মঙ্গলবার, ১৫ অক্টোবর, ২০১৯ ০০:০০ টা
দুই দলে কমছে জোটের কদর

অবমূল্যায়নের অভিযোগে ক্ষুব্ধ শরিকরা

নিজস্ব প্রতিবেদক

নির্বাচন ও সরকার গঠন করার অঙ্গীকার নিয়ে গঠিত ১৪-দলীয় জোট মূল জায়গা থেকে সরে এসেছে বলে মনে করে জোট শরিকরা। তারা আওয়ামী লীগের ‘একলা চল’ নীতিতে ক্ষুব্ধ। মাঝেমধ্যেই এর বহিঃপ্রকাশ দেখা যাচ্ছে শরিক দলের নেতা-কর্মীদের বক্তৃতা-বিবৃতিতে।

শরিক দলের নেতারা বলছেন, যে সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য নিয়ে জোট গঠন করা হয়েছিল সেগুলো এখনো পূরণ হয়নি। ভূমিধস বিজয়ের পর সরকার গঠন থেকে শুরু করে সব কাজেই প্রধান শরিক আওয়ামী লীগ অন্যদের ‘অবহেলা’ ও ‘অবমূল্যায়ন’ করছে। মাঝেমধ্যে যেসব মিটিং হচ্ছে তা নিছক লোক দেখানো। এতে কার্যকর কোনো সিদ্ধান্ত আসছে না।

শরিকদের এমন অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে ১৪-দলীয় জোটের মুখপাত্র মোহাম্মদ নাসিম সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘১৪-দলীয় জোট হচ্ছে আদর্শিক জোট। এ জোট আছে, থাকবে। দিন দিন এ জোটের ভিত্তি আরও মজবুত হচ্ছে। বিভিন্ন ইস্যুতে নিয়মিত মিটিং করা ছাড়াও রাজপথে সক্রিয় আছি। রাজধানীর বাইরেও কর্মসূচি নিয়ে সরব আছি।’ জানা গেছে, গত দুই মেয়াদে জোটের শরিক জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু, ওয়ার্কার্স পার্টি সভাপতি রাশেদ খান মেনন ও জাতীয় পার্টি-জেপি সভাপতি আনোয়ার হোসেন মঞ্জু মন্ত্রিসভার সদস্য ছিলেন। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর মন্ত্রিসভায় আওয়ামী লীগ ছাড়া অন্য কাউকে স্থান দেওয়া হয়নি। একদলীয় মন্ত্রিসভা গঠনের মধ্য দিয়ে দূরত্ব বাড়তে শুরু করে জোট শরিকদের মধ্যে। জোটের শরিক দলের নেতারা আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আনুষ্ঠানিক বৈঠক করার জন্য বার বার তাগাদা দিলেও তা সম্ভব হয়ে ওঠেনি। জোট নেত্রীর সাড়া না পেয়ে তারা সরকারের সমালোচনায় দলীয় কর্মসূচি নিয়ে মাঠে নামছেন। জোটের অন্যতম শরিক জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদ গত ৩১ জুলাই থেকে সুশাসনের দাবিতে জেলা-উপজেলাগুলোয় প্রশাসনের কাছে স্মারকলিপি প্রদান, মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করে আসছে। ওয়ার্কার্স পার্টি বেশকিছু জেলা-উপজেলায় সমাবেশ করেছে। তারা সরকারের বিরুদ্ধেও কড়া বক্তৃতা-বিবৃতি দিয়ে আসছে। এ প্রসঙ্গে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘জাতীয় ইস্যুগুলোয় আমরা সরকারকে নানা পরামর্শ দিচ্ছি। ৩১ জুলাই থেকে দেশব্যাপী সুশাসন নিশ্চিত করতে স্মারকলিপি ও মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করছি।’ তিনি বলেন, ‘জোটে আছি। মাঝেমধ্যেই তো মিটিং করছি। মাঝে আবহাওয়া খারাপ ছিল, এখন জোরদার হবে।’ জানা গেছে, ১৪-দলীয় জোটে যে ১৩টি রাজনৈতিক দল রয়েছে তার মধ্যে জাসদ, ওয়ার্কার্স পার্টি, বাংলাদেশ জাসদ, তরিকত ফেডারেশন ও জেপি থেকে এবার এমপি হয়েছেন। গণতন্ত্রী পার্টি, কমিউনিস্ট কেন্দ্র, ন্যাপ, বাসদ, গণআজাদী লীগ, গণতান্ত্রিক মজদুর পার্টির কাউকে জোটের মনোনয়ন দেওয়া হয়নি। এমনকি তাদের সরকারি গুরুত্বপূর্ণ কোনো প্রতিষ্ঠান, সংস্থায় লাভজনক বা সম্মানসূচক কোনো পদে রাখা হয়নি। এ নিয়েও ক্ষোভ রয়েছে শরিক দলে। জানা গেছে, ২০০৫ সালে ১৪-দলীয় জোট গঠন করা হয়। সে সময় একসঙ্গে নির্বাচন, সরকার গঠনসহ বেশকিছু সুনির্দিষ্ট কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়। জোট গঠনের দীর্ঘ সময়েও বেশকিছু কর্মসূচি এখনো বাস্তবায়ন হয়নি। এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশের জাসদ সভাপতি শরীফ নুরুল আম্বিয়া বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘১৪-দলীয় জোট নিয়ে নতুন করে কোনো লক্ষ্যও ঠিক করা হয়নি। পুরনো কর্মসূচি নিয়েই চলছি। নতুন কিছু নির্ধারণ করা হবে কিনা সে বিষয়ে শরিকদেরও কিছু বলা হয়নি। জোটপ্রধান আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর সঙ্গে আনুষ্ঠানিকভাবে বৈঠক চেয়েছিলাম। তাও পাইনি। বরং আওয়ামী লীগ সভানেত্রী আমাদের নিজের পায়ে দাঁড়াতে বলেছেন।’ জাতীয় পার্টি-জেপি মহাসচিব শেখ শহীদুল ইসলাম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘১৪-দলীয় জোট একটি আদর্শিক জোট। রাজপথে বিরোধী দলের রাজনীতি নেই। সে ক্ষেত্রে আমাদের করণীয় কী? আমরা তো আর অহেতুক সমালোচনা করতে পারি না। সে কারণে মাঝেমধ্যে মিটিং করে থাকি।’ ন্যাপের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক ইসমাইল হোসেন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘রাজনীতিতে উৎসাহ-উদ্দীপনা নেই। কার্যকর বিরোধী দল নেই। আমরা সমসাময়িক ইস্যুতে রাজপথে কথা বলি। মাঝেমধ্যে মিটিং করি। এ ছাড়া কোনো কাজ নেই। জোটের শরিক আওয়ামী লীগ ছাড়া অন্য কেউ সরকারেও নেই। চা-নাশতা খাওয়া ও মিটিং করাই আমাদের কাজ।’

সর্বশেষ খবর