সোমবার, ১৪ অক্টোবর, ২০১৯ ০০:০০ টা

লাখ টাকার ভূমি সাড়ে তিন কোটি টাকায় অধিগ্রহণ

পাসপোর্ট অফিসের দুর্নীতি

মুহাম্মদ সেলিম, খাগড়াছড়ি থেকে ফিরে

খাগড়াছড়ির জেলার আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসের ভূমি অধিগ্রহণে মঞ্চায়ন হয়েছে আরেক ‘পুকুরচুরি’। লাখ টাকার মূল্যের ভূমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে কোটি টাকায়। এতে ভেঙে যায় অত্র এলাকার অধিগ্রহণের অতীতের সব রেকর্ড। মৌজার রেটের ৪৫ গুণ বেশি দামে অধিগ্রহণ করা হয়েছে খাগড়াছড়ি আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসের জন্য ভূমি। পুকুরসহ জায়গাটি ৩ কোটি ৩২ লাখ টাকায় অধিগ্রহণ করার কথা শুনে তাজ্জব বনে গেছেন স্থানীয় লোকজন থেকে শুরু করে প্রশাসনের কর্মকর্তারা। অভিযোগ রয়েছে, বাজারমূল্যের চেয়ে ২ কোটি টাকা বেশি সরকারি কোষাগার থেকে নিয়ে পরে নিজেদের মধ্যে ভাগ-ভাটোয়ারা করেছেন সংশ্লিষ্টরা।

অধিগ্রহণের দাম শুনে অবাক হয়েছেন খাগড়াছড়ির জেলা প্রশাসক প্রতাপ চন্দ্র বিশ্বাস। তিনি বলেন, ‘কোনো ভূমি অধিগ্রহণের আগে একটি কমিটি গঠন করা হয়। ওই কমিটি বাজারদর যাচাই করে ভূমির দর নির্ধারণ করে। এ ভূমি যখন অধিগ্রহণ করা হয় তখন আমি দায়িত্বে ছিলাম না। তাই বিষয়টা নিয়ে বলতে পারব না। টাকা যখন পরিশোধ করা হয়ে গেছে এখন আমার আর কিছু করার নেই।’ এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘ইদানীং দেখা যাচ্ছে ভূমি অধিগ্রহণের আইন অপব্যবহার করে কিছু ব্যক্তি দুর্নীতির আশ্রয় নিচ্ছে। তাই প্রচলিত আইনটি পরিবর্তনের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।’ অনুসন্ধানে জানা যায়, গত বছরের শুরুর দিকে দেশের ১৬টি জেলায় আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস নির্মাণের উদ্যোগ নেয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগ। ওই প্রকল্পের অংশ হিসেবে পার্বত্য জেলা খাগড়াছড়িতেও একটি আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস নির্মাণের প্রক্রিয়া শুরু করে তারা। আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসের জন্য ভূমি নির্বাচনের জন্য সংশ্লিষ্টদের দায়িত্ব দেওয়া হয়। যাদের দায়িত্ব দেওয়া হয় তারা সুভাষ চৌধুরী নামে এক ব্যক্তির সঙ্গে আঁতাত করে সাড়ে ১২ গন্ডা (দশমিক ২৫ একর) ভূমি অধিগ্রহণের প্রস্তাব করে। পরে অবিশ্বাস্য মূল্য দেখিয়ে ওই ভূমির অধিগ্রহণ বাবদ সুভাষকে ৩ কোটি ৩২ লাখ ৭ হাজার ৪১৭ টাকা প্রদান করা হয়। এ বছরের জুন মাসে খাগড়াছড়ি গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ নাহিদ পারভেজ এক চেকের মাধ্যমে ওই টাকা ছাড় দেন। ওই চেক নম্বর-গ-০১৪৩৭১। অভিযোগ রয়েছে, মাত্র ৩০ লাখ টাকার জায়গা অতিরিক্ত ভেলুয়েশন করে প্রায় ২ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে জেলা ভূমি অফিস, পাসপোর্ট অফিস ও জমির মালিক। জমির মালিক সুভাষ চৌধুরী বলেন, ‘জায়গা বেশি দামে অধিগ্রহণ করলেও আমি পেয়েছি তিন ভাগের এক ভাগ টাকা। এর চেয়ে বেশি কিছু বলতে পারব না। যদি এ বিষয়ে আর কোনো প্রশ্ন থাকে, তাহলে যারা অধিগ্রহণ করেছেন তাদের জিজ্ঞাসা করুন। তারাই ভালো বলতে পারবেন।’ খাগড়াছড়ি আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসের উপসহকারী পরিচালক উত্তম কুমার দেবের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি এ বিষয়ে কথা বলতে চাননি। একইভাবে এ বিষয়টা নিয়ে মুখ খুলতে রাজি হননি চট্টগ্রাম বিভাগীয় পাসপোর্ট অফিসের কোনো কর্মকর্তা। খাগড়াছড়ি সদর উপজেলা মৌজা প্রধানের কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, খাগড়াছড়ি সদরের গোলাবাড়ী এলাকার ভূমি তিন শ্রেণিতে বিভক্ত। এখানে বেচা-বিক্রি এবং অধিগ্রহণে মৌজা রেট অনুসরণ করা হয়। এ মৌজার প্রথম শ্রেণি ভূমির মৌজা রেট শতক প্রতি ৩৭ হাজার ১৮৪ টাকা, দ্বিতীয় শ্রেণির শতক ২১ হাজার ৮০৩ টাকা এবং তৃতীয় শ্রেণির ভূমির শতক ২৫ হাজার ৫১৫ টাকা। তবে স্থানীয়দের দাবি, এ মৌজায় সমতলভূমি প্রতি গন্ডা (দ্ইু শতক) সর্বোচ্চ ৩ লাখ টাকা ধরে বিক্রি হয়। পাসপোর্ট অফিসের যে ভূমি অধিগ্রহণ করা হয় তা পুকুরসহ। তাই জায়গার বাজারমূল্য কোনোভাবেই দুই থেকে আড়াই লাখ টাকার বেশি হওয়ার কথা নয়। পাসপোর্ট অফিসে জন্য ভূমি অধিগ্রহণে যে রেট দেখানো হয়েছে তা স্বাভাবিক মৌজা রেটের ৪৫ গুণ বেশি। খাগড়াছড়ির গোলাবাড়ী মৌজার হেডম্যান উক্ষ্য সেন চৌধুরী বলেন, ‘পাসপোর্ট অফিসের ভূমি অধিগ্রহণের টাকার কথা শুনে আমি অবাক হয়েছি। এখানে অধিগ্রহণের নামে কোটি টাকা লুট হয়েছে। যে ভূমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে তার বাজারমূল্য কোনোভাবেই ৩০ লাখ টাকার উপরে হওয়ার কথা নয়।’

সর্বশেষ খবর