রবিবার, ১৩ অক্টোবর, ২০১৯ ০০:০০ টা

বিদেশে পাগলা মিজানের বিলাসী জীবন

যুক্তরাষ্ট্র ও অস্ট্রেলিয়ায় আলিশান বাড়ি-গাড়ি মানি লন্ডারিং মামলায় সাত দিনের রিমান্ড

নিজস্ব প্রতিবেদক

বিদেশে পাগলা মিজানের বিলাসী জীবন

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) কাউন্সিলর হিসেবে পাওয়া সম্মানি ছাড়া দৃশ্যমান কোনো আয় না থাকলেও যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাস ও অস্ট্রেলিয়ার সিডনিতে বিলাসবহুল বাড়ি-গাড়ির মালিক হাবিবুর রহমান মিজান ওরফে পাগলা মিজান।

র‌্যাব জানিয়েছে, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে মিজান কাউন্সিলর হিসেবে ৩৬ হাজার টাকা সরকারি সম্মানির বাইরে কোনো আয়ের কথা বলতে পারেননি। কিন্তু তার বাসা থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থের চেক ও এফডিআর উদ্ধার করা হয়েছে। সেসব অর্থের বিষয়ে মিজান কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি। ১৫ বছর আগে তার ইটভাটার ব্যবসা থাকলেও এখন আলাদা কোনো আয়ের উৎস নেই। অন্যদিকে টেক্সাস ও সিডনিতে তার বিলাসবহুল বাড়ি ও গাড়ির তথ্য পেয়েছে র‌্যাব। দেশ থেকে অবৈধ আয়ের অর্থ পাচারের মাধ্যমে বিদেশে বাড়ি-গাড়ির মালিক হয়েছেন পাগলা মিজান, এমনটাই ধারণা তাদের। তার বিরুদ্ধে জেনেভা ক্যাম্পে মাদক ব্যবসাসহ সুনির্দিষ্ট কিছু অভিযোগ রয়েছে। এর মধ্যে চাঁদাবাজি ছাড়াও আছে ক্যাসিনোর সঙ্গে সম্পৃক্ততার অভিযোগ। প্রসঙ্গত, ডিএনসিসির ৩২ নম্বর ওয়ার্ডের এই কাউন্সিলরের বিরুদ্ধে মোহাম্মদপুরে মাদক ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ, চাঁদাবাজি, ফ্রীডম পার্টির সঙ্গে সম্পৃক্ততা, খুন, সন্ত্রাস, জমি দখল ও প্রভাব বিস্তারের অভিযোগ দীর্ঘদিনের। সংশ্লিষ্টদের ধারণা, দীর্ঘদিন ধরে অবৈধ পন্থায় বিপুল পরিমাণ অর্থ-সম্পদের মালিক হয়েছেন তিনি। র‌্যাব-২-এর সিইও লে. কর্নেল আশিক বিল্লাহ জানান, মিজানের বিরুদ্ধে দুটি মামলা হয়েছে। এর মধ্যে শ্রীমঙ্গলে একটি অস্ত্র মামলা ও রাজধানীর মোহাম্মদপুরে মানি লন্ডারিং মামলা। এদিকে গতকাল মোহাম্মদপুর থানায় মানি লন্ডারিং আইনে করা মামলায় মিজানকে আদালতে হাজির করা হলে তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সাত দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন বিচারক। প্রিমিয়ার ব্যাংক থেকে বৃহস্পতিবার ৬৮ লাখ টাকা উত্তোলনের বিষয়ে সংশ্লিষ্টরা জানান, পাগলা মিজানকে এই টাকার বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে একাধিকবার ভিন্ন ভিন্ন তথ্য দিয়েছেন। একেকবার একেকজনের কাছে টাকা রেখেছেন বলে জানিয়েছেন। প্রাথমিকভাবে এই টাকা উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। ধারণা করা হচ্ছে, দেশ থেকে পালিয়ে যাওয়ার জন্য তিনি এই বিপুল পরিমাণ টাকা উত্তোলন করেছিলেন। পরবর্তী তদন্তে বিষয়টি স্পষ্ট হওয়া যাবে। অভিযানে থাকা এক কর্মকর্তা জানান, শ্রীমঙ্গলে বান্ধবীর বাসায় আত্মগোপনে ছিলেন পাগলা মিজান। আটকের সময় নিজের পরিচয় গোপনের চেষ্টা করেন তিনি। তিনি নিজেকে বার বার মিজান বলে অস্বীকার করেন এবং হাবিব বলে পরিচয় দেন। এদিকে মোহাম্মদপুরে পাগলা মিজানের বাসায় অভিযানের সময় পাগলা মিজানের ফাঁসি দাবিতে মিছিল করেছেন স্থানীয়রা। তাদের অভিযোগ, জেনেভা ক্যাম্পে মাদক ব্যবসা, অবৈধ বিদ্যুৎ ও গ্যাস সংযোগের ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করতেন পাগলা মিজান। মিজানের বেপরোয়া চাঁদাবাজিতে সবাই অতিষ্ঠ। র‌্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সারওয়ার আলম জানান, সুনির্দিষ্ট অভিযোগ থাকায় মিজানকে আটক করা হয়েছে। মাদক-ক্যাসিনো ব্যবসাসহ চাঁদাবাজি-টেন্ডারবাজির সব অভিযোগ তদন্ত করে দেখা হবে। একই সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যা-চেষ্টার হামলা এবং অতীত জীবনে ফ্রীডম পার্টির সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার বিষয়টি গুরুত্বসহকারে দেখা হবে।

হত্যাচেষ্টার কথা জানতেন পাগলা মিজান : সামরিক শাসক এইচ এম এরশাদের শাসনামলে বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারী কর্নেল সৈয়দ ফারুক রহমান ও কর্নেল বজলুর রশীদের নেতৃত্বে ফ্রীডম পার্টি গঠিত হয়েছিল। এ কথিত দলটির প্রাইম টার্গেট ছিলেন বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। টার্গেট বাস্তবায়নে তারাই সশস্ত্র হামলা চালিয়েছিলেন বঙ্গবন্ধুর ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের সেই বাসভবনে। নিরাপত্তারক্ষী হাবিলদার জহিরুল হক ও কনস্টেবল জাকির হোসেন জীবনবাজি রেখে সেই হামলা প্রতিহত করেছিলেন। সেদিন প্রাণে বেঁচে গিয়েছিলেন জাতির জনকের রক্তের উত্তরাধিকার। কিন্তু সেদিনের সেই টার্গেট কিলিং মিশনে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেছিলেন ফ্রীডম পার্টির মোহম্মদপুর-ধানমন্ডি থানার সমন্বয়ক মোস্তফিজুর রহমান মোস্তফা। এ মোস্তফারই বড় ভাই মোহাম্মদপুর থানা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রহমান মিজান ওরফে পাগলা মিজান। প্রায় ২০ বছর আগে তিনি আদালতকে জানিয়েছিলেন বিস্ফোরক এক তথ্য! নিজের ছোট ভাই মোস্তফা হত্যা মামলায় আদালতে সাক্ষী দিতে গিয়ে তিনি জবানবন্দিতে বলেছিলেন, ‘আমার ভাই মোস্তফার সঙ্গে আমার সার্বক্ষণিক যোগাযোগ ছিল। মোস্তফা কী কাজ করত কোথায় যেত এসব বিষয়ে আমার মোটামুটি ধারণা ছিল।’

তার এ সরল স্বীকারোক্তি থেকেই স্পষ্ট হয়ে ওঠে ১৯৮৯ সালে খুনির দল ফ্রীডম পার্টি ধানমন্ডি ৩২ নম্বর সড়কের বঙ্গবন্ধু ভবনে শেখ হাসিনাকে হত্যার উদ্দেশ্যে যে পরিকল্পিত সশস্ত্র হামলা করবে সেই বিষয়টি সম্পর্কে আগেই জানতেন পাগলা মিজান।

সর্বশেষ খবর