই অবস্থায় যুবলীগের ভাবমূর্তি পুনরুদ্ধারে সংগঠনটি ঢেলে সাজানো দরকার। সে জন্য ক্লিন ইমেজের নেতা বাছাই করা হচ্ছে। যুবলীগের সর্বশেষ সম্মেলন হয়েছে ২০১২ সালের ১৪ জুলাই।

একই অবস্থা স্বেচ্ছাসেবক লীগেরও। সংগঠনের এক নেতার বিরুদ্ধে ক্যাসিনোতে জড়িত থাকার অভিযোগ উঠেছে। সংগঠনেও নতুন নেতৃত্ব খোঁজা হচ্ছে। সূত্রমতে, ওয়ান-ইলেভেনে আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর মুক্তির আন্দোলনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের গুরুত্বপূর্ণ পদে থাকা দুই শীর্ষ নেতাকে নিয়ে জোর আলোচনা হচ্ছে। কৃষক লীগেও গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করা সাবেক এক-দুজন নেতাকে নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। কৃষক লীগের বর্তমান নেতৃত্ব পরিবর্তন হওয়ার জোর সম্ভাবনা রয়েছে।

আওয়ামী লীগ নেতারা বলছেন, টানা তিন দফায় ক্ষমতায় থাকার কারণে কিছু দুর্নীতিবাজ এর সুযোগ নিয়েছে, যার মধ্যে দলের ও সহযোগী সংগঠনের দায়িত্বশীলদের উল্লেখযোগ্য একটা অংশও জড়িয়ে পড়েছে। এসব দুর্নীতি তিন মেয়াদে ক্ষমতায় থাকা আওয়ামী লীগকে যেমন বিব্রত করছে, তেমনি উন্নয়ন অর্জনকেও ম্লান করছে। সে জন্য এবারের যে দুর্নীতিবিরোধী অভিযান শুরু হয়েছে, এর ব্যাপকতা থাকবে দীর্ঘমেয়াদে।

দলের উচ্চপর্যায়ের একাধিক সূত্র জানিয়েছে, আওয়ামী লীগের আগামী সম্মেলনে সবচেয়ে বড় চমকের দেখা মিলবে। দুর্নীতিবিরোধী অভিযানে অনেক প্রভাবশালী নেতার নামের পাশেই লাল দাগ পড়ে গেছে। দুর্নীতির সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা প্রমাণের রিপোর্ট এরই মধ্যে দলের হাইকমান্ডের নজরে এসেছে। সম্মেলনে অনেক হেভিওয়েট নেতারা পদ হারালে অবাক হওয়ার মতো কিছু থাকবে না। আবার অনেক প্রতিশ্রুতিশীল নেতা উঠে আসবেন যাদের নামের পাশে ‘ক্লিন ইমেজ’ তকমা আছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে আওয়ামী লীগের এক প্রেসিডিয়াম সদস্য বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, কেন্দ্রীয় কমিটি থেকে শুরু করে সহযোগী সংগঠনে ক্লিন ইমেজের নেতৃত্ব খুঁজছেন দলীয় সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি দক্ষ-পরীক্ষিত ও ক্লিন ইমেজের ব্যক্তিদের হাতেই দল ও সহযোগী সংগঠনের নেতৃত্ব তুলে দিতে চান। ক্যাসিনো কর্মকান্ডে যারা জড়িয়েছেন বা ইতিমধ্যে দলের ইমেজ ক্ষুণœ করেছেন তাদের আগামীতে দলে ঠাঁই দেবেন না আওয়ামী লীগ সভানেত্রী।

আওয়ামী লীগের জাতীয় সম্মেলন প্রস্তুতির সাজসজ্জা উপকমিটির আহ্বায়ক ও দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, আমরা সম্মেলন কর্মযজ্ঞ শুরু করেছি। কাল-পরশু সাজসজ্জা উপকমিটির পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করে দলীয় সভানেত্রীর কাছে দেওয়া হবে।

 

সর্বশেষ খবর