রবিবার, ১৩ অক্টোবর, ২০১৯ ০০:০০ টা
সুজনের গোলটেবিলে বক্তারা

খেলাপি ঋণ নিয়ে পাতানো খেলা

নিজস্ব প্রতিবেদক

দেশে অর্থনৈতিক দুর্বৃত্তায়ন টিকে আছে রাজনৈতিক দুর্বৃত্তায়নের কারণে। খেলাপি ঋণ নিয়ে একটা পাতানো খেলা চলছে। এই খেলা বন্ধ করে ব্যাংকিং খাতে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে ব্যাংকিং সংস্কার কমিশন গঠন করার দাবি জানিয়েছেন অর্থনীতিবিদরা।  জাতীয় প্রেস ক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে গতকাল ‘সুজন-সুশাসনের জন্য নাগরিক’ আয়োজিত গোলটেবিল বৈঠকে এসব কথা বলেন বক্তারা। ‘ব্যাংকিং খাত নিয়ে উল্টোপাল্টা পদক্ষেপ বন্ধ করুন : ব্যাংকিং সংস্কার কমিশন করুন’ শীর্ষক এ সভায় সভাপতিত্ব করেন সুজন-সভাপতি ও সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা এম হাফিজউদ্দিন খান। সভায় বক্তব্য রাখেন সাবেক তথ্য প্রতিমন্ত্রী অধ্যাপক আবু সাইয়িদ, সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব আলী ইমাম মজুমদার, বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর খোন্দকার ইব্রাহীম খালেদ, কলামিস্ট সৈয়দ আবুল মকসুদ, অগ্রণী ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ আবু নাসের বখতিয়ার আহমদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক রাশেদ আল তিতুমীর, ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা, কাফী আল রতন প্রমুখ। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির প্রাক্তন সভাপতি অধ্যাপক ড. মইনুল ইসলাম। স্বাগত বক্তব্য রাখেন সুজন সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার। ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, অর্থনৈতিক দুর্বৃত্তায়ন টিকে আছে রাজনৈতিক দুর্বৃত্তায়নের কারণে। অর্থনৈতিক দুর্বৃত্তায়ন দূর করতে হলে রাজনীতিকে নীতি আদর্শভিত্তিক করতে হবে। নির্বাচনের মাধ্যমে সরকার প্রতিষ্ঠিত করতে হবে। খোন্দকার ইব্রাহীম খালেদ বলেন, ক্যাসিনো ব্যবসা করে অনেকে যেমন সম্রাট হচ্ছে তেমনি ব্যাংকিং সেক্টরে চুরি ডাকাতি করেও অনেকে সম্রাট হচ্ছেন। তিনি আরও বলেন, ক্যাসিনো ব্যবসা কি বাংলাদেশে প্রথম? দীর্ঘদিন ধরেই চলছে অথচ কেউ ধরেনি। প্রধানমন্ত্রী যখন বললেন তখন ধরা গেল। আর্থিক খাতের ক্যাসিনোগুলোও প্রধানমন্ত্রী চাইলে ধরতে পারবেন। সৈয়দ আবুল মকসুদ বলেন, ব্যাংকিং খাত সোজা রাখার একমাত্র উপায় হলো গণতন্ত্র এবং ন্যায়বিচারকে সোজা পথে আনা। আমরা ব্যাংকে টাকা রাখা বন্ধ করে দিলে তারা আর ব্যাংক থেকে চুরি করতে পারবে না। অধ্যাপক আবু সাইয়িদ বলেন, রাজনীতি শুদ্ধ না হলে কোনো কিছু শুদ্ধ হবে না। সবাই মিলে ঐক্যবদ্ধভাবে রাষ্ট্র মেরামত করতে হবে। ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা এমপি বলেন, আজকে গ্রাহকরা যদি টাকা ফেরত চায় তাহলে ব্যাংক দেউলিয়া হতে বাধ্য, অর্থনীতি ধসে পড়তে বাধ্য। রাজনৈতিক পরিচয়ে ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ গঠন, নতুন ব্যাংক অনুমোদন দেওয়া হচ্ছে এবং ব্যাংক লুটপাটকারীদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না। ব্যাংকিং খাতের মূল সমস্যাবলির সমাধানের জন্য কয়েক দফা প্রস্তাব তুলে ধরেন।

এর মধ্যে রয়েছে, তিন বছরের জন্য একটি খেলাপি ঋণ ট্রাইব্যুনাল প্রতিষ্ঠা করে প্রত্যেক ব্যাংকের শীর্ষ ১০ জন ঋণখেলাপিকে চূড়ান্ত বিচারে দ্রুত শাস্তির আওতায় নিয়ে আসা। ব্যাংকিং খাতের জন্যে আলাদাভাবে ন্যায়পাল নিয়োগেরও ব্যবস্থা করা। মন্দঋণ আদায়ের জন্য ‘ডেট রিকভারি এজেন্সি’ কিংবা ‘অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানি’ গঠন। বাংলাদেশ ব্যাংকের স্বায়ত্তশাসন সমুন্নত করার প্রয়োজনে অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগকে বাতিল করা।

সর্বশেষ খবর