শুক্রবার, ১১ অক্টোবর, ২০১৯ ০০:০০ টা

মৌসুম ছাড়াই সুস্বাদু তরমুজ চাষ লবণাক্ত জমিতে

পাড় থেকে ৫-৬ হাত পর্যন্ত পানির ওপরে মাচা করে দেওয়া হয়েছে। বাঁশ ও লাইলন সুতা দিয়ে তৈরি মাচাতে ঝুলছে অসংখ্য তরমুজ। প্রতিটির ওজন ৩ থেকে ৫ কেজি। আর নিচে পানিতে গলদা চিংড়িসহ কার্প জাতীয় মাছও রয়েছে। একই সঙ্গে ধানও রয়েছে জমিতে

আরাফাত মুন্না, খুলনা থেকে ফিরে

মৌসুম ছাড়াই সুস্বাদু তরমুজ চাষ লবণাক্ত জমিতে

খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলার চাঁদগড়ে গ্রামের জয়ন্ত বিশ্বাস। পারিবারিক সূত্রে পাওয়া চার বিঘা ঘেরই (জমির চারপাশ উঁচু করা জমি) তার পরিবারের সদস্যদের সারা বছরের ভরণ-পোষণের একমাত্র উৎস। ২০০৪ সাল থেকে এখানে ধান ও মাছ চাষ শুরু করেন তিনি। তবে ধান ও মাছ থেকে পাওয়া আয় দিয়ে সারা বছরের ব্যয় নির্বাহ করা কষ্টই হচ্ছিল। তবে এবার জয়ন্তর মুখে হাসি ফুটেছে।

ঘেরের পারের লবণাক্ত জমিতে মৌসুম ছাড়াই তিনি ফলিয়েছেন সুস্বাদু তরমুজ। ফলনও ভালো। এরই মধ্যে লক্ষাধিক টাকার তরমুজ বিক্রি করেছেন তিনি। এখনো যা আছে তাতে আরও লাখ টাকার বিক্রি করতে পারবেন বলে জানান জয়ন্ত বিশ্বাস।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের তথ্য মতে, খুলনার ডুমুরিয়া ও বটিয়াঘাটা উপজেলায় ৩০ হেক্টর জমিতে মৌসুমের পরে তরমুজ চাষ করা হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের আড়াই লক্ষাধিক মাছের ঘেরের পাড়ে মৌসুমের পর তরমুজ চাষ সম্প্রসারিত করা গেলে এ অঞ্চলের কৃষির বৈপ্লবিক পরিবর্তনের পাশাপাশি অর্থনীতিতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। এ ছাড়া পর্যায়ক্রমে প্রযুক্তিটি দেশব্যাপী ছড়িয়ে দেওয়া গেলে বাড়তি আয়ে লাভবান হবে কৃষকই।

সরেজমিন দেখা গেছে, ঘেরের নিচে মাছ চাষ হলেও পাড় থেকে ৫-৬ হাত পর্যন্ত পানির ওপরে মাচা করে দেওয়া হয়েছে। বাঁশ ও লাইলন সুতো দিয়ে তৈরি মাচাতে ঝুলছে অসংখ্য তরমুজ। প্রতিটির ওজন ৩ থেকে ৫ কেজি। আর নিচে পানিতে গলদা চিংড়িসহ নানা কার্প জাতীয় মাছও রয়েছে। একই সঙ্গে ধানও রয়েছে জমিতে। জয়ন্ত বলেন, শুরুতে অনেক ধরনের সবজি চাষের চেষ্টা করেছি। কিন্তু জমিতে লবণাক্ততার মাত্রা অনেক বেশি থাকায় গাছ বাঁচত না। এবার মৃত্তিকা সম্পদ উন্নয়ন ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সরাসরি তত্ত্বাবধানে মৌসুমের পরে এসে তরমুজ চাষ করেছি। ভাবতেও পারিনি এমন ফলন হবে। দামও ভালো পাচ্ছি। প্রতিটি তরমুজ গড়ে ১৮০ থেকে ২০০ টাকায় বিক্রি করতে পারছি। জয়ন্ত আরও জানান, পুরো ঘের চার বিঘা হলেও ঘেরের পারে যে অংশে তরমুজ চাষ করেছেন তা ৩৫ শতাংশের বেশি হবে না। মৃত্তিকা সম্পদ ইনস্টিউিট সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশের দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিম উপকূলীয় এলাকার ১৮ জেলার ৯৩টি উপজেলার প্রায় ১০ লাখ ৫৬ হাজার হেক্টর জমি বিভিন্ন মাত্রায় লবণাক্ততায় আক্রান্ত। লবণাক্ততায় আক্রান্ত হওয়ার ফলে খরিপ-১ মৌসুমে উল্লেখযোগ্য জমি পতিত অবস্থায় থাকে। পরবর্তীতে এই উপকূলীয় এলাকার খুলনা, সাতক্ষীরা ও বাগেরহাট জেলায় আশির দশক থেকে জমির চার পাশ উঁচু করে ঘের তৈরি করে মাছ চাষ শুরু করেন কৃষকরা। তবে ওই সময় ঘেরের পাড় পতিত থাকত। ২০০৪ সালে মৃত্তিকা সম্পদ উন্নয়ন ইনস্টিটিউটের বিজ্ঞানী ও বর্তমান পরিচালক বিধান কুমার ভান্ডার বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিলের অর্থায়নে ঘেরের পাড়ের মাটি ও সার ব্যবস্থাপনার ওপর গবেষণা করেন এবং মাটি  ও সার ব্যবস্থাপনার বিভিন্ন প্রযুক্তি উদ্ভাবন করেন। এ প্রযুক্তিতে ঘেরের পাড়ের উপরিস্তরের মাটি পাড়ের ওপরে রাখার কথা বলা হয়। এ ছাড়া সুষম সার ব্যবহারের জন্য মাটি পরীক্ষা করে সার প্রদানের সুপারিশ করেন।

মৃত্তিকা সম্পদ উন্নয়ন ইনস্টিটিউটের গোপালগঞ্জ-খুলনা-বাগেরহাট-সাতক্ষীরা-পিরোজপুর কৃষি উন্নয়ন প্রকল্পের (এসআরডিআই অংগ) মাধ্যমে খুলনা জেলার ডুমুরিয়া ও বটিয়াঘাটা উপজেলার কয়েকটি স্থানে ঘেরের পাড়ে উচ্চমূল্যের ফসলের গবেষণা প্লট স্থাপন করা হয়েছে। খুলনার ডুমুরিয়া ও বটিয়াঘাটা উপজেলায় সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, তরমুজ ও অন্য ফসলের বাম্পার ফলনের দৃশ্য।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের খুলনা বিভাগীয় উপ-পরিচালক পঙ্কজ কান্তি মজুমদার বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ঘেরে তরমুজ চাষ সম্ভব। অসময়ে চাষ ব্যপক সাড়া ফেলেছে। এ ছাড়া এসআরডিআই কর্তৃক কাদার মধ্যে ড্রিবলিং করে ভুট্টা চাষও ভালো করেছে। এসআরডিআই গবেষণার মাধ্যমে যে সফলতা দেখাচ্ছে আমরা একত্রে তা মাঠে নিয়ে যেতে চাই, কৃষকরা যাতে সফলতা পায়।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর