রবিবার, ১৩ অক্টোবর, ২০১৯ ০০:০০ টা
কালের কণ্ঠ গোলটেবিলে পূর্তমন্ত্রী

স্থাপনা নির্মাণে হচ্ছে সারা দেশের মাস্টারপ্ল্যান

নিজস্ব প্রতিবেদক

শুধু শহর নয়, গ্রামেও কৃষিজমি ধ্বংস করে ইচ্ছামতো বাড়ি বানানো যাবে না। সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের অনুমতি নিয়ে পরিকল্পনামাফিক করতে হবে। এ জন্য স্থাপনা নির্মাণে সারা দেশকে নিয়ে একটা মাস্টারপ্ল্যান হচ্ছে। আগামী ১০০ বছর পর কী হবে সেই চিন্তা মাথায় রেখে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্যোগে দেশে প্রথমবারের মতো ডেল্টা প্ল্যান তৈরির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। গতকাল বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় ইডব্লিউএমজিএল’র কনফারেন্স রুমে আয়োজিত ‘বাসযোগ্য নগর গঠনে করণীয়’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম এসব কথা বলেন। দৈনিক কালের কণ্ঠ ও ওরিয়ন গ্রুপ যৌথভাবে বৈঠকটির আয়োজন করে। সঞ্চালনা করেন কালের কণ্ঠ সম্পাদক ইমদাদুল হক মিলন। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন কালের কণ্ঠের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মোস্তফা কামাল। গণপূর্ত মন্ত্রী বলেন, একবার স্থাপনা নির্মাণ হয়ে গেলে চাইলেও জায়গা পাওয়া যাবে না। তাই সবকিছু পরিকল্পনামাফিক করতে হবে। এ জন্য সারা দেশকে নিয়ে মাস্টারপ্ল্যান হচ্ছে। বাসযোগ্য নগর গঠনে প্রভাবশালী ব্যক্তিরা বড় বাধা মন্তব্য করে মন্ত্রী বলেন, সম্প্রতি জরিপকালে ঢাকায় এক হাজার ৮১৮টি বহুতল ভবন পাওয়া গেছে যেগুলো নির্মাণে কোনো আইনের ধার ধারেনি মালিকপক্ষ। ভবনগুলোর মালিকরা অর্থনৈতিকভাবে, রাজনৈতিকভাবে প্রতিষ্ঠিত ব্যক্তি। এসব ভবনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে গেলে মন্ত্রী, এমপি, রাজনৈতিক নেতাদের ফোন আসে। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী অভয় দিয়েছেন। বলেছেন, ‘তদবির যেই করুক আমাকে জানাবে।’ এ কারণেই তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পেরেছি। রূপপুরের বালিশকান্ডের ঘটনায় ৩৪ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ পেয়েছি। ৩০ জন আমার মন্ত্রণালয়ের। সবার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিয়েছি। বরখাস্ত করেছি। আগে ভবন নির্মাণে একটা প্ল্যান পাস করাতে ১৬টা স্তর পার করতে হতো। দীর্ঘসূত্রিতায় মানুষের ভোগান্তি বাড়ত। আমি সবার সঙ্গে আলোচনা করে ১২টি স্তর বাদ দিয়েছি। এতে ২ শতাংশ মানুষ অসন্তুষ্ট হলেও ৯৮ ভাগ মানুষ প্রশংসা করেছে। রাজউক চেয়ারম্যান ড. সুলতান আহমেদ বলেন, কর্মস্থলে যোগ দেওয়ার পর থেকেই রাজউকের সেবাগ্রহীতাদের হয়রানি বন্ধের লক্ষ্যে কাজ করছি। সব সেবা অনলাইনভিত্তিক করার উদ্যোগ নিয়েছি। নকশা অনুমোদনের জন্য আর রাজউকে আসতে হবে না। অনলাইনে জমা দেবেন, মেইলে আমরা নকশা পাঠিয়ে দেব। রিয়েল এস্টেট অ্যান্ড হাউজিং অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (রিহ্যাব) সভাপতি আলমগীর শামসুল আলামিন বলেন, ঢাকাকে নতুন করা কঠিন। নতুন শহরগুলো পরিকল্পনামাফিক করতে হবে।  বাংলাদেশ ল্যান্ড ডেভেলপারস অ্যাসোসিয়েশনের (বিএলডিএ) মহাসচিব মোস্তফা কামাল মহিউদ্দীন বলেন, পরিকল্পিত নগরী গড়তে সবার পরামর্শ নিয়ে ডিটেইল এরিয়া প্ল্যান বাস্তবায়ন করতে হবে। যারা আইন মেনে স্থাপনা করছে তাদেরকে পুরস্কৃত করতে হবে। যারা আইন মানছে না তাদের শাস্তি দিতে হবে। ইমদাদুল হক মিলন বলেন, ষাটের দশকে যে পরিচ্ছন্ন ঢাকা দেখেছি, আজ তা হারিয়ে গেছে। মাঠ নেই, খাল ভরাট হয়ে গেছে। আগে বাইসাইকেল লেন ছিল, এখন নেই। গাছ নেই। ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য আমরা এ কেমন ঢাকা রেখে যাচ্ছি? দিল্লির মতো শহর যদি গাছে ভর্তি থাকতে পারে, ঢাকা কেন পারবে না? অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন, জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রাশিদুল ইসলাম, হাউজিং অ্যান্ড বিল্ডিং রিসার্চ ইনস্টিটিউটের প্রিন্সিপাল রিসার্চ অফিসার আকতার হোসেন সরকার, গণপরিবহন বিশেষজ্ঞ ড. এস এম সালেহ উদ্দিন, রাজউকের ড্যাপ প্রকল্প পরিচালক আশরাফুল ইসলাম, আরবান রিজিলেন্স প্রোগ্রামের প্রকল্প পরিচালক আবদুল লতিফ হেলালী, বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সের সাধারণ সম্পাদক ড. আদিল মোহাম্মদ খান, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাজহারুল ইসলাম, ডিএনসিসির প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা কমোডর মঞ্জুর আহমেদ, অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী শরিফ উদ্দিন, ডিএসসিসির প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা এয়ার কমোডর মো. জাহিদ হোসেন, প্রধান প্রকৌশলী রেজাউল করিম, ঢাকা কেন্দ্রের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আজিম বখশ, ওরিয়ন গ্রুপের অ্যাসিস্ট্যান্ট ভাইস প্রেসিডেন্ট উইং কমান্ডার (অব.) এরফানুল আজিম, ইকরাম এইচ খান, বুয়েটের দুর্ঘটনা গবেষণা ইনস্টিটিউটের শিক্ষক কাজী সাইফুন নেওয়াজ, ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের পরিচালক লে. কর্নেল এস এম জুলফিকার রহমান প্রমুখ।

সর্বশেষ খবর