মঙ্গলবার, ১৫ অক্টোবর, ২০১৯ ০০:০০ টা
দুই দলে কমছে জোটের কদর

বিএনপিতে জোট-ফ্রন্ট এই আছে এই নেই

মাহমুদ আজহার

জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নিয়ে ক্রমেই আগ্রহ কমছে বিএনপির। একই অবস্থা ২০-দলীয় জোট নিয়েও। একাদশ জাতীয় নির্বাচনের পর এ দুই জোট-ফ্রন্টের সঙ্গে নামেমাত্র দু-একটি বৈঠক হলেও বিএনপি মূলত ‘একলা চল নীতি’তেই এগোচ্ছে। তৃণমূল নেতা-কর্মীরাও চান, বিএনপি নিজের স্বকীয়তার ওপর ভর করে দাঁড়াক। এরই মধ্যে দলীয় কর্মসূচি নিয়ে মাঠে ব্যস্ত বিএনপি। নেতা-কর্মীরা এতেই স্বচ্ছন্দবোধ করেন। জোট-ফ্রন্ট নিয়ে তেমন আগ্রহ নেই দলটির।

বিএনপির নীতিনির্ধারক পর্যায়ের একাধিক নেতা জানান, এ মুহূর্তে জোট-ফ্রন্টের সঙ্গে বিএনপির সম্পর্ক আরও জোরদার করার কোনো কারণ নেই। জাতীয় নির্বাচন শেষ হয়েছে। এখন বিএনপি দল গোছানো কাজেই ব্যস্ত। বেগম জিয়ার মুক্তি দাবিতে বিএনপি দলগতভাবে কর্মসূচি দিয়ে যাচ্ছে। এভাবে আরও কিছুদিন চলবে। পরে দেখা যাক কী হয়। জানা যায়, জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সভা-সমাবেশে ড. কামাল হোসেন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি দাবি না করায় নাখোশ বিএনপি নেতা-কর্মীরা। এ কারণে ঐক্যফ্রন্টের কোনো কর্মসূচিতে বিএনপির মাঠ পর্যায়ের নেতা-কর্মীর উপস্থিতি কম থাকে। সর্বশেষ গত রবিবার বুয়েটের শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদ হত্যার প্রতিবাদে এক অনুষ্ঠানে ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতা ড. কামাল হোসেন তার দীর্ঘ বক্তৃতায় বেগম জিয়ার মুক্তি নিয়ে কথা বলেননি। এক পর্যায়ে বিএনপির অনেক নেতা-কর্মী বেরিয়ে যেতে শুরু করেন। পরে অবশ্য বক্তৃতার শেষ মুহূর্তে স্লিপ পাঠানো হলে তিনি বেগম জিয়ার মুক্তি দাবি করেন। এ কারণে বিএনপির তৃণমূল নেতা-কর্মীরা ক্ষুব্ধ ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতাদের ওপর। তাই ঐক্যফ্রন্টের কোনো কর্মসূচিতে যোগ দিতে চান না তারা। জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের অন্যতম শীর্ষ নেতা মাহমুদুর রহমান মান্না বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ঐক্যফ্রন্ট নিয়ে বিএনপির আগ্রহ কম, এটা তারা মনে করেন না। তবে বিএনপি এখন দলীয়ভাবে তাদের কর্মকা  চালাচ্ছে। ফ্রন্টের সঙ্গেও কর্মসূচি দিচ্ছে। তবে নির্বাচনের আগে ফ্রন্টের যে গুরুত্ব ছিল, এখন তা কমে এসেছে। সরকারবিরোধী দল হিসেবে তাদের নেতা-কর্মীরাই সবচেয়ে বেশি মামলা, হামলা ও নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। ফ্রন্টগতভাবে কর্মসূচিও সামনে দেওয়া হয়েছে। সূত্রমতে, জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের স্টিয়ারিং কমিটি গঠনের শুরুতে স্থায়ী কমিটির প্রভাবশালী দুই সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন ও ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ অংশ নিতেন। এক পর্যায়ে তারা ফ্রন্টের বৈঠকে যাওয়া বন্ধ করে দেন। পরে যুক্ত করা হয় স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় ও ড. আবদুল মঈন খানকে। তবে একটি বৈঠকেও যাননি গয়েশ্বর চন্দ্র রায়। এরপর নতুন সদস্য যুক্ত করা হয় স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকুকে। তিনিই এখন নিয়মিত যাচ্ছেন। এমনকি দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরও এখন ঐক্যফ্রন্টের বৈঠকে অংশ নেন না। তাই এ বৈঠকের তেমন কোনো গুরুত্ব নেই বিএনপির কাছে। বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘বিএনপি এখন দল গোছানোর কাজে ব্যস্ত। একই সঙ্গে আমাদের নেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি দাবিতেও আমরা মাঠে সরব। বুয়েটের মেধাবী ছাত্র আবরার হত্যাকা  নিয়েও আমরা দলীয়ভাবে দুই দিনের কর্মসূচি পালন করেছি। জোট-ফ্রন্টের সঙ্গে আমাদের দূরত্ব নেই। তাদের সঙ্গে বৈঠকও হচ্ছে, যোগাযোগ আছে। তবে আপাতত আমরা দলীয়ভাবে কর্মসূচি পালন করছি।’ ঐক্যফ্রন্ট জাতীয় কোনো সমস্যা সামনে তুলে ধরতে পারছে না দাবি করে ফ্রন্ট ছেড়েছেন কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ সভাপতি বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী বীরউত্তম। সম্প্রতি এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি দাবি করে বলেন, ‘জাতীয় কোনো সমস্যা ঐক্যফ্রন্ট তুলে ধরতে পারছে না। এ রকম একটি জোট যে আছে তা দেশের মানুষ জানেই না।’ প্রায় একই দাবি নিয়ে ২০-দলীয় জোট ছাড়ে ব্যারিস্টার আন্দালিভ রহমান পার্থের দল বিজেপি। বিএনপি বা ঐক্যফ্রন্টের পক্ষ থেকে তাদের ফেরানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। ২০ দলের আরেক শরিক এলডিপি সভাপতি কর্নেল (অব.) অলি আহমদ বীরবিক্রম সংসদে যোগদানের বিরোধিতা ও খালেদা জিয়ার মুক্তি দাবিতে আন্দোলন হচ্ছে না অভিযোগ তুলে গত ২৭ জুন আলাদা ‘জাতীয় মুক্তিমঞ্চ’-এর ঘোষণা দেন। তার মঞ্চে জোটের শরিক জামায়াত, কল্যাণ পার্টি, জাগপাসহ ছোট কয়েকটি দলও যুক্ত আছে। এ নিয়েও চরম ক্ষুব্ধ বিএনপি। জোটের মধ্যে এ নিয়ে চলছে স্নায়ুযুদ্ধ। এমন পরিস্থিতিতে জোট-ফ্রন্টের সঙ্গে সম্পর্ক জোরদারে আগ্রহ হারাচ্ছে বিএনপি। বিএনপির তৃণমূল নেতা-কর্মীরা জানান, ২০-দলীয় জোট ও ঐক্যফ্রন্ট নিয়ে পথ চলতে গিয়ে বিএনপিই বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। হামলা-মামলাসহ নানা ভোগান্তি বিএনপি নেতা-কর্মীদেরই পোহাতে হচ্ছে। এমনকি সংসদ নির্বাচনের সময় আসনের বড় একটি অংশ জোট-ফ্রন্টের নেতাদের জন্য ছাড় দিতে হয়েছে। জোট-ফ্রন্টের শীর্ষ নেতারা বাইরে থাকলেও বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া প্রায় দুই বছর ধরে কারাবন্দী। বিএনপির যুগ্মমহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির জন্য দলকে শক্তিশালী ও ঐক্যবদ্ধ করার কোনো বিকল্প নেই। সে লক্ষেই বিএনপি ও অঙ্গসংগঠন গোছানোর কাজ চলছে। দল গুছিয়েই আমরা বেগম জিয়ার মুক্তি দাবিতে মাঠে নামব। সেখানে জোট ও ফ্রন্টের সহযোগিতা চাই।’

সর্বশেষ খবর